রাজনীতি

ফেনীতে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সেই ছাত্রীকে দেখতে ঢামেকে শিক্ষামন্ত্রী

ফেনীর সোনাগাজীতে গায়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার চিকিৎসাধীন সেই ছাত্রীকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি।

রোববার (০৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢামেকে যান শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় তিনি হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত বার্ন ইউনিটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছাত্রীর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি হাসপাতাল ছাড়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। তবে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার করা হবে।

এর আগে রোববার দুপুরে ওই ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ছাত্রীর চিকিৎসায় হাসপাতালে ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

রোববার(৮ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনায় মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ওই ছাত্রীর ভাইয়ের ভাষ্য মতে, গত ২৭ মার্চ বেলা পৌনে ১২টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে সেই ছাত্রীকে নিজের কক্ষে ডেকে নেন। তখন সেই ছাত্রী নিজের সঙ্গে আরও ৩-৪ জন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে সিরাজউদ্দোলা অন্যদের ঢুকতে না দিয়ে কেবল সেই ছাত্রীকে নিয়ে যান। এরপর দরজা আটকে তিনি ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। এমনকি পরীক্ষার আধঘণ্টা আগে তাকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে জানিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়।

এরপর সিরাজউদ্দৌলা ওই ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করলে সেখানে কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়। তখন খবর পেয়ে মাদ্রাসায় থাকা ওই ছাত্রীর ছোট ভাই অধ্যক্ষের কক্ষে ছুটে যায়।

অধ্যক্ষ তখন তাকে জানান, তার বোন অসুস্থ। সেজন্য ছুটির আবেদন করতে এসে পড়ে যায়।

সেখান থেকে ওই ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে ওই ছাত্রী কিছুটা সুস্থ হয়। তখন সে স্বজনদের জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিলেন। এরপরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর মাদ্রাসা অধ্যক্ষই উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ফোন করেন। আওয়ামী লীগের নেতা পুলিশসহ মাদ্রাসায় যান। তবে মাদ্রাসায় গিয়ে সব ছাত্র-ছাত্রীর মাধ্যমে সত্য ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ অধ্যক্ষকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরের দিন সিরাজউদ্দৌলাকে আদালত পাঠানো হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।

দগ্ধ করার ঘটনার বর্ণনায় ওই ছাত্রীর ভাই জানায়, শনিবার (৬ এপ্রিল) আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিলো তার বোনের। সকালে মাদ্রাসায় গেলে একজন সেই ছাত্রীকে বলে যে, তার এক বান্ধবীকে কারা যেনো ছাদে মারধর করছে। এ কথা শুনে সে তখনই সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে বোরকা পরা চারজন ওই ছাত্রীকে ঘিরে ধরে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। এই চাপ প্রত্যাখ্যান করায় সেই চারজন প্রথমে তাকে কিল-ঘুষি মারে। এক পর্যায়ে তারা সেই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়।

এ সময় ছাত্রীর চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেল ও মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোস্তফা। পরে তারা ছাত্রীর গায়ে কার্পেট জড়িয়ে আগুন নেভান।

বার্তা কক্ষ
৮ এপ্রিল,২০১৯

Share