চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে সেচের পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সঠিক সময়ে খালে পানি না আসায় বোরো চাষাবাদে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। এতে করে ধান উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা তানিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে খালের বিভিন্ন স্থানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সংকটের কারণে সমগ্র উপজেলাতে অনাবাদী জমির পরিমানও বাড়ছে।
কৃষিবিদরা জানান,১৫ ডিসেম্বর থেকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে হয়। যা স্বাভাবিকভাবে চলে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে হয়। ৪০ দিন পর চারার বয়স বাড়তে থাকলে ক্রমেই ধানের উৎপাদন কমতে থাকে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়,উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের ৯ হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে বোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৯৭০ হেক্টোর।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার আদশা, হামছাপুর, হুগলী, ত্রিদোনা, বৃহত্তর ষোলদানা, রাজাপুর, সাইসাঙ্গা, দত্রা, খাজুরিয়া, গুপ্টি, সেনা হাটখোলা সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা পানির অভাবে ধানের চারা রোপন করতে পারছে না। কেউ কেউ পুকুর, ডোবা কিংবা নালা থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানি সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপন করলেও পানির অভাবে তা এখন নষ্ট হওয়ার পথে।
এছাড়া অনেক স্থানে অবৈধ ভরাটের কারণে খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছেনা। আবার কোন কোন স্থানে সামান্য পানি আসলেও তা দিয়ে জমিপ্রস্তুত করা সম্ভব্য নয়। এছাড়া ভরাট হওয়া কয়েকটি খাল দেখে বুজার কোন উপায় নেই এই স্থান দিয়ে সিআইপি বেড়িবাঁধের কোন খাল ছিলো।
এসর্ম্পকে উল্লেখিত এলাকার কৃষক ইউপি সদস্য মো. শরীফ গাজী, জাকির হোসেন, সারোয়ার হোসেন,বাবুল দেওয়ান,সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান, ডা. শফিকুর রহমান, জসিম উদ্দিন, খোরশেদ আলম সুমন, সিদাম দাস, জীবন দাস, সুমন, মমিন হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, উল্লেখিত এলাকাতে চাষাবদ উপযুক্ত এক থেকে দেড় হাজার একর জমি রয়েছে। সুইছ গেট দিয়ে সিআইপি বেড়িবাঁধের ভিতরের খালগুলোতে নদী থেকে পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
কিন্তু এবার সঠিক সময়ে পানি না আসার কারনে আমরা ধানের চারা রোপন করতে পারছি না। ধানের চারার বয়স দিন দিন বেড়ে চলছে। অনেকের চারার বয়স ৬০ দিন পার হয়ে গেছে। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে হয়। তা না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সঠিক সময়ে পানি না পাওয়ায় বোরো উৎপাদনে বিপর্যের আশঙ্কা করছেন কৃষক।
খাজুরিয়া মাঠের স্কিমের ম্যানেজার মামুন আখন্দ, হুগলী মাঠের স্কিম ম্যানেজার সুমন, হাট খোলা মাঠের স্কিম ম্যানেজার আবুল কাসেম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, খালে পানি না থাকার কারণে সেচ দিতে পারছি না। পানির অভাবে কিছু এলাকায় রোপন করা ধানের চারা নষ্ট হওয়ার পথে। পানি না থাকায় বোর চাষাবাদ বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে।
এ সর্ম্পকে ওই এলাকার রাজনীতিবিদ বুলবুল আহম্মেদ বলেন, গুপ্টি পূর্ব ও পশ্চিম ইউনিয়নের খালগুলো গত ২৫ বছরে এক বারও খনন করা হয়নি। মূলত খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে পানি না আসায় কৃষকরা পানি সংকটে রয়েছে। গঙ্গাজলী ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে খাজুরিয়া-গুপ্টি এলাকার খালগুলো খনন করা হলেও আগামীতে এই পানি সংকট আর থাকবে না।
এছাড়া সুবিদপুর পূর্ব পশ্চিম ইউনিয়ন কৃষক লীগের আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন মিলন বলেন,ওয়াপদা রাস্তার খালের মাথা থেকে ইউনিয়ন পরিষদের পাশ দিয়ে সাহার বাজার পর্যন্ত খালের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে ভরাট হওয়ার কারনে খালে পানি নেই বললেই চলে। বোর চাষাবাদের জন্য যে পরিমান পানি প্রয়োজন তা প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছেনা। এছাড়া খাল ভরাট হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে ঠিকভাবে পানি নিষ্কাসন হয়না। যার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। অবিলম্বে জনস্বার্থে খালটি খনন করা প্রয়োজন।
এবিষয়ে উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘মূলত খাল ভরাটের কারণে বিভিন্ন এলাকাতে পানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পানি উন্নয়নবোর্ডকে তাগিদ দিয়েছি, যাতে তারা মেশিনের মাধ্যমে দ্রুত পানি সরবারহ করে। আশা করছি ১৫ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে আমরা বোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পৌছতে পারবো।’
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আলী আফরোজ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিতে পানি সংকট দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।’
প্রতিবেদক:আতাউর রহমান সোহাগ
০৪ ফেব্রুয়ারি,২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur