ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহফুজুল হকের বিরুদ্ধে ৯ কাউন্সিলরের দেওয়া অনাস্থা প্রস্তাবের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এক মাস বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই চলতি সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকেলে চাঁদপুর টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৪ এপ্রিল প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মেয়রের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে অনাস্থার বিষয়টি জানান ৯ কাউন্সিলর। পরের দিন ২৫ এপ্রিল মেয়র মাহফুজুল হক কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্য বলে দাবি করেন।
এর আগে ২২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বরাবরে কাউন্সিলররা মেয়রের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে আনাস্থা প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এর অনুলিপি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়, স্থানীয় এমপি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্যসচিব, জেলা প্রশাসক চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পাঠানো হয়।
চাঁদপুর জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অনাস্থা প্রস্তাবকারী ৯ কাউন্সিলর, পৌর মেয়র, পৌরসভার সচিব, সহকারী প্রকৌশলী ও কোষাধ্যক্ষের সাথে পৃথকভাবে কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখাও শেষ হয়েছে।
গত ২৬ জুন অভিযোগকারী কাউন্সিলরগণ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে শুনানির জন্যে উপস্থিত হন।
এ বিষয়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কাউন্সিলর খলিলুর রহমান বলেন, শুনানীতে আনিত অভিযোগ সর্ম্পকে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর সচিব খোরশেদ আলম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, কোন মানুষ ভুলত্রুটির উর্ধ্বে নয়। এধরনের অভিযোগ তারা এখন করছেন কেনো। এটাতো আরো আগেও করতে পারতেন। অতএব এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। তার প্রমান হলো প্যানেল মেয়র-২ মোহাম্মদ হোসেন ও কাউন্সিলর মহসিন তালুকদার তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যেসব কাউন্সিলররা অনাস্থা এনেছেন এদের অনেকেই পৌরসভাতেই আসেন না। ওই সকল কাউন্সিসলরদের অনুপসস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে মেয়র সাহেব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন।
পৌর মেয়র মাহফুজুল হকের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাণ্বিত হয়ে কতিপয় স্বাধীনতা বিরোধীচক্রের প্ররোচনায় কাউন্সিলরগণ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে।’
তিনি অনাস্থা প্রস্তাবকারী প্যানেল মেয়র-১ খলিলুর রহমান, কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন, ইসমাঈল হোসেন সোহেল, মজিবুর রহমান, মহিলা কাউন্সিলর ফাতেমা বেগম ও কুসুম বেগমের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘এরাতো নিয়মিত পৌরসভায় আসেন না। এদের ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ইতোমধ্যে আমি আবেদন করেছি। বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তার কাছেও তুলে ধরা হয়েছে।
মেয়রের আনিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে কথা হয় কাউন্সিলর জামাল উদ্দিনের সাথে। তিনি পাল্টা অভিযোগের সুরে বলেন, আমরা রাজনৈতিকভাবে বহিরাগত নই। তিনি সভা আহ্বান করেন বেলা ১১টায়, কিন্তু তিনি আসেন বিকেল ৪টায়। আবার কখনো তিনি আসেন’ই না। যার কারণে এক পর্যায় আমরা সভায় যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।
এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে, এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
প্রতিবেদন : বার্তা কক্ষ