Home / জাতীয় / বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলবে
ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার একমাত্র চাওয়া বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে, শান্তিতে ঘুমাবে, তিন বেলা পেট ভরে খেতে পারবে। জাতির পিতার জন্মদিনে আমাদের জন্য একটি সুখবর আছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আজ স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন থেকে বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলবে।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন উপলক্ষে গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষ কখনো শোষিত-বঞ্চিত হবে না। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জীবনের বেশির ভাগ সময় তাঁকে জেলে কাটাতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অভাবী ও দুঃখী মানুষের বন্ধু।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, মাত্র সাড়ে তিন বছর পর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমরা দুই বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। বিদেশের মাটিতে ছয়টি বছর আমাদের শরণার্থী জীবন কাটাতে হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় এসে দেশ গড়ার কাজ শুরু করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা জয়ী হতে না পারায় দেশ আবার পিছিয়ে যায়। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আজ জাতিসংঘের প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। সারা বিশ্বের আড়াই হাজার বিখ্যাত ব্যক্তির ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’

অভিভাবক, শিক্ষাগুরু ও ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। তারাই দেশকে এগিয়ে নেবে। তাই আমি চাই একটি শিশুও পথশিশু থাকবে না। তারা কোথায় যায়, কী করে এসব বিষয়ে খবর রাখতে হবে। যাতে শিশুরা কোনো খারাপ কাজে জড়িয়ে বিপথগামী না হয়। শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে বাংলাদেশ ও জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে চিত্রাঙ্কন, ৭ই মার্চের ভাষণ, গল্প বলা, রচনা প্রতিযোগিতা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা। পরে দর্শক সারিতে বসে তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। দুপুর ১টায় প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে বইমেলার উদ্বোধন ও শিশুদের আঁকা ‘আমার ভাবনায় ৭ই মার্চ’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।

এর আগে শিশু সমাবেশ মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ রাসেল স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্তকরণ, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ শিশুগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ার দুজন দরিদ্র নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ছবি : পিআইডি

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গতকাল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁদের গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরে ফাতেহা পাঠ এবং বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি সমাধির সামনে রাখা মন্তব্য বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

সকাল ১০টা ২২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দলীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এসব অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, উম্মে রাজিয়া কাজল এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম আক্কাস আলী, জেলা যুবলীগ সভাপতি শাহাবুদ্দিন আযম, সাধারণ সম্পাদক এম বি সাইফসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে এবং রাষ্ট্রপতি সকাল ১০টা ৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে পৌঁছেন। সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতি এবং বিকেলে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:৩৫ এ.এম ১৮মার্চ,২০১৮রোববার
এ.এস