Home / ফিচার / জনজীবনে বসন্ত বরণের ছোঁয়া আর ভালোবাসার রঙ
বসন্ত

জনজীবনে বসন্ত বরণের ছোঁয়া আর ভালোবাসার রঙ

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির এই সময়ে বাতাস বদলে যেতে থাকে। শুষ্ক-রুক্ষতা দেখা যায় গাছে, পাতায়, ঘাসে। এবার সময়টা ভিন্ন। শীত এবার একটু দীর্ঘ। শীতের আমেজ পুরোটাই বর্তমান। এরই মাঝে বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। জনজীবনে বসন্ত বরণের ছোঁয়া আর ভালোবাসার রঙ এবার একাকার।

বারো মাসে তেরো পার্বণের বাঙালি জীবনে দুই আনন্দ একই দিনে—১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাল্গুনের বাসন্তী আবহ আর ভালোবাসা দিবসের লাল মিলেমিশে যোগ করেছে এবারের বসন্ত বরণ। এক কথায় ভালোবাসায় মাথামাখি এক বসন্ত। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর গত দুই বছর ধরে একই দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।

তীব্র শীতের কঠিন সময় পার করে প্রকৃতি যখন ডানা মেলে সেই আয়োজনকে বিভিন্ন দেশেই বরণ করা হয়। আমরা রঙিন পোশাকে বসন্তবরণ করি। সাধারণত বাসন্তী, হলুদ, লাল পোশাক পরে এদিন উৎসব আয়োজন হয়। পাশের দেশ ভারতে সাদা পোশাকে বসন্ত বরণ হয়। বুলগেরিয়ায় মার্চের ১ তারিখে বসন্ত ফিরে আসার দিনটি পালন করা হয়। লাল ও সাদা সুতায় তৈরি ছোট দুটি পুতুল বানিয়ে পরে থাকে প্রায় মাসজুড়ে। বসন্তের প্রথম আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলের গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় শুভ কামনা হিসেবে। চেরি ব্লসম ফেস্টিভ্যাল জাপানের বসন্ত উৎসব। এই সামাজিক যোগাযোগের যুগে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের বসন্তের রাজ্যে বিচরণের ছবি এখন আমাদের সবারই চেনা।

আর এই বাংলায় বসন্ত মানেই পূর্ণতা। ‘দোলে প্রেমের দোলন চাঁপা হৃদয় আকাশে’ যখন তখন এই বসন্ত মানেই প্রাণ চঞ্চলতা। কচিপাতায় আলোর নাচন। আবার বাঙালি জীবনে বসন্ত যেন অধিকার আদায়ের আওয়াজ নিয়ে হাজির হয়। বসন্ত আর আন্দোলনও মিলেমিশে একাকার।

বসন্তের আগমন বার্তা ১৯৫২ সালের সেই ফাল্গুন মনে করিয়ে দেয় যেদিন ‘পিচঢালা রাজপথে লাল ফুল হয়ে’ ভাষা শহীদেরা নিহত হয়েছিলেন শাসকের গুলিতে। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পথে নেমেছিল। বসন্ত মনে করিয়ে আশির দশকের স্বৈরাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের রক্তের কথা।

এই বসন্তেই ২০১৩ সালে এই প্রজন্ম জেগে উঠেছিল গণজাগরণে। যুদ্ধাপরাধের বিচার এই বাংলায় হতেই হবে দাবি নিয়ে আবারও এক হয়ে দেখিয়েছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে বারবার।

আর ভালোবাসা দিবস? সে এক রূপকথার দেশ যেন। বসন্তে মন উতলা হয়, বসন্তে হাহাকার জাগে, প্রেম জাগে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় ভালোবাসা দিবস। প্রচলিত ইতিহাসটি হচ্ছে রোমের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের। তিনি ছিলেন মানবপ্রেমিক ও খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের বারবার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। সেই থেকেই দিনটির শুরু।

বেদনার ইতিহাস দিয়ে হলেও তা এখন উদযাপনে রূপ নিয়েছে। মানুষ ভালবাসার কথা শোনার ও বলার জন্য সারাবছর বরাদ্দ রাখলেও এই একটি দিনে সেই ভালোবাসার অনুভূতিকে উদযাপন করা যায়।

জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল তলা, রবীন্দ্র সরোবর, রমনাসহ বিভিন্ন জায়গায় বসন্তবরণ অনুষ্ঠান করা হলেও মহামারির কারণে এবার শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চেই কেন্দ্রীয়ভাবে উদযাপন হচ্ছে দিবসটি।

পরিষদের এই আয়োজনে সকাল ৭টায় শুরু হবে; চলবে ১০টা পর্যন্ত। গত দুই বসন্ত ছিল সারা বিশ্বের মানুষের অস্থিরতার সময়। করোনা মহামারির প্রকোপে বিশ্ব নতুন করে বাঁচার লড়াই লড়ছে বটে কিন্তু এখনও থিতু হতে পারেনি। তাই উৎসবের বন্যায় ভাসলেই হবে না। খেয়াল রাখতে হবে স্বাস্থ্যেরও। কেননা এখনও করোনার প্রভাব বিদ্যমান। যেখানে ঘুরতে যান না কেন, স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলুন।