Home / আন্তর্জাতিক / ইরানে বিধ্বস্ত যাত্রীবাহী বিমানে কি ক্ষেপানাস্ত্র হামলা হয়েছিলো নাকি দুর্ঘটনা!
ইরানের

ইরানে বিধ্বস্ত যাত্রীবাহী বিমানে কি ক্ষেপানাস্ত্র হামলা হয়েছিলো নাকি দুর্ঘটনা!

ইরানে বিধ্বস্ত যাত্রীবাহী বিমানে কি ক্ষেপানাস্ত্র হামলা হয়েছিলো নাকি দুর্ঘটনা এ নিয়ে চলছে বিশ্ব গণমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে বিবিসির প্রতিবেদনে বলছে ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে গত বুধবার ইউক্রেন এয়ারলাইন্সের বিমানটি ভুলবশত ইরানের ক্ষেপানাস্ত্রের আঘাকে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে মনে করছেন পশ্চিমা নেতারা। তথ্যপ্রমাণ সেটাই নির্দেশ করছে বলে উল্লেখ করেছেন তারা।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তিনি বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্র থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে যাত্রীবাহী বিমানটি মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে বিষয়টি অনিচ্ছাকৃতভাবে হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার মতে, কানাডার মানুষের মনে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এবং তাদের উত্তর জানা দরকার।

তবে এ বিষয়টি নিয়ে কাউকে দোষারোপের সময় এখনো আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। জনসন বলেছেন, ঘটনাটি নিয়ে কানাডার সঙ্গে ব্রিটেন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

এদিকে ইরান বলছে, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির ব্ল্যাকবক্স যুক্তরাষ্ট্র কিংবা বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িংয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে না। যদিও ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্তে যোগ দেবার জন্য ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বোয়িংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

বিমান চলাচলের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, তদন্তে নেতৃত্ব দেবার অধিকার রয়েছে ইরানের। তবে বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা সাধারণত তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত থাকে।

বিধ্বস্ত বিমানটিতে ১৭৬ জন আরোহী ছিলেন। ইউক্রেনের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি তেহরানের ইমাম খামেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মাত্র তিন মিনিট পরেই বিধ্বস্ত হয়।

বিমানটিতে থাকা অধিকাংশ আরোহীই ইরানি এবং ইরানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ৮২ জন ইরানি, ৬৩ জন কানাডীয়, ১০ জন সুইডেনের, চারজন আফগানিস্তানের, তিনজন জার্মানির এবং তিনজন ব্রিটেনের নাগরিক। অপরদিকে নয় ক্রুসহ ১১ জন ইউক্রেনের নাগরিক নিহত হয়েছেন।

কানাডা এবং ব্রিটেনের নেতারা এই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পরিপূর্ণ তদন্ত দাবি করেছেন। তবে বিমানটিতে মিসাইল আঘাত করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইরান।

ইউক্রেনের এই বিমানটি এমন এক সময়ে বিধ্বস্ত হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা চলছে। গত সপ্তাহে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে গত বুধবার ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর কয়েক ঘন্টা পরেই ইউক্রেনের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। যদিও এই দু’টি ঘটনাকে এখনই সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের মিসাইল হামলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হবার খবর আসে।

মার্কিন গণমাধ্যমের ধারণা, যাত্রীবাহী বিমানটিকে ইরান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বিমান ভেবে ভুল করতে পারে। কারণ যে সময়টিতে যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তার কিছুক্ষণ আগেই ইরান মিসাইল হামলা চালিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে সম্ভাব্য হামলার আশংকা করেছিল ইরান। ভুলবশত ওই বিমানটিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়ে থাকতে পারে।

মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বলছে, সে সময় স্যাটেলাইটে দুটি মিসাইলের সংকেত পাওয়া গেছে। এরপরই বিস্ফোরণের আরেকটি সংকেত পাওয়া যায়। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেছেন, বিমানটিতে আসলে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে তার সন্দেহ রয়েছে।

কানাডায় সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, ইরান ভ্রমণ না করার জন্য ব্রিটিশ নাগরিকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাকের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউইক বলছে, মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরানের বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা তখন হয়তো কার্যকর ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে পেন্টাগন এখনো আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করেনি।

বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী ওলেক্সি ড্যানিলভ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বিমানটি বিধ্বস্ত হবার তিনটি কারণ কারণ থাকতে পারে। ড্রোন কিংবা অন্য কোন উড়ন্ত বস্তুর সাথে মাঝ আকাশে সংঘর্ষ, কারিগরি ত্রুটির কারণে ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ অথবা সন্ত্রাসী হামলার অংশ হিসেবে বিমানের ভেতরে কোন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়ে থাকতে পারে।

ইরানের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার প্রধান আলী আবেদ জাদেহ বলেছেন, বিমানটি যখন বিমানবন্দর এলাকা ছেড়ে যাচ্ছিল তখন সেটি পশ্চিমমুখী ছিল। একটি সমস্যার কারণে সেটি ডান দিকে মোড় নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে পুনরায় ফিরে আসছিল। তখনই এটি বিধ্বস্ত হয়।

তিনি বলেন, বিমানটি  ইরানে বিধ্বস্ত হবার আগে আগুন জ্বলতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ইমাম খামেনি বিমান বিমানবন্দরে ফিরে আসার আগে বিমানের পাইলট সাহায্য চেয়ে কোন বার্তা পাঠাননি। বিমানটিতে মিসাইল আঘাতের বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব, এ ধরণের গুজব অযৌক্তিক। ইরান সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, বিমান বিধ্বস্ত হবার জন্য ইরানকে দায়ী করা একটি ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’।