ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে লাঙ্গল নয়, নৌকাই চায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জয় নিশ্চিত করতে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে ফাঁকা মাঠ চষে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ।

‘বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের সাথে পুনরায় জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নেয়ার’ বিষয়টি গৃহপালিত বিরোধী দল জাপা চেয়াম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ঘোষণা আসায় নানা হিসেবে-নিকেশ কষছে দু’দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

এদিকে গতবারের ন্যায় নৌকা প্রতীকের পরিবর্তে জোটের প্রার্থী হিসেবে এবারো জাতীয় পার্টির নাঙ্গল প্রতীক দেয়ার গুঞ্জন চলছে এলাকায়।

এ নিয়ে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ফরিদগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন নাঙ্গল চাই না, নৌকার জয় নিশ্চিতের জন্য নৌকাই চাই। তবে আগামী নির্বাচনে ফরিদগঞ্জে নৌকার পরিবর্তে যদি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয় সেটা কারো জন্য পৌষ মাস আবার কারো জন্য সর্বনাশ হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষরিত মনোনয়ন পত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ আসনে মূলত মহাজোট কিংবা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কে? আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী ঘোষণার আগে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে মনোনয় প্রত্যাশী ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদেরকে আরো অপেক্ষা করতে হবে বলে অনেকই মনে করছেন।

কারণ প্রত্যেক প্রার্থীর নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা কার কেমন তার সঠিক তথ্য উপাত্ত দেখেই এবার আওয়ামীলীগ প্রার্থী মনোনয়ন চুড়ান্ত করবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দলীয় সুত্র জানায়, ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে চাঁদপুর ৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মাইনুল ইসলাম মানু। তবে যাছাই বাছাইতে সেই সময়ে মাইনুলের মনোনয়ন বাতিল হয়।

গত নির্বাচনে ডঃ মোঃ শামছুল হক ভুইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমে মনোনয়ন দাখিল করেন। পর অবশ্য দল ডঃ শামছুল হক ভুইয়াকে নৌকা প্রতীক দেয়ায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন ।

স্বাধীনতার পর জাতীয় কোন নির্বাচনে ফরিদগঞ্জে বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত এ আসনে নৌকা প্রতীকের জয় পায়নি আওয়ামী লীগ।

এবার নৌকা প্রতীকের জয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মাঠে কাজ করতে দেখা যায় ।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের রয়েছে ক্লীন ইমেজ থাকা কয়জন জনপ্রিয় ও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে। দলের মধ্যেই যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নৌকা প্রতীক ছাড়া লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দিলে খোদ আওয়ামী লীগের বিরোধিতার মধ্যেই পড়তে হবে জাতীয় পার্টিকে।

গতবারের ন্যায় এবারো মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেয়ার পক্ষে বিপক্ষে নানাবিধ আলোচনা চলছে। তবে এবার আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে প্রার্থী না পেলে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচন করার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

নেতাকমীরা জানায়, ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের কয়জন প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থীর নানাবিধ গণসংযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়লেও জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীকে এলাকায় তেমন কোন গনসংযোগ কিংবা দলের পক্ষে কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই বললেই চলে।

এমন অবস্থায় বিশেষ করে ফরিদগঞ্জের আওয়ামীলীগ আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নিয়ে চিন্তিত রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনিরকে এবার আওয়ামী লীগের মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন রতন বলেন, এই আসনে দলের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ব্যক্তির জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা যাছাই বাছাই করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দিলে এবার ফরিদগঞ্জে জননেত্রী শেখ হাসিনার সেই নৌকার জয় নিশ্চিত হবে বলে আমি মনে করি।

একই বক্তব্যে দিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ আওয়ামী গুনিজন স্মৃতি সংসদের সভাপতি আবুল হাসনাত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়জন নেতা বলেন, লাঙ্গল বাদ দিয়ে দলের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এবার বিশেষ করে ব্যক্তির জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতার উপর নির্ভর করে নৌকার জয় পরাজয়।

জাতীয় পার্টি থেকে ফরিদগঞ্জ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মনিরুল ইসলাম মনির এ প্রতিনিধেকে বলেন, ‘মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর জেলার মাত্র একটি আসন চাঁদপুর ৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আমার দলের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি হুসাইন মোহাম্ম এরশাদ উক্ত আসনটি তালিকাভুক্ত করেছেন। উপজেলার প্রতিটি এলাকার জাতীয় পার্টির নেতাকমীরা সাথেই আমার যোগাযোগ আছে। সময় মতো সবই ঠিক হয়ে যাবে।’

উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল আউয়াল মিঝি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘মহাজোটের অংশ হিসেবে জাতীয় পাটি থাকলেও আমরা ফরিদগঞ্জে সরকারিভাবে কোন সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় এলাকায় কাজ করতে পারিনি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী করতে ফরিদগঞ্জের এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভুইয়ার নের্তৃত্বে এ আসনে নৌকার জয় নিশ্চিত করা হবে। আওয়ামী লীগের মহাজোটের পক্ষ থেকে ফরিদগঞ্জে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোন কিছুই শুনতে চাই না।’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ফরিদগঞ্জ
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

Share