Home / সারাদেশ / কুমিল্লায় মহাবিপন্ন অতিবিরল বন্যপ্রাণীসহ পাচারকারী আটক
বন্যপ্রাণীসহ

কুমিল্লায় মহাবিপন্ন অতিবিরল বন্যপ্রাণীসহ পাচারকারী আটক

কক্সবাজার থেকে খুলনা হয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে পাচার করে নিয়ে যাওয়ার পথে একটি বিরল প্রজাতির মহাবিপন্ন প্রাণী উদ্ধার করেছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ। এসময় পাচারকারীকেও আটক করা হয়েছে।

পুলিশ জানায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৫ সেপ্টম্বর দিবাগত রাত দুইটার সময় কুমিল্লার মিয়াবাজার এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাসী করে প্রাণীটি উদ্ধার করা হয়।

রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করে জেলা গোয়েন্দা শাখা। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) এম. তানভীর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস জানান, কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, বিপিএম (বার) এর নির্দেশে তিনি জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি রাজেশ বড়–য়া পিপিএমসহ জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি অভিযানিক দল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার এলাকার গ্রীণ ভিউ হোটেলে পার্ক করা কক্সবাজার থেকে খুলনাগামী ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেস নামে একটি যাত্রীবাহী এসিবাসে তল্লাসী অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এসময় বন্যপ্রাণীটি বহনকারী মোঃ জুয়েল রহমান প্রকাশ সোহেলকে আটক করা হয়। আটক সোহেল খুলনা সিটি কর্পোরেশনের হাফিজনগর এলাকার মোঃ মজিবুর রহমানের ছেলে।

এসময় তার হেফাজতে থাকা বাজারের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো প্লাষ্টিকের ঝুড়িতে করে বহন কওে নিয়ে যাওয়ার সময় উদ্ধার করা বন্যপ্রাণীটি অতিবিরল ও মহাবিপন্ন উল্লুক বলে দাবি করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামী জুয়েল রানা জানায়, বান্দরবান জেলা হতে উল্লুক সংগ্রহ করে খুলনা-সাতক্ষীরা সীমান্ত হয়ে ভারতে পাচার করার উদ্দেশ্যে উল্লুকটি নিয়ে যাচ্ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উল্লুক অতি বিরল স্তন্যপায়ী প্রাণী। বানর প্রজাতির মধ্যে একমাত্র উল্লুক লেজবিহীন প্রাণী। বাংলাদেশের সিলেটের লাউয়াছড়া রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে উল্লুকের দেখা মিলে। সারা বাংলাদেশে ২৫০টির মত উল্লুক আছে মর্মে জানা যায়। উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণী বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বন্যপ্রাণী বিলুপ্তি ও প্রচার প্রতিরোধে “বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২” অনুসারে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) এম. তানভীর আহমেদ জানান, সাম্প্রতিক বন্যপ্রাণী বিলুপ্তি ও পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্থা বৈশি^কভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের বিধান রয়েছে। সে লক্ষ্যে বন্যপ্রাণী বিলুপ্তি ও প্রচার প্রতিরোধে (বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা ) আইন-২০১২” অনুসারে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী রক্ষায় এবং অবৈধভাবে পাচারকৃত বন্যপ্রাণী উদ্ধারে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে উল্লেখিত সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

INTERPOL কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের জন্য বিশ^ব্যাপী ‘Illegal Wildlife supply Chains Between Africa and Asia’ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গত জুলাই/২০২২ সময়ে মাসব্যাপী “Operation Golden Strike 2022” শিরোনামে Intelligence-led Operation পরিচালনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। উদ্ধারকৃত উল্লুকটি অতি বিরল স্তন্যপায়ী প্রাণী। বানর প্রজাতির মধ্যে একমাত্র উল্লুক লেজবিহীন প্রাণী। বাংলাদেশের সিলেটের লাউয়াছড়া রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে উল্লুকের দেখা মিলে। সারা বাংলাদেশে ২৫০টির মত উল্লুক আছে মর্মে জানা যায়।

প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২