ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

ফরিদগঞ্জের ১নং বালিথুবায় একটি পারিবারিক বিষয়কে কেন্দ্র করে স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগের আলোকে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের খাঁড়খাদিয়া (ঔষধ বাড়ির) মৃত,হোসেন আলী মাস্টারের মেয়ে সাহিদা বেগমকে প্রায় ২০ বছর আগে একই উপজেলার সোবাহান গ্রামের গাজী বাড়ির শামছল গাজীর ছেলে আলমগীরের কাছে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিয়ে দেয়। তাদের সংসার জীবন খুব ভালোই চলছিল। দুইজনের সুখের সংসারে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আলমগীরের পরকীয়া প্রেম।

অভিযোগকারী সাহিদা বেগমে তিনি জানান আমার এবং আমার স্বামী আলমগীরের সংসার এক সময় খুব অভাব অনটনের ছিল। পরে আমার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে এবং আমার ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার স্বামী আলমগীরকে বিদেশে পাঠাই। সেই থেকে আমাদের সংসার মোটামুটি সুন্দর চলছিল।

কিন্তু আমাদের পাশের গ্রাম সকদিরামপুর গোলজার বাড়ির আবুল বাশার চাচার মেয়ে নিঝুম আমার স্বামী আলমগীরের সাথে রং নাম্বারে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা আমার অগোচরে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করেন। যাহা প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়না। পরে বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয়। যার কারণে আমি গত ৩০ অক্টোবর সকদিরামপুর গোলজার বাড়িতে ঘটনার সত্যতা জানতে যাই।

কিন্তু আমি যাওয়ার সাথে সাথেই নিঝুমের মা, বাবা এবং অন্যান্যরা সহ আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে সেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তারা আমার স্বামী আলমগীরের সাথে আর আমাকে ঘর করতে দিবেনা বলে হুমকি দেয়।

পরে তারা আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমার ভাই, ভাবিকে এবং অন্যান্যদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে আসছে।

তিনি আবেগ-আপ্লুত ভাবে বলেন তাহার তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। যার মধ্যে বড়টি বিয়ে দিয়েছে। তার এই বয়সে অন্য কোথাও বিয়ে হওয়া সম্ভব না। তাই তিনি তার স্বামীকে হারাতে চান না।

তিনি আরো বলেন অত্যান্ত চতুর ও দেহ ব্যবসায়ী নিঝুম বর্তমানে আমাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, আমার স্বামীকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এর সুষ্ঠু সমাধান চান।

বিষয়টি নিয়ে সকদিরামপুর গোলজার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে নিঝুমের মা এবং বাবা সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে চলে যান।

এ সময় নিঝুমের দুই ভাই বশির উল্লাহ ও জালালের সাথে কথা হলে তারা বলেন তাদের বোন নিঝুম না জেনে আলমগীরের সাথে বিয়ে বসেছে। যাহা আমরাও জানি না। পরক্ষণে বিষয়টি আমরা শুনে খুব দুঃখ পেয়েছি। কারণ আলমগীরের প্রথম স্ত্রী সাহিদা বেগমদের পরিবারের সাথে আগে থেকেই আমাদের ভালো সম্পর্ক। কিন্তু অনাকাঙ্খিত এই ঘটনার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেন।

এছাড়া গত ৩০ অক্টোবর তারিখের ঘটনার জন্য নিঝুমের ভাই সাহিদা দের প্রতি দোষ চাপিয়ে বলেন সেদিন সাহিদা তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের মা-বাবাকে শারীরিকভাবে অনেক আঘাত করেন। তারা বলেন আমরা আমাদের বোনকে আর আলমগীরের সাথে ঘর করতে দিব না। এছাড়া তাহারা বলেন মামলায় উল্লেখিত ১নং আসামী নাছির হোসেন ২নং আসামী সুমি বেগম এবং ৪নং আসামী আছিয়া বেগম এরা ঘটনাস্থলে না থাকলেও দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এরা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো, কে -কে দেখেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বশির উল্লাহ এবং জালাল কোনরকম প্রমাণ দেখাতে পারেনা।

এছাড়া এলাকার কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা জানান, আপনারা যাদের সমস্যা নিয়ে এখানে এসেছেন এরা দুই পরিবারই একই এলাকার। এবং এরা দু’পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। কিন্তু নিঝুম না জেনে আলমগীরের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে আজকের এই ভুল বোঝাবুঝি। আমরা এলাকার শান্তি রক্ষার্থে এদের মিথ্যা মামলার অবসান চাই বলে তারা জানান।

মামলার প্রধান আসামি নাসিরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন তিনি নিজে ২ও৪ নং আসামী নিয়ে হাসপাতালে ছিলেন। এবং তার কাছে সব ধরনের ডকুমেন্ট আছে। এছাড়া তিনি বলেন তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে এই মিথ্যা ষড়যন্ত্র।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, এসআই জালালের সাথে কথা হলে, তিনি বলেন ঘটনাটি তদানীন্তন আছে। এবং এর সত্যতা যাচাই বাছাই করেই রিপোর্ট দেওয়া হবে।

অন্যদিকে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সহিদ হেসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যাচাই-বাছাই করেই এর সঠিক তদন্ত রিপোর্ট করা হবে।

প্রতিবেদক:শিমুল হাছান,১০ নভেম্বর ২০২০

Share