জাতীয়

আরো দুজনসহ বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১০

বাংলাদেশে আরো দুজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০জন। নতুন আক্রান্ত দুজনের একজন আগে থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। অপরজন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এদের মধ্যে একজন বিদেশ থেকে এসেছেন, আরেকজন বিদেশ ফেরত একজন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাদের সবাই বিদেশ ফেরত অথবা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন বলে বলছে আইইডিসিআর।

নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত স্থানীয় বা সামাজিক সংক্রমণের ঘটনা পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৪৩জন আর ১৬জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। মীরজাদী সেব্রিনা বলছেন, ”আমরা আবারো বলছি, পারিবারিকভাবে খুব শক্তভাবে আমাদের কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে। কারণ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আমরা সংক্রমণ দেখতে পাচ্ছি।”

এখন পর্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে তিন জন সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন। নমুনা দিতে বা করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নিয়ে সেবা পেতে কাউকে আইইডিসিআর এর কার্যালয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

এর পরিবর্তে হটলাইনে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রয়োজন মনে হলে আইইডিসিআরের সদস্যরাই গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করবেন বলে জানান তিনি।

এ পর্যন্ত ১৫১টি দেশে কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে। এই মুহূর্তে অফিস, পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠান এই মুহূর্তে বন্ধ রাখা ভালো। বিশেষ করে যেসব অনুষ্ঠানে বিদেশ থেকে আসা আত্মীয়স্বজন আসতে পারেন, এমন ধরণের অনুষ্ঠান এখনি না করাই ভালো।

গার্মেন্ট কারখানায় অসুস্থদের সবেতন ছুটি দেয়ার পরামর্শ তৈরি পোশাক কারখানার মতো যেসব প্রতিষ্ঠানে অনেকে কাছাকাছি বসেন, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মীরজাদী সেব্রিনা।

”অফিসে আসার সময়, কারখানায় প্রবেশ করার সময় পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত যে, কারো মধ্যে এ ধরণের লক্ষণ উপসর্গ অর্থাৎ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রয়েছে কিনা। সেক্ষেত্রে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া যেতে পারে, যতদিন তারা সুস্থ না হন।”

”এক্ষেত্রে আমরা মালিকদের অনুরোধ করবো, তাদের যেন সবেতন ছুটি দেয়া হয়। যাতে তারা এতে অংশগ্রহণ করেন। না হলে তারা তাদের হয়তো শারীরিক অসুস্থতার তথ্য গোপন করতে পারেন। তাই সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”

”এই মুহূর্তে বিদেশি ক্রেতারা এলেও যেভাবে অনেক কর্মী থাকেন, সেখানে যেন তারা ভ্রমণ না করেন।”

হটলাইনে যোগাযোগের পরামর্শ
আইইডিসআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, কারো জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই করোনা আক্রান্ত বলে মনে করার কারণ নেই। বিদেশ ফেরত হলে, বা এরকম কারো সংস্পর্শে এলে এবং লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালে যাওয়ার বা আইইডিসিআরে আসার কোন দরকার নেই। বরং হটলাইনে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেয়া যাবে। প্রয়োজনে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে আসবে।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হটলাইনে ৪২০৫টি টেলিফোন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত টেলিফোনের সংখ্যা ৪১৬৪টি।

অনেকেই নমুনা পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন?
করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলো থেকে গত সাতদিনে প্রায় ১ লাখ মানুষ বাংলাদেশে ফিরেছেন, কিন্তু তার মধ্যে কেউ সংক্রমণ নিয়ে দেশে ঢুকছেন কিনা, – তা জানার ব্যবস্থা কতটা সঠিকভাবে কাজ করছে?

সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, যে পরিমাণ বাংলাদেশি বিদেশ থেকে ফিরছেন – তার মধ্যে অতি নগণ্যসংখ্যককে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলে অনেকেই পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে কিনা – বিশেষজ্ঞরা সেই প্রশ্ন তুলছেন।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা মানুষ এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের মধ্যেই নমুনা পরীক্ষা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয় এ বছর ২১শে জানুয়ারি, এবং তখন থেকে এপর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি লোক বাংলাদেশে এসেছেন। বিদেশ থেকে আসা এই বিশাল সংখ্যক মানুষের মাঝেই মাত্র ২৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, উপসর্গ দেখা দেয়ার পরই পরীক্ষা করা হয় এবং সেজন্য সংখ্যাটা কম দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে এতে একটা ঝুঁকি দেখছেন। তারা মনে করছেন, ১৬ কোটির বেশি মানুষের এই দেশে এখন ভিতরেই সংক্রমণ হচ্ছে কিনা-সেটাও জানা জরুরি হয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাসের টিকার পরীক্ষা শুরু
করোনাভাইরাসের একটি টিকা তৈরি হয়েছে এবং তা সোমবারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের দেহে পরীক্ষা করা শুরু হবে। বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে কাইজার পারমানেন্টে গবেষণাকেন্দ্রে ৪৫ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর দেহে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে।

এই টিকার উপাদান হলো, কোভিড-নাইনটিন ভাইরাসের একটি জেনেটিক কোড – যা আসল ভাইরাসটি থেকেই নকল করে তৈরি করা হয়েছে। এই কপিটি বিপদজনক নয়, এবং এটা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতেও পারে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাকসিনটি, বা এরকম যে আরো কয়েকটি টিকা এখন গবেষণার পর্যায়ে আছে – তাতে আদৌ কোন কাজ হবে কিনা তা জানতে আরো অনেক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। আরো পড়ুন- তাপমাত্রা বাড়ার সাথে করোনা ভাইরাসের সম্পর্ক নেই : আইইডিসিআর

Share