ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের নামে দাললচক্রের হরিলুট

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দালালচক্র হরিলুটে নেমেছে। দালালচক্রের কবলে পড়ে ধুলিসাৎ হতে চলেছে বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ খাতের বিশাল অর্জন।

সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু সেই অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ মদদেই নামধারী কতিপয় দালাল। যাদের কাছে জনস্বার্থের চেয়ে, নিজের স্বার্থই বড়।

সারাদেশের ন্যায় ফরিদগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে স্থানীয় সাংসদ ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভুঁইয়া অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তার সময়কালে এপর্যন্ত ফরিদগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার নতুন গ্রাহক বিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছেন।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সূত্রে জানা যায়, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের অধিকাংশই ছিল সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত।

কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে ঠিকাদার ও স্থানীয় দালালচক্র মিলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকেই বিদ্যুৎ সংযোগের দালালী করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন।

উপজেলার ১৫ নং রুপসা উত্তর ইউনিয়নের কমলকান্ডি গ্রামে সোয়া কিলোমিটার লাইন নির্মাণে দালালচক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অপরদিকে দেড় বছরেও বিদুৎ সংযোগ না পেয়ে ফুঁসে উঠেছে প্রতারিত এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, স্বাধীনতার ৪৫ পেরিয়ে গেলেও ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫ নং রুপসা (উ:) ইউনিয়নের কমলকান্দি গ্রামের জনগন বিদুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলো। ২০১৫ সালে ওই গ্রামে দেড় কিলোমিটার বিদুৎ লাইনের অনুমোদন দেয়া হয়।

আর এই লাইন নির্মানের ঠিকাদারিত্ব পায় দুলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। ঠিকাদার প্রথমে গ্রামে ৫/৬টি খুঁটি ফেলে রাখে। যাতে এলাকার বিদ্যুৎ বিহীন লোকজন বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য আকৃষ্ট হয়। এ সুযোগে স্থানীয় দালাল আবদুল কুদ্দুস, মো: আনোয়ার, মো: ইমরান, মো: সবুজ, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। পরে তারা বিদুৎ গ্রাহকদের জানান, টাকা না দিলে বিদুৎ লাইন হবেনা। পরে ওই গ্রামের ১০৬ জন গ্রাহকের কাছ থেকে কৌশলে গড়ে ২০ হাজার টাকা করে প্রায় ২১ লক্ষ টাকা তুলে নেয় ওই দালাল ও ঠিকাদার।

এ সর্ম্পকে বিদ্যুৎ গ্রাহক রফিক ও তাজুল ইসলাম জানান, ‘বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে আমাদের বাড়ির প্রত্যেক ঘর প্রতি ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে টাকা তুলেছেন আবদুল কুদ্দুস, আনোয়ার হোসেন, এমরান হোসেন, সবুজ হোসেন।’

এ সর্ম্পকে অভিযুক্ত আবদুল কুদ্দুসের বক্তব্য জানার জন্য তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

আরেক অভিযুক্ত এমরান হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ‘গ্রাহকরা আমাদের সামাণ্য টাকা দিয়েছে, তা আমরা ঠিকাদারকে দিয়ে দিয়েছি কাজ দ্রুত হওয়ার জন্য।

টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে এমরান জানায় ‘কতো টাকা উঠানো হয়েছে এবং কতো টাকা ঠিকাদারকে দিয়েছি তা আপনাদের বলা যাবে না।’

ঠিকাদার দুলাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, ‘গ্রাহকরা শুধু আমাকে খুঁটি নেওয়ার ভাড়াটা দিয়েছে, আর কোন টাকা পয়সা আমি নেইনি।’

এবিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার আবু তাহের চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘গ্রাহকরা দালালদের টাকা দেয় কেন? আর যারা বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যপারে টাকা চাইবে তাদেরকে পুলিশে দিবেন।’

কমলকান্দিতে বিদ্যুৎ সংযোগের অনিয়মের বিষয়ে তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ফরিদগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯: ৫০ পিএম পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share