Home / জাতীয় / বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ১৪৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ১৪৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার আগের তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটি প্রকাশ করা হয়েছে চলতি আগস্ট মাসে।

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলায় ১৭ বিদেশি নিহত হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা ইস্যুতে তৈরি পোশাক খাতের ক্রেতারা বাংলাদেশে আসছেন না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা অধিক সাবধানতা অবলম্বন করছেন। এর প্রভাবে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি আরও কমে যেতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গুলশান হামলার পর আমরা ব্যবসায়ীরা অনেকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। নিরাপত্তা ইস্যুতে তৈরি পোশাক খাতের ক্রেতারাও বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে অপারগতা দেখাতো। তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটা ভালো মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপে আমরা এখন আস্থা ফিরে পেয়েছি। একইভাবে আমরা আশা করছি, ক্রেতারাও বাংলাদেশে আসা শুরু করবে। তিনি মনে করেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি কমলেও বছর শেষে হয়তো দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি আবার বাড়ছে।

অবশ্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) সম্প্রতি যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ হলেও চার মাস শেষে (জানুয়ারি-এপ্রিল) সেটি কমে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সারা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র কম দামে পাওয়া যায় বাংলাদেশের পোশাক। কাজেই এখন সাময়িক কম রফতানি হলেও কিছুদিন পর তারাই আবার এই পোশাক নেওয়া বাড়িয়ে দেবে। তিনি বলেন, এর আগেও আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দার সময় বলা হয়েছিল, যে বাংলাদেশের পোশাক খাত হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু তা হয়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে তৃতীয় শীর্ষ দেশ। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৮০ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ে তৈরি ২২৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১৮ হাজার ১১২ কোটি টাকার সমান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ যায় বাংলাদেশ থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানিতে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে চীন ও ভিয়েতনাম। ইন্দোনেশিয়া ও ভারত আছে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়, অন্যান্য দেশের বাজারেও তৈরি পোশাক রফতানিতে ধাক্কা লাগছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে জার্মানিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ১২৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। তিন মাস আগে এই দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছিল ১২৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এই হিসাবে তিন মাসে জার্মানিতে রফতানি কমেছে শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। একইভাবে তিন মাসের ব্যবধানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আবার নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন- প্রান্তিকে মোট রফতানি আয় হয়েছে ৯২৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ২৭ শতাংশ আয় হয়েছে রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) থেকে। এর মধ্যে ওভেন গার্মেন্ট থেকে এসেছে ৩৭৭ কোটি ডলার এবং নিটওয়্যার থেকে আয় হয়েছে ৩৬৮ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে মোট রফতানির ৪০ দশমিক ৬৩ শতাংশ আয় হয় ওভেন গার্মেন্টস পণ্য থেকে। এর বাইরে ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ আয় হয় নিটওয়্যার পণ্য রফতানি করে। এছাড়া, অন্যান্য পণ্য রফতানি করে আয় হয় ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত টানা ৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে তৈরি পোশাকের কারখানা ছিল ৫ হাজার ৬০০টি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৩৭৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২২২টিতে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কারাখানা চালু ছিল ৪ হাজার ৩০৬টি । (উৎস- বাংলা ট্রিবিউন)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২:৩০ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Leave a Reply