চাঁদপুর

পাঁচ দশক পর সিলেট-চাঁদপুর রুটে ফের ট্রেন চালুর উদ্যোগ

ব্রিটিশ আমলে তত্কালীন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে সিলেট-চাঁদপুর রুটে একটি ট্রেন চলাচল করত। মেঘনা নামের ওই ট্রেনটি দিয়ে আসাম থেকে চা ও অন্যান্য পণ্য যেত চাঁদপুরে। সেখান থেকে পণ্যগুলো নৌপথে কলকাতা বন্দর হয়ে পৌঁছত ব্রিটেনে। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর কালের পরিক্রমায় রেলের ওই রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি পুরনো সেই রেল রুট ফের সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সিলেটে কর্মরত চাঁদপুর ও বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে এ রুটে নতুন এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রুটটিতে নতুন একটি ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও মতামত তৈরি করছে রেলওয়ে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা নতুন রেক দিয়ে ট্রেনটি চলতি বছরের মধ্যে চালু করা হতে পারে।

ইতোমধ্যে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এসব নানা দিক বিবেচনায় ও গুরুত্ব অনুধাবন করে সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে পুরনো সেই রেল রুটটি আবার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ রুটে নতুন একটি ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও মতামত তৈরি করছে রেল কর্তৃপক্ষ। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা নতুন রেক দিয়ে ট্রেনটি চলতি বছরের মধ্যে চালু করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এক সময় চাঁদপুর-সিলেট রুটের ট্রেন দিয়ে শরীয়তপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা, বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করত। বর্তমানে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে প্রতিদিন এক জোড়া ট্রেন অর্থাৎ আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা মেইল চলাচল করছে। ফলে বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের কুমিল্লায় ও কুমিল্লার যাত্রীদের দক্ষিণাঞ্চলে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বর্তমানে এ রুটের যাত্রীরা ঢাকা হয়ে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করছে। নতুন প্রস্তাবিত ট্রেন সার্ভিসটি চালু হলে বৃহত্তর কুমিল্লা ও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ যাত্রী চাঁদপুর হয়ে সংশ্লিষ্ট জেলায় যাতায়াতের সুযোগ পাবে।

জানা গেছে, এর আগে পুরনো এ রুটটি আবার চালু করতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কয়েক দফা উদ্যোগও নেয়া হয়। কিন্তু রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের মতামত প্রদানে গড়িমসি ও অসহযোগিতার কারণে তা আর অগ্রসর হয়নি। বর্তমানে সিলেট থেকে কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলায় প্রতিদিন প্রায় ৪০ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে আসছে। এ বাসগুলোর সেবার মান খুবই নিুমানের। লক্ষ্মীপুর জেলার অধিকাংশ যাত্রী চাঁদপুর হয়ে বাসে সিলেট যাতায়াত করে থাকে।

অথচ চাঁদপুর থেকে সিলেটে রেল চলাচল শুরু হলে বৃহত্তর কুমিল্লাসহ নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার যাত্রীরা এ পথে সিলেট যাতায়াত করতে পারবে।

চলতি বছরের ২৫ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সিলেট-চাঁদপুর রুটে নতুন একটি আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর জন্য ওই চিঠি দেন। ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালকের কাছে নতুন করে তাগাদাও দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব খোন্দকার নাজমুল হুদা শামিম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দ্বিতীয় দফায় মতামত চাওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিশেষ নির্দেশনা থাকায় সিলেট-চাঁদপুর রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু হতে বাধা নেই। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো মতামত চাওয়া হলে আমরা অবশ্যই বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করে মতামত দেব। বিষয়টি রেলের পরিবহন বিভাগ থেকে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বাণিজ্যিক দিক বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এরপর মন্ত্রণালয় ট্রেনটি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলেই রেলওয়ের সবচেয়ে পুরনো এ রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

করেসপন্ডেট,২ নভেম্বর ২০২০

Share