Home / ফিচার / হুজুগে ও গুজবে ফেসবুক বনাম গণমাধ্যম
Journalist
ছবিটি প্রতীকী

হুজুগে ও গুজবে ফেসবুক বনাম গণমাধ্যম

গণমাধ্যমের ভাষা হলো, কখনো কখনো একটি ছবি হাজারো শব্দের কথা বলে। একটি ছবিই হতে পারে বড় ধরনের প্রতিবেদন। যা হাজারো শব্দ কিংবা বাক্য দিয়ে প্রকাশ করা যায় না।

প্রযুক্তির যুগে ছবিকে ছাড়িয়ে চলে আসছে ভিডিও সংবাদ, তার ওপরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে লাইভ সংবাদ প্রকাশ।

সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া টিয়ারশেলের ধোয়ার মধ্যে পতাকা হাতে রাজপথে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্রের ছবিটি কারো মোবাইলে তোলা ছিলো না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রহ করা কোনো নো কোনো সাংবাদিকের তোলা। সে ছবিটি হয়তো আন্দোলনকারীদের মাধ্যমেই ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু ছবিটি সংগ্রহ করতে হয়েছে কোনো না কোনো সংবাদমাধ্যমের অনলাইন ভার্সন থেকে। এ বক্তব্যে কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, ছবিটি সাংবাদিকের তোলা তার প্রমাণ কি?

উত্তরে বলবো, পুলিশ ও আন্দোলনকারী মুখোমুখি পরিস্থিতিতে সাংবাদিক ছাড়া কারো হাতে ভালো মানের ও অর্থ বুঝে ছবি ধারণ করার মতো ডিভাইস কিংবা মন-মানসিকতা থাকে না।

এছাড়া কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে কথিত দু’একটি বিতর্কিত মিডিয়া ছাড়া কেউই আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রায় সবক’টি গণমাধ্যমেই নিজেদের মিডিয়া গ্রামার ঠিক রেখে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো আন্দোলনকারী মধ্যে যারা ছিলেন তারাও হয়তো টেলিভিশন বা অনলাইন মিডিয়াগুলো কি সংবাদ প্রকাশ করছে তৎক্ষণাৎ দেখার সুযোগ পায়নি। কিন্তু কোটি কোটি দর্শক, শ্রোতা ও পাঠক আন্দোলনে অংশ না নিলেও সংবাদমাধ্যম থেকে বা কখনো সংবাদমাধ্যমের লিংক হয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে আসা সংবাদ দেখে আন্দোলনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে পেরেছেন।

মিডিয়ার এতোটা ইতিবাচক ভূমিকার পরেও কয়েকটি চ্যানেলের সাংবাদিক লাইভ করা অবস্থায় কিংবা লাইভ করতে যাওয়ার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্যে কতিপয় শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে ঠুনকো ও ফেসবুকে গুজবে ছড়ানো মিথ্যা বিষয়ে অভিযুক্ত করে মারধর করেছেন। যা খুবই দুঃখজনক।

আন্দোলনকারীদের ভাবা উচিত ছিলো, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিডিয়াগুলো লাইভ না করলে পুলিশ হয়তো আরো বড় ধরনের আক্রমণে যেতে পারতো। এরকম বিষয়ে অনেকে বলে থাকেন মিডিয়া টাকা খেয়ে সঠিকটা দেখায় না। তাদের বলবো লাইভে দেখানো বিষয় কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক, তা নির্ধারণ করে দর্শক।

এখন লাইভ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা পুলিশ ও সরকার দলের রোষানল পড়ার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের হাতে মার খেলো। এ ধরনের আচরণ কোনো আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে কাম্য নয়।

প্রিয় আন্দোলনকারী কিংবা তাঁদের সমর্থক পাঠক, আপনাকে ভাবতে হবে, যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক যে কোনো আন্দোলন সফলতা পায় তখনি, যখন গণমাধ্যমের ইতিবাচক সমর্থন থাকে।

ভাবতে হবে, যেখানে কয়েক সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনের জন্যে কোম্পানিগুলো লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে টেলিভিশন মিডিয়াতে প্রচারের সুযোগ পায়, সেখানে আপনাদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিংবা প্রতি মুহূর্তের সংবাদে প্রকাশ করছে বিনা পয়সায়। কিসের কারণে?

প্রত্যক্ষ কারণ বলবো, একটাই, সেটা হলো পেশাগত দায়িত্বশীলতা ও বৃহৎ জনগোষ্ঠির চাহিদা। এ সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে কিছু মানুষের সমর্থন পায়, আবার কারো কারো রোষাণলেরও শিকার হতে হয়।

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলবো, ফেসবুক থেকে আন্দোলনের উৎস কিংবা সূত্র পাওয়া গেলেও যাচাই করার মতো কোনো তথ্য ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা মুশকিল। তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আপনাকে তাৎক্ষণিক প্রথম শ্রেণির গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

কারণ ফেসবুকের ব্যবহারকারীগণ অধিকাংশরাই হুজুগ ও গুজবের শিকার হন। তাই ফেসবুককে গণমাধ্যম ভাবা কিংবা তার তথ্য তৎক্ষণাৎ বিশ্বাস করা আদৌ উচিত নয়। সে সাথে গুজবে বিশ্বাস থেকে কারো ওপর আক্রমণ করাও ঠিক নয়।

সর্বশেষ বলবো, সাংবাদিকরা ফেরেশতা কিংবা স্রষ্টার পাঠানো বিশেষ কোনো দূত নয়, অন্যান্য পেশার মতো ভালো-খারাপ মিলিয়েই সাংবাদিকতা একটি দায়িত্বশীল মানের পেশা।

লেখক- দেলোয়ার হোসাইন,
নির্বাহী সম্পাদক, চাঁদপুর টাইমস।

বেসরকারি টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির অনুষ্ঠান ‘তালাশ’-এর উপস্থাপক মঞ্জুর করিমের ইউটিউব থেকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাঠকদের উদ্দেশ্যে দেয়া হলো-