বাংলাদেশে প্রেমের টানে ব্রাজিলীয় রাজকন্যা

আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে’। হ্যাঁ কেউ যদি প্রেমে পড়ে তাহলে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ঠিকই সাত সমুদ্র পাড়ি দিতে পারে। তারই জলন্ত প্রমাণ ব্রাজিলীয় স্বপ্নকন্যা লুডমিলা। বাংলাদেশী রাজপুত্রের প্রেমের টানেই সুদূর ব্রাজিল থেকে উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রাম ঘরঘরিয়ায় চলে এসেছেন তিনি।

দু’বছর আগে ফেসবুকে যোগাযোগ হয়েছিল দুই তরুণ -তরুণীর। শেষ পর্যন্ত প্রায় পনেরো হাজার কিলোমিটার পথ উজিয়ে সটান আলিপুরদুয়ারের ঘরঘরিয়ার মতো প্রত্যন্ত গ্রামে হাজির হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তরুণী লুডমিলা। তার মনের মানুষ ওই গ্রামেরই যুবক সজল রায়।

কৃষক পরিবারের ছেলে সজল বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এডুকেশন নিয়ে এমএ পড়ছেন ৷ দু’জনের আর্থিক অবস্থার কোনও মিল না থাকলেও লুডোর পরিবারও কৃষিজীবী।

বেশ কিছু দিন ধরেই সজলকে লুডো বারবার করে অনুরোধ করছিলেন দুনিয়ার দুই প্রান্তে থেকে কোনো ভাবেই আর দিন কাটছে না তার।

১৯ মার্চ সজলকে ফোন করেন লুডো জানান, ২২ মার্চের মধ্যে আলিপুরদুয়ারের ঘরঘরিয়ায় আসছেন তিনি। প্রথমে বিষয়টি স্বপ্নের মতো মনে হলেও ২২ মার্চ সকালে মুম্বাইয়ের সান্তাক্রুজ বিমানবন্দর থেকে ফের সজলকে ফোন করে লুডমিলা বলেন , তিনি ইতিমধ্যেই ভারতে এসে গেছেন।

এ কথা শুনেই বিষয়টি পরিবারের সবাইকে জানিয়ে বাগডোগরার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ লুডোর বিমান বাগডোগরায় অবতরণ করে। এই প্রথম লুডো আর সজল নিজেদের চোখের সামনে দেখবেন। সমস্ত বাধা কাটিয়ে বেশ খানিক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তারা।

সজলের কথায় , ‘মানুষের স্বপ্ন যে এভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে তা কল্পনা করিনি৷ পাঁচ মিনিট আমরা কোনো কথা বলতে পারিনি৷ ‘ লুডোর পরিষ্কার কথা , ‘আমি সজলকে চিনি৷ আর কিছুই চাই না , তাই এতদূরে অচেনা জায়গায় ছুটে এসেছি৷ সংসার করতে চাই।’

গ্রামে বিদেশিনীর আসার খবর রটে যেতেই মানুষের মেলা লেগে গেছে সজলের বাড়িতে। সবাইকে সামলাতে আর মিষ্টিমুখ করাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা সজলের পরিবারের। শুধুমাত্র আশপাশের গ্রামগুলি থেকেই নয়, আলিপুরদুয়ার শহর থেকেও উত্সুক মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেছেন।

ভাঙা ইংরেজি আর পর্তুগিজ ভাষায় নিজের মনের ভাব অনেক কষ্টে প্রকাশ করেছেন ব্রাজিলের ওই তরুণী। কিছু বোঝাতে না পারলেই চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল৷ সঙ্গে সব সময়ের জন্য থাকছে প্যাড আর কলম। ইংরেজিতে সব কিছু লিখতে পারলেও বলার ক্ষেত্রে ততটা সড়গড় নন লুডো। গ্রামে তার একমাত্র ভরসা সজল।সজলের পরিবার লুডোকে আলিপুরদুয়ারের কোনও ভালো হোটেলে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিল।

কিন্তু লুডো জানিয়েছেন , ‘সজলের ভালোবাসার টানে যখন একবার সব ছেড়ে চলে এসেছি , তখন হোটেল থাকতে যাব কেন ? এই পরিবার, এখানকার আকাশ বাতাসকে একান্তই আপন করে নিতে চাই।’

সজল জানিয়েছেন , ‘আমাকে এত বিশ্বাস করে যে সব ছেড়ে চলে আসতে পেরেছে তাকে তো যোগ্য মর্যাদা দিতেই হবে৷ খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিয়েটা সেরে ফেলতে চাই৷ ‘

আর লুডো অকপটে সকলকে বলছেন , ‘পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরছি৷ অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। কিন্ত্ত সজলের মতো নির্মল মনের মানুষ কোথাও খুঁজে পাইনি৷ আমাদের পরিবারের তরফেও কোনও আপত্তি নেই৷ গ্রামটার উন্নতি করতে চাই।

ভবিষ্যতে এখানকার শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে কাজ করতে চাই। আর এলাকার কৃষকরা যাতে প্রযুক্তি নির্ভর চাষ আবাদ করতে পারেন , সেই দিকটায় বিশেষ ভাবে নজর দেব।’

সজলের মা প্রমীলা থেকে শুরু করে বাবা খুলেন রায় অথবা ওই গ্রামের বাসিন্দারা মনে প্রাণে মেনে নিয়েছেন এই বিদেশিনি বৌমাকে।

প্রমীলা জানিয়েছেন , ‘এটা অনেকটা আমাদের কাছে রূপকথার গল্পের মতো। স্বচ্ছল পরিবারের একটি মেয়ে কত আশা নিয়ে আমাদের কাছে ছুটে এসেছে কোনো ভাবেই তার অমর্যাদা হতে দেব না। আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ সবাই মিলেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

||আপডেট: ০৮:৩৬  অপরাহ্ন, ০৭ এপ্রিল ২০১৬, বৃহস্পতিবার

চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর

Share