চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ১১নং ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সলিমুল্লাহ লাভলু (৫০) ১ নভেম্বর গত রাতে নির্মমভাবে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে।
২ নভেম্বর বুধবার সকালে মতলব উত্তর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল রাস্তার পাশে লাভলুর কাঠ বাগান থেকে উদ্ধার করে। নিহত লাভলু মান্দারতলী গ্রাে মর আমির হোসেন মাস্টারের ছেলে। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন। তিনি ১১নং পশ্চিম ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা।
পারিবারিক ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেলো, ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের বিএনপি সাধারণ সম্পাদক।
বুধবার (২ নভেম্বর) সকাল ভোরে ভ্যান চালক জাহাঙ্গীর আলম মান্দারতলী গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হেরিংবোন্ড রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় লাশ দেখে ডাক চিৎকার দেন। এরপর স্থানীয়রা এসে পুলিশে খবর দেন।
মতলব উত্তর থানার ওসি মোঃ মহিউদ্দিন জানান, লাশ দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। পরে এসে সুরুতাহাল রিপোর্ট তৈরি ও মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির গায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
মৃত্যুর পর নিহতের স্ত্রী শাহজাদী আক্তার নিন্নিসহ আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এমন নির্মম মৃত্যুর কারণে নিহতের মেয়ে তার একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া লুবনা আক্তার ও ৯ম শ্রেণীর ছাত্র লাবিব এতিম হয়ে গেল।
এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানায় নিহতের পরিবার। একমাত্র উপার্জন করা স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী এখন বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
এদিকে নিহতের ছেলে লাবিব জানায়, ঘটনার আগের দিন মঙ্গলবার বিকালে স্কুল ছুটি হওয়ার পরে ওই গ্রামের ছানাউল্লাহর ছেলে রাকিব ও শিপন তার পায়ে মোটরসাইকেল তুলে দেয়। এ নিয়ে তার সাথে তর্ক হয়। পরে লাভলু বিষয়টি জানার পর রাকিব ও শিপনকে জিজ্ঞেস করলে বেশ তর্ক বিতর্ক হয়। পরে শিপন (২১) ও তার দুই বন্ধু রাকিব (২২), তুহিন (২০) লাভলুর বাড়িতে এসে আজকেই খেলা দেখাবে বলে হুমকি দেয়। তাই এই ঘটনায় হুমকিদাতাদের সন্দেহ করেন নিহতের পরিবারবর্গ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, তার স’মিলে মিস্ত্রি না থাকায় গত কয়েকদিন ধরে তার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানে রাত্রিযাপন করেছেন। গতরাতে তিনি বাড়ি থেকে মান্দারতলি বাজারের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পর এ ঘটনার সূত্রপাত। তিনি স’মিলে ওখানে ঘুমিয়েছেন বলে ধারনা ছিল স্ত্রী সন্তানের। কিন্তু ভোর হতেই খবর পাওয়া গেল মৃত্যু সংবাদ।
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিনউদ্দিন বলেন, বিএনপি নেতার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে। নিহত ব্যক্তির গায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও দায়ীদের আটকে পুলিশ মাঠে নেমেছে। এখনো হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি।
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও পিবিআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসেছেন। তদন্ত চলছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। পারিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার পরে খবর পেয়ে, সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ, ওসি মোঃ মহিউদ্দিন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সানোয়ার হোসেন ও সিআইডি, পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে উপজেলার ১১নং ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সলিমুল্লাহ লাভলুকে রদুর্বৃত্তরা হত্যা করে ফেলে রেখেছে এ সংবাদ পাওয়ার পর শত শত নারী পুরুষ ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে।
স্থানীয়দের দাবি, নিহত সলিমুল্লাহ একজন ভালো মানুষ ছিলেন। সবার সঙ্গেই তার ভালো সম্পর্ক। রাজনৈতিক নাকি ব্যক্তিগত কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা কেউ বলতে পারেননি। তবে অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিযয়েছেন এলাকাবাসী। দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী জানান।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ২ নভেম্বর ২০২২