Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে কবিরাজের কারিশমায় ‘আকাশের মেঘ কেটে রোদ উঠে’!
bhua kobiraj fa

ফরিদগঞ্জে কবিরাজের কারিশমায় ‘আকাশের মেঘ কেটে রোদ উঠে’!

আতাউর রহমান সোহাগ
ফরিদগঞ্জে এক রিক্সাচালক হঠাৎ করে হয়ে গেছে বড় তান্ত্রিক। ভ‚য়া তন্ত্র-মন্ত্র, তেলপড়া, সুতাপড়া, পেয়ারপড়া, পানিপড়া দিয়ে গ্রামের সহজ সরল শিশু কিশোর নারী পুরুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভর করে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছে শিশু কিশোরসহ শত শত নারী পুরুষ। সুযোগ পেয়ে মুকবুল আহম্মদ নামের ওই ভ‚য়া তান্ত্রিক প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। তাকে কেন্দ্র করে গত প্রায় দেড় মাসে এক শ্রেণির দালাল চক্র গড়ে উঠেছে সেখানে। দালালরা তাকে বেষ্টনী দিয়ে রাখে।

উপজেলার ১২ নং চরদুঃখিয়া ইউনিয়নরে চরচন্না গ্রামে গত প্রায় দেড় মাস ধরে প্রতারণামূলক এ ভুয়া তান্ত্রিক ব্যবসা চলছে । এ ভূয়া তান্ত্রিকের কাছে গেলে সর্ব রোগ-শোক থেকে পরিত্রাণ পাবে বলে দালালরা প্রচার করছে।

কথতি এ তান্তিকের বাড়ি গিয়ে জানা যায়, গ্রামের রাঢ়ি বাড়ির দরিদ্র্য পরিবারের ছেলে মুকবুল আহম্মদ। দারিদ্র্যের কারণে লেখা পড়া করা হয়নি তার। তাই কিশোর বয়সেই ক্ষেতমজুর, নির্মাণ শ্রমিক এর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। এক পর্যায়ে গত প্রায় ১৫ বছর পূর্বে চলে যান ঢাকা শহরে। বিভিন্ন কাজে শ্রম বিক্রিসহ আখ বিক্রি করেছেন। প্রায় ১২ বছর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে রিক্সা চালিয়েছেন।

এদিকে, হঠাৎ করেই গত প্রায় দেড় মাস পূর্বে এলাকায় আবির্ভাব ঘটে মুকবুল আহম্মদের। তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে তিনি নানা জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করেন। চিকিৎসায় ভালো হয়েছেন অনেকে। কে বা কারা এলাকায় তার এমন ভুয়া সংবাদ প্রচার করে দেয়। প্রতিদিন তার বাড়িতে শতাধিক শিশু কিশোর ও নারী পুরুষের যাতায়াত শুরু হয়। সকাল হতে রাত অব্দি ভিড় লেগে থাকে বাড়িতে। আরোগ্য লাভের আশায় দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই তার বাড়িতে যান। প্রতিদিন ৫০-৬০ জনকে ফিরনি পাক করে খাওয়ান তিনি। তার ভাষায় এটা হচ্ছে তাবারক।

লোকমুখে খবর পেয়ে এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সাংবাদিক যায় তার বাড়িতে। বেলা দুইটায় সেখানে গিয়ে দেখা যায় তিনি তেল, কালো সুতা, পানি, পেয়াজপড়া ও ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন লোক জনকে। বিনিময়ে ১০১ থেকে ৫০১ টাকা নিচ্ছেন।

আরোগ্য লাভের আশায় তার কাছে যারা গেছেন, তাদের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হাত-পায়ে, বুকে পিঠে ব্যথা, হাড় ভাঙ্গাসহ হাঁটুর বাটি ভেঙ্গে যাওয়া রোগী যেমন আছে। তেমন আছে নাকের পলিপাসের রোগী। জ্বীনে ধরা, বুক ও পেটের ব্যথা, মাথা ঘুরানো, মানূষ হারিয়ে যাওয়া, স্বামী-স্ত্রীর অমিলসহ পারিবারিক অশান্তির সমাধানও দেন তিনি।
প্রাথ শতাধিক মানুষের সামনে কথা হয় তার সাথে। তার এমন তান্ত্রিক হয়ে উঠার রহস্য জানতে চাইলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ঢাকা শহরে রিক্সা চালাতে গিয়ে গত রমজান মাসে দেখা হয় এক ‘অলির বাবার’ সঙ্গে। ওই অলি বাবা তাকে বিভিন্ন সময় নানা পরীক্ষায় ফেলেন। কয়েক মাস চলার পর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় মুকবুল আহম্মদ। এরপর এলাকায় গিয়ে মানুষের সেবা করার জন্য অলি বাব তাকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মুকবুল আহম্মদ চলে যান নিজ গ্রামের বাড়িতে।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয় অলি বাবার নাম কি। উত্তরে মুকবুল আহম্মদ বলেন তার নাম ‘বাকী শুদ্ধ অলি’!
তাকে বলা হয় তিনি যেসব রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন তা এভাবে ভালো হবার নয়। এ জন্য মেডিক্যাল শাস্ত্রীয় চিকিৎসা প্রয়োজন। এতে সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে অনেক মানুষ এমনকি পঙ্গুও হয়ে যেতে পারেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে এসে কেউ খালি হাতে ফিরেনি।

এসময় তিনি দাবি করে বসেন, গত চার মাস পূর্বে আকাশে প্রায় ৭ দিন যাবত মেঘ। লোকজন বাড়ির ধান শুকাতে পারছে না। তার ধ্যানে মেঘ কেটে যায়। তখন মানুষজন আকাশে রোদ দেখে ধান শুকাতে দেয়।
মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে এমন কাজ বেআইনি। সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি আমার অলি বাবার ইচ্ছায় সব করি। সাংবাদিক কেনো, কেউ আমার কেউ কিছু করতে পরবে না।’

সংবাদকর্মীরা তার কাছ থেকে চলে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিলে, তিনি গলা হাঁকিয়ে বলেন, ‘আমার এখানে যে-ই আসুক অলি বাবার ইচ্ছায় সে-ই চুম্বকের মতো আটকে থাকবে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও যদি আসে রেহাই পাবে না। সবই অলি বাবার ইচ্ছা।’
নাকে পলিপাস নিয়ে তার কাছে চিকিৎসা নিতে গেছেন চরচন্না গ্রামের অষ্টম শ্রেণি পড়–য়া ছাত্রী সোমা ও নওশিন নামের পাঁচ বছরের এক শিশু। নাকের পলিপাসের জন্য তাদের তেল, পেয়াজ ও কালো সুতাপড়া দেয়া হয়েছে। এছাড়া, উপস্থিত রফিক (৪০), সিরাজ (৬০), আরিফ (২৯), সালমা বেগম (২৩), ইয়াছিন (২৩)সহ বেশ কয়েকজন সকরের সামনে জানান, ভ‚তে ধরাসহ তাদের শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে মুকবুল আহম্মদের কাছে গিয়ে তারা চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করেছে।

এদের পরিচয় সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, এরা অধিকাংশ মুকবুল আহম্মদের কাছের ও দূরের আত্মীয়-স্বজন।
অন্যদিকে উপস্থিত মোঃ সেলিম (৫৫) জানান, মুকবুল আহম্মদের প্রতিবেশী মোঃ টেলু রাঢ়ীর পোলিও রোগাক্রান্ত শারীরিত প্রতিবন্ধী মোঃ হাছান (১৪)কে গত এক মাস যাবত চিকিৎসা দিচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। একইভাবে এমরান হোসেন (৩০), রাকিব মজুমদার (১৬), সবুজ (৩৮), আঃ গফুর (২২) হিরামন মজুমদার (২১) প্রমুখ অভিযোগ করে জানান, মুকবুল আহম্মদ তান্ত্রিকতার নামে গত প্রায় দেড় মাস যাবত এলাকায় এই ভূয়া চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। তার চিকিৎসায় কেউ ভালো হয়েছে। এমন কোনো সংবাদ তাদের জানা নেই।

তারা বলেন, সরকারের দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে এ ব্যপারে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া।

মুকবুল আহম্মদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান হাছান আব্দুল হাই চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমি এর এ পর্যন্ত জানি না। তবে তাকে চিনি। তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টি একটি ধোকাবাজী। আমি এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবন্থা গ্রহণ করবো।

আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০৩ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার
ডিএইচ