প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পর্যায়ক্রমে এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। আজ সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়াসহ আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়নি। বরং ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই পরীক্ষার সাতটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার পরীক্ষার দিন আড়াই ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবশ্য আজ সকালে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।
পাবলিক পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি কমাতে এর আগে দুই দফায় ১০ নম্বর করে এমসিকিউ প্রশ্ন কমানো হয়। এবার এ প্রশ্নপদ্ধতি পুরোপুরি তুলে দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে এমসিকিউ রাখা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন করতে শতভাগ লিখিত ‘সৃজনশীল প্রশ্নে’ (সিকিউ) পরীক্ষা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বড় আকারের সেমিনার আয়োজন করে সেখানে সবার মতামত নিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে। গতকাল রোববার বিকেলে চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচকভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গঠিত ‘জাতীয় মনিটরিং এবং আইন-শৃঙ্খলা কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সমকালকে বলেন, এমসিকিউ পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষাবিদদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকের মধ্যে বহু আগে থেকেই প্রশ্ন ছিল। ২০১৫ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এটা ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ করা হবে। তখন ১০ নম্বর কমানো হয়। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকদের নিয়ে সেমিনার করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
গতকালের সভা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের আসল কারণ এই এমসিকিউ। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে উত্তরও ফেসবুকে দিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা এক নজর দেখেই পরীক্ষার হলে গিয়ে সহজেই উত্তর দিতে পারে। শতভাগ সৃজনশীল প্রশ্ন থাকলে
এ সুযোগ থাকবে না। মেধারও সঠিক মূল্যায়ন হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এমসিকিউ তুলে দিতে আমিই সভায় প্রস্তাব করি। তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৯২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ চালু করা হয়। বাকি ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা (সিকিউ)। ৫০ নম্বরের এমসিকিউ উত্তর দিতে প্রতি বিষয়ে ৫০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যার নাম দেওয়া
হয় প্রশ্নব্যাংক। ৫০ নম্বরের উত্তর দিতে শিক্ষার্থীরা ৫০০ এমসিকিউ মুখস্ত করে পরীক্ষায় বসত। তখন এমসিকিউ ও সিকিউ মিলে ৩৩ নম্বর পেলেই পাস করত পরীক্ষার্থীরা। ফলে এক শ্রেণির শিক্ষার্থী রচনামূলক অংশের লেখাপড়া বাদ দিয়ে শুধু ৫০০ এমসিকিউ মুখস্থ করত। এতে পাসের হার রাতারাতি বাড়তে থাকে। এতে শিক্ষার মান নামতে শুরু করে। এ অবস্থায় ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে নির্ধারিত ৫০০ নম্বরের এমসিকিউ তুলে দেয়। গোটা বই থেকে এমসিকিউ নির্ধারণ করা হয়। অবশ্য এতেও শেষরক্ষা হয়নি। এমসিকিউর উত্তর পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের বলে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে থাকে। পরে ২০১৫ সালে এমসিকিউর পূর্ণ নম্বর ৫০ থেকে কমিয়ে ৪০ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের এমসিকিউর উত্তর বলে দেওয়ার প্রবণতা কমেনি। বাধ্য হয়ে এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজের কাজ হয়নি। কেন্দ্রে বিনিময় প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে চুক্তিভিত্তিক উত্তর বলে দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এক পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের র্যাংকিং বাতিল করা হয়। সেই পদক্ষেপও কাজে আসেনি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় এমসিকিউ প্রশ্ন কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনা হয়। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে নানা উদ্যোগের পরও বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের এমসিকিউ প্রশ্ন উত্তরসহ ফাঁস হয়েছে।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৯: ০০ পি.এম, ১২ ফেব্রুয়ারি২০১৮,সোমবার ।
কে এইচ