Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে প্রবাসী যুবকের মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে পরিবারের দাবি
ফরিদগঞ্জে প্রবাসীর মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি পরিবারের
নিহত প্রবাসী যুবক আহম্মেদ মিজি

ফরিদগঞ্জে প্রবাসী যুবকের মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে পরিবারের দাবি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের প্রত্যাশী গ্রামের মিঝি বাড়ির পুকুর থেকে গত ২০ নভেম্বর আহম্মেদ মিঝি(৩৫) নামে এক প্রবাসী যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি এটি অপমৃত্যু নয়, পরিকল্পিতভাবে আহম্মেদ মিঝিকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

নিহতের পরিবার পুলিশের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন।

নিহতের বাড়িতে তার স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাহেদুল ইসলামের ছেলে প্রবাসী যুবক আহম্মেদ মিঝির ১৮ বছর ধরে সৌদি প্রবাসি ছিলন। গত ৮ মাস পূর্বে সে বাড়ি ফিরে আসে। তার বাবা-মা’সহ পরিবারের বেশ ক’জন সদস্য ও সৌদ প্রবাসী।

অবিবাহিত জীবনে সে অনেকটা নি:ঃসঙ্গ জীবন যাপন করতো।

গত ১৮ তারিখ শুক্রবার সন্ধ্যায় আহম্মেদ মিঝি পাশ^বর্তী সেকান্তর খাঁন বাড়ি সংলগ্ন একটি ওয়াজ মাহফিলে যায়। রাতে সে ওই মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে যায়।

এ বিষয়ে নিহতের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শিল্পি বেগম এ চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আহম্মেদ মিঝি নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে ২০ তারিখ সকালে তিনি বাবার বাড়ি থেকে শ^শুর বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে প্রবেশকালে বাড়ির বাউন্ডারি ও বিল্ডি এর কলাপসিপাল গেট খোলা দেখতে পান। ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন আহম্মেদ মিঝি যে কক্ষে ঘুমাতো ওই কক্ষে তালা ও কক্ষের সামনে একটি পানি ভর্তি কলস পড়ে আছে। মাঝখানের কক্ষের মেঝেতে অনেকগুলো সিগারেটের চাই ও সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ পড়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে বাড়ির বাইরে লোকজনের চিৎকার শুনতে পাই পুকুরে যেনো করো লাশ ভেসে আছে। পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করার পরে জানতে পারেন লাশটি তার বাসুর আহম্মেদ মিঝির।

নিহতের ভাই মো. মনির হোসেন মিঝি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমার ভাই যখন ঘরের বাইরে যেতো তখন সে বিল্ডিং এর
প্রবেশ মুখ ও বাহিরের গেট তালা দিয়ে বের হতো। আমার স্ত্রী এসে বিল্ডিং এর তালা খোলা দেখতে পায়। তার মানে সে ওয়াজ থেকে বাড়িতে ফিরে এসেছিলো।’

মনির হোসেন আরো জানায়, ‘গত ১১ ও ১৪ নভেম্বর আহম্মেদ মিঝি তাকে ফোন করে জানায় কারা যেনো তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। সে তার তাকে (মনিরকে) কিছু টাকা পাঠানোর অনুরোধ করে। যাতে সে অন্যত্র চলে যেতে পারে। তিনি আহম্মেদ মিঝিকে শিঘ্রই টাকা পাঠানোর আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তুু তার আগেই সে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়।

মনির হোসেনের দাবি, ‘তার ভাই আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

নিহতের সৌদি প্রবাসী বড় বোন মিনু আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে মোবাইলে চাঁদপুর টাইমস প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কেউ দেশে থাকি না বলে, ভাইয়ের হত্যাকান্ডের কোন বিচার কি হবে না। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।’

নিহতের খালা খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা হাওয়া বিবি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আহম্মেদ মিঝির বসত বাড়ির নিকটতম স্থানে দুটি পুকুর আছে। কিন্তু তার লাশ পাওয়া গেছে বসত ঘর থেকে ৩০ গজ দূরে আরেকটি পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে। পুকুরের পাড় রিটানিং ওয়াল দেওয়া আছে। এছাড়া সে ওয়াজ শুনতে যাওয়া ও আসার সময় তার সাথে মানুষ ছিলো বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছে। তার গায়ে যে কোটটি ছিলো সেটি তার বাবার। অতীতে সে কোন দিন ওই কোর্টটি পড়েনি।’

‘এছাড়া তার পায়ের একটি জুতা পুকুরে পাওয়া গেলেও আরেকটি জুতার লোগো পাওয়া গেছে বাড়িতে। লাশ উদ্ধারকালে যারা উপস্থিত ছিলো তারা আহম্মেদ মিঝির গলায় কালো দাগ দেখেছে।’

অপরএক প্রশ্নের জাববে তিনি বলেন, ‘মাদক সেবন ও জুয়ার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার হিসাবে চালানো হয়েছে। সে কোন সময় মাদকের সাথে জড়িত ছিলো না। জন্মের পর থেকে সে ঢাকায় বড় হয়। এছাড়া দীর্ঘ ১৮ বছর সৌদি থাকার পর গত ৮ মাস পূর্বে সে বাড়ি ফিরে আসে।’

পুলিশ লাশের সনাক্তকারী হিসাবে ঘটনাস্থল থেকে তার চাচা রফিকুল ইসলাম মিঝির স্বাক্ষর নিলেও এখন তাকে অপমৃত্যুর মামলার বাদী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এস আই মো. তাজুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘নিহতের চাচা বাদী হয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, পোস্টমর্টেম রির্পোট না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।’

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কেউই থানায় আসে নি। এছাড়া লাশ ঘটনাস্থল থেকে থানায় আনার সময় তার চাচাকে থানায় আসতে বলা হয়। কিন্তু তিনি মেয়ের বিয়ের ব্যস্ততার কারণে থানায় আসতে পারেননি।’

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কালাম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া লাশ পোস্টমর্টেম রিপোট পাওয়ার পর বলা যাবে কিভাবে সে মারা গেছে। যদি হত্যা সংক্রান্ত কোন রিপোর্ট আসে তাহলে আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কোন সমস্যা হবে না। আর নিহতের পরিবারকে সকল ধরণের আইনী সহায়তা করা হবে।’

আতাউর রহমান সোহাগ : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯:৩০ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

Leave a Reply