Home / ফিচার / বাণিজ্য মেলা যেখানে মুখের কথায় ধর্ষণ করা হয় !
বাণিজ্য মেলা যেখানে মুখের কথায় ধর্ষণ করা হয় !

বাণিজ্য মেলা যেখানে মুখের কথায় ধর্ষণ করা হয় !

আমি ভিড় ভাট্টা তেমন পছন্দ করি না। আমি মেয়ে বলে ধাক্কাধাক্কির কারণে যে ভিড় পছন্দ করি না, ব্যাপারটা তেমন না। আমার এমনি ভিড়, অধিক মানুষ, ধাক্কাধাক্কি ভালো লাগে না। যতটা পারি নিজেকে ভিড় থেকে দূরে সরিয়ে রাখি। শুধুমাত্র এই কারণে আমি যতদূর সম্ভব হয় মেলা, বিভিন্ন অকেশন এড়িয়ে চলি। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে সব ধরণের আনন্দ উৎসব আমি এড়িয়ে যাই।

যেহেতু চাকরি করি তাই কাজের খাতিরে কিছু কিছু জায়গায় যেতে হয়। তো এবার আমার হাতে একটা প্রোজেক্ট এলো। বাণিজ্য মেলায় ঘোরাঘুরি করে মেলা নিয়ে, নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে কিছু আর্টিকেল লেখা। যেহেতু মেলার বিভিন্ন বিষয় বস্তু নিয়ে লিখতে হবে তাই আমাকে বাণিজ্য মেলায় স্বশরীরেই উপস্থিত হতে হবে। বাণিজ্য মেলা অনেকের জন্য প্রাণের মেলা, আনন্দের মেলা কিন্তু আমরা কাছে অকারণে ধাক্কাধাক্কির মেলা। আমার এই জীবনে আমি মাত্র ২বার বাণিজ্য মেলায় গিয়েছি।

প্রোজেক্টের কাজের জন্য মেলায় আমার ৩বার যাওয়া হলো। বৃহস্পতিবার দিনটি আমি বেছে নিলাম মেলার জন্য। আমার সাথে আরো ৩জন ছিলো দুইজন মেয়ে আর একজন ছেলে । মোট আমরা ৪জন ৩জন মেয়ে আর একজন ছেলে মেলায় গেলাম আমাদের প্রোজেক্টের কাজে। আমি বাকি ৩জনকে তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে নিজে নিজের কাজে লেগে গেলাম। বলে রাখা ভালো আমরা সকাল আর দুপুরের মাঝখানে মেলায় গিয়েছি। কারণ এই সময়টাতে ভিড় মোটামোটি কম থাকে। তাই নিজেদেরও ঘুরাঘুরি করতে অনেক সুবিধা হয়, আবার বিভিন্ন দোকানের কর্মীদের সাথেও কথা বলতে অনেকটা সুবিধা হয়।

আমরা একটা ইলেক্ট্রিকের শো রুমে ঢুকলাম। সবাই নিজেরা নিজেদের মতো দেখছি। আরো অনেকেই আমাদের মতো ঘুরেঘুরে এটা সেটা দেখছে। সুন্দর পোশাকে সুন্দর সাজে কিছু মেয়ে আর কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তারা এই বাণিজ্য মেলায় সেলসকর্মী হিসেবে কাজ করে। বছরের এই সময়টাতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী , অনেক অলস মানুষ, অনেক বেকার মানুষ কাজ পেয়ে থাকে। এই সময়টাতে তারা নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে কিছু টাকা আয় করে নেয়। এই সময়টা অনেকের কাছে অনেকটা সোনার হরিণের মতো তাই অনেকেই এই সময়টার সুন্দর ব্যবহার করে থাকেন। ৫-৬জন ছেলেদের একটা গ্রুপ আনন্দ করতে করতে ইলেক্ট্রিকের এই শো রুমে ঢুকলো। কেউ মাঝে কেউ কিছু একটা বলছে আর অন্যরা হাহাহাহাহাহা করে হেসে উঠছে। সেই গ্রুপের একটা ছেলে বড় একটা ফ্রিজের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো সেই ফ্রিজের দাম কত ? একজন মেয়ে সেলসকর্মী এগিয়ে এসে সুন্দর করে হেসে বললো, “২৬০০০ টাকা স্যার” । দাম জিজ্ঞাসাকারী এবার বললেন, ” খুলে ভিতরটা দেখান তো ” । এই কথা শুনে সেই গ্রুপের সবাই হাহাহাহাহা করে আবার হেসে উঠলো। সেই মেয়েটা চুপচাপ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। গ্রুপটা আমাদের চোখের সামনেই হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলো।

আমরাও বের হয়ে গেলাম সেই দোকান থেকে। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে আমাদের এক সহকর্মীর পায়ে ব্যথা হয়ে গেলো , এদিকে আমাদের ক্ষুধাও পেলো। সামনে একটা দোকান দেখে আমরা ঢুকলাম। না বিরিয়ানি খেতে নয়, ইস্পাইচি চিকেন খেতে ঢুকলাম। সেই দোকানের পাশেই লিকুইড কোন এক ব্রান্ডের দুধ বিক্রি হচ্ছিলো। চা কফির মতো কাপে করেও তারা দুধ বিক্রি করছিলো। আমরা যেখানে চিকেন খেতে ঢুকলাম সেখানে বসার জায়গা নেই, তাই কিনে খেতে হবে। আমাদের ছেলে কলিগকে চিকেন কিনতে দিয়ে আমরা সেই দুধের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দুই বন্ধু দুই কাপ দুধ নিলো সেই কোন এক ব্রান্ডের দুধের দোকান থেকে। এক বন্ধু এক চুমুক মুখে দিয়ে বললো, “ম্যাম আপনার দুধটা কেমন পানসে লাগছে। মুখে দিয়ে মজা পেলাম না। ” বলেই হাসতে হাসতে দুই বন্ধু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে গেলো। মেয়েটা সেই দুই বন্ধুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। পিছন থেকে সেই দোকানের এক ছেলে কলিগ এসে বললো, “মিতা (ছদ্ধনাম) এইদিকে দেখো তো ওরা কি চায় ! তোমার একটা দুধের প্যাকেট এইদিকে দাও তো। ” কথাটা বলেই ছেলেটা মুচকি হাসলো। কাজের কথা একরকম, ওরা সেই কথাগুলোকে মিলিয়ে মিশিয়ে নিজেদের মনের মতো করে একটু রসালো করে নেয়।

গেলাম জুতার দোকানে, এক ছেলে তার গার্লফ্রেন্ডকে জুতা কিনে দিবে। ছেলে কিছু জুতা দেখে পছন্দ করে হাতে নিলো। একজন সেলসগার্ল সামনে এসে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলো কোনো সাহায্য লাগবে কিনা ! ছেলেটি বললো তার হাতের জুতাগুলো পছন্দ হয়েছে কিন্তু এই সাইজের জুতা ছোট হবে। আরেকটু বড় সাইজ লাগবে। মেয়েটা জানতে চাইলো কত সাইজ দিবে। ছেলেটা বললো, “আপনার সাইজ কত ?সেই সাইজের হলেই হবে। ” মেয়েটা তখন বললো, “এক্সকিউজ মি স্যার !” তখন ছেলেটা বলে, “আপনার সাইজ আর আমার গার্ল ফ্রেন্ডয়ের সাইজ একই!” না ছেলেটা কোনো জুতা কিনে নাই। মেয়েটা অন্য এক কাষ্টমারের সাথে কথা বলতেই সেই টুপ করে সেই দোকান থেকে বের হয়ে গেছিলো।

কিছু কিছু মানুষ মেলায় কিনতে যায় না। মজা নিতে যায়, ফ্রীতে মজা নিতে যায়। মুখের কথায় এক একটা মেয়েকে ধর্ষণ করতে যায়। কি মজা পায় তারা এই কাজ করে, সেটা তারাই জানে। তারা শুধু জানলো না এই একটা কথা ওই মেয়েগুলোকে কেমন একটা ট্রমার মধ্যে ফেলে দেয়। সে জানলো না কত রাত তার সেই নোংরা ইঙ্গিত সেই মেয়েটাকে ঘুমাতে দেয় নি। সে জানলো না তার একটা নোংরা ইঙ্গিতের জন্য সেই মেয়েটা দুনিয়ার অন্য সব ছেলেকেও ঘৃণা করে, তার প্রতিটা ছেলে কাষ্টমারকে তার নোংরা মনে হয়। আপনার একটু নোংরা মজার জন্য কারো জীবন, কারো সম্মান, কারো স্বপ্ন, কারো পেশা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র একটু নোংরা মজার জন্য।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০: ৩০ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮,শনিবার
এএস