বাংলাদেশে মোবাইলে সর্বনিম্ন কলরেট বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হবেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি মোবাইল নম্বর থেকে দেশের যে কোনো মোবাইলে ফোন করতে সর্বনিম্ন কলরেট হবে ৪৫ পয়সা।
এতদিন একই অপারেটরে ফোন করলে, অর্থাৎ গ্রামীণ থেকে গ্রামীণ বা রবি থেকে রবিতে ফোন করলে সর্বনিম্ন কলরেট ছিল ২৫ পয়সা, আর এক অপারেটর থেকে অন্য যে কোনো অপারেটরে ফোন করলে কাটা হতো সর্বনিম্ন ৬৫ পয়সা।
সর্বনিম্ন কলরেটের নিম্নমাত্রা ২৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৪৫ পয়সা হওয়ায় সাধারণ মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও, অধিকাংশই বলছিলেন সর্বনিম্ন কলরেট বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তারা।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কী?
চট্টগ্রামের বাসিন্দা তানজিলা ইসলাম বলেন, “আপনজনদের সাথে এখন দূরত্ব তৈরী হবে। আগে এফএনএফ (ফ্যামিলি এন্ড ফ্রেন্ডস) থাকায় পরিবারের সদস্যদের সাথে নির্দিষ্ট খরচে অনেকক্ষণ কথা বলতে পারতাম, এখন সেটা কমে যাবে।”
মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা কম খরচে সহজলভ্য হওয়াতে কি যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পাবেন গ্রাহকরা?
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাতিমা তানজিম জানান মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও তার বাবা-মা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অতটা পরিণত না হওয়ায় কলরেট বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তিনি।
তবে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা মহুয়া সাইয়েদার মতে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ভিন্ন অপারেটরে কলরেট কমে যাওয়ায় পেশাগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হবে।
কী কারণে কলরেট বৃদ্ধি?
বাংলাদেশ টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মতে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন বাজারের সিংহভাগ শেয়ার একটি মোবাইল কোম্পানির দখলে থাকায় ভিন্ন কলরেটের কারণে এতদিন সুবিধা পেয়ে আসছিল তারা।
নতুন আইন অনুযায়ী, বাজারের শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক।
মি. হক বলেন, “যারা একটু দুর্বল অপারেটর তারা এবার একটু শক্তিশালী হতে পারবে।”
সরকারের এই নির্দেশনার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করেন মোবাইল ফোন সেবাদানকারী সংস্থা রবি’র কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান শাহেদ আলম।
মি. আলম বলেন, “অন-নেট আর অফ-নেট ব্যবস্থায় আলাদা কলরেট থাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে বিভিন্ন অপারেটরের কয়েকটা সিম থাকতো। এখন কলরেট এক হয়ে যাওয়ায় সেই সমস্যা আর থাকবে না।”
সর্বনিম্ন কলরেট বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কথা বলার খরচ বাড়বে।তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হকের মতে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম আয়ের মানুষের।
সায়মা হক বলেন, “বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের এমন অনেক মানুষই আছেন যারা কলরেট সামান্য বেড়ে যাওয়াতেও প্রভাবিত হন। এই নতুন আইন বাস্তবায়নের ফলে তাদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।”
তবে অন্যান্যদের মত তিনি মনে করেন এই সিদ্ধান্তের ফলে মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বাজার প্রতিযোগিতামূলক হবে।
“কোনো বিশেষ কোম্পানি যেন বাজারে তাদের প্রভাব খাটিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।”
বিটিআরসি ও মোবাইল কোম্পানিগুলোর বক্তব্য অনুযায়ী, বিশ্বের সব দেশেই মোবাইল ফোনে সর্বনিম্ন কলরেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করা হয়।
বিবিসি