চাঁদপুর

ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ : ১০ শ্রেণিকক্ষে ৭শ’ শিক্ষার্থীর পাঠদান

‎Tuesday, ‎05 ‎May, ‎2015   08:48:55 PM

আশিক বিন রহিম :

ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজে ১০ টি শ্রেণিকক্ষে চলছে ৭শ’ শিক্ষার্থীর পাঠদান। দিন যতই যাচ্ছে ততই এ কলেজটিতে শ্রেণীকক্ষ সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে গতি পাচ্ছে না কলেজটির পাঠদান কার্যক্রম।

১৯৯৮ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও এ অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক সুজিত রায় নন্দী। প্রথমে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও সময়ের পালাবদলে প্রতিবছরই বেড়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী সংখ্যা।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ২০১২ সালে কলেজটিতে ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে এ কলেজে প্রায় ৭’শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু শিক্ষার্থী সংখ্যা অধিক হলেও পাঠদানের জন্য নেই প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ। এ সাতশ’ শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র ১০টি। ফলে বিঘিœত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মোঃ হাসান খান বলেন, ‘চাঁদপুর জেলার একটি আলোকিত প্রতিষ্ঠান আমাদের এই কলেজটি। এই কলেজটি থাকার কারণে এখানকার শিক্ষার্থীদের দূর দূরান্তে পড়তে যেতে হয় না। এ কলেজটি না থাকলে শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত চাঁদপুর সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ ও পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজে গিয়ে পড়তে হতো।’

তিনি আরো জানান, ‘আমাদের শিক্ষকরা তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। শিক্ষার্থীরাও ভালো ফলাফলের অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে। ফলে প্রতিবছরই আমরা ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম। এ বছর এ কলেজ থেকে প্রথমবারের মতো ২৫ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আশা করি তারা কলেজের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে। আমাদের ফলাফল তুলনামূলক ভালো হওয়ায় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দূরবর্তী হবার কারণে এখানকার শিক্ষার্থীরা এ কলেজে পড়তেই বেশি আগ্রহী। তাই প্রতিনিয়ত আমাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন প্রয়োজন ছিলো তা হচ্ছে না। ফলে আমরা শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটে ভুগছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মূলভবন ২ তলা থেকে ৪ তলায় উন্নীত করার কাজ চলছে। জুন জুলাইতে কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের মৃত্যুর কারণে সেই কাজটি এখন স্থগিত রয়েছে। উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ হলে আমাদের শ্রেণিকক্ষের সাথে আরো ৪টি রুম যুক্ত হবে। এতে করে আমাদের শ্রেণিকক্ষ সমস্যা কিছুটা মিটবে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের একটি নতুন ভবনের প্রয়োজন। আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মহোদয় নতুন ভবনের জন্য চেষ্টা করছেন। ৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন হলেই আমরা স্বাভাবিক পরিবেশে আমাদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো। আমাদের মূল ভবনটিও ঝরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আস্তর খসে পড়ছে দেয়াল থেকে। এটাও সংস্কার করা প্রয়োজন। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো আবেদন জানাচ্ছি আমাদের সমস্যা সমাধানে যেনো তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

প্রতিষ্ঠানটির ডিগ্রী শাখা অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়ে জানান, ‘আমাদের ডিগ্রি কোর্স এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। আমাদের কলেজের ফান্ড থেকে তাদের বেতনাভাতাদি দেয়া হচ্ছে। ডিগ্রি এমপিওভুক্ত করার জন্য আমরা আবেদন করেছি। কলেজ থেকে বেতনভাতাদি দেয়া আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ডিগ্রি যদি এমপিওভুক্ত করা হয়, তবে প্রতিষ্ঠানটি সার্বিকভাবে এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

কলেজের শিক্ষকরা জানালেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ কলেজে অনার্স শাখা খোলা হবে। প্রথমে তিন বিষয়ে অনার্স করার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। বিষয়গুলো হলো : ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান ও সমাজকর্ম। অনার্স শাখা খোলার মধ্য দিয়ে এখানকার শিক্ষার্থীরা তাদের এলাকাতেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে। কয়েক মাইল পাড়ি দিয়ে দূরে কোথাও পড়তে যেতে হবে না।
শিক্ষকরা বলেন, অনার্স খোলার সাথে সাথে অনেক শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসবে। ফলে শ্রেণীকক্ষ সঙ্কট আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। এজন্যই সার্বিক দিক বিবেচনা করে কলেজে নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ছে। যদি কলেজের অবকাঠামোগত সমস্যাসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধান হয় তবে এ প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর জেলার মধ্যে একটি মডেল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। তারা কলেজের শ্রেণীকক্ষ সমস্যা দূরীকরণ ও ডিগ্রি এমপিওভুক্তিকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতায় কলেজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরাও। আর কাক্সিক্ষত সাফল্য পেতে এবং শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার জন্য তারাও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

চাঁদপুর টাইমস/ডিএইচ/এবিআর/২০১৫

Share