Home / ফিচার / প্রশ্ন ফাঁস, ‘দুষ্টু’ গণমাধ্যম ও ‘গুজবে’ কান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের!
প্রশ্ন ফাঁস, ‘দুষ্টু’ গণমাধ্যম ও ‘গুজবে’ কান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের!

প্রশ্ন ফাঁস, ‘দুষ্টু’ গণমাধ্যম ও ‘গুজবে’ কান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের!

তানজিল রিমন  ||  আপডেট: ০৫:৪৩ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০১৫, শুক্রবার

রাজ্যের ঘুম শেষ করে পত্রিকা হাতে নিতেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল। প্রথম পাতায় বেশ বড় বিজ্ঞাপন চোখে না পড়ে উপায় আছে। বিজ্ঞাপনটি দেখে যারপরনাই বেশ ভাল লাগল। বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। একটা স্বাধীন দেশে কত সহজে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাও বুঝতে পারলাম। আহা দেশের গণমাধ্যমগুলোর বুঝি খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই। এরা অনেক দুষ্টুও বটে, না হলে কেউ এমন সংবাদ প্রকাশ করে!

শুধু কি গণমাধ্যমই দুষ্টু, র‌্যাবই বা কম যায় কীসে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে তা প্রমাণ করেছে এই সংস্থাটি। দেশের অপরাধ দমনে প্রশংসনীয় এই সংস্থা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার আগে ১৫ সেপ্টেম্বর চারজনকে আটক করে। পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের কাছে ইলেকট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহের অভিযোগে পরীক্ষার দিনই (১৮ সেপ্টেম্বর) তিনজনকে আটক করে র‌্যাব। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক কর্মকর্তাও রয়েছেন। পরীক্ষার পর ২২ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে চিকিৎসক ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকসহ সাতজনকে আটক করে সংস্থাটি। ছোটদের মধ্যে যারা বেশি চঞ্চল ও চটপটে, তাদের ‘দুষ্টু’ বলা হয়।

আর সেই সূত্রেই গণমাধ্যমগুলোও দুষ্টুর সেরার প্রতিযোগিতায় ছিল যেন। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়ার পরেও তারা সংবাদ প্রকাশ করেছে। অবশ্য এবছর পুলিশের আইজিপি ‘দুষ্টু’র আরেকটি উদাহরণ টেনেছিলেন, টিএসসিতে বৈশাখের প্রথম দিনের যৌন হয়রানির ঘটনায়। এই দুষ্টু অবশ্য একটু ভিন্ন! ওদিকে আর যাচ্ছি না।

গণমাধ্যম ছাড়াও অনেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। চারপাশের অনেক ঘটনাই গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় না। কিন্তু আশপাশের মানুষ ঠিকই তা জানেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা এই দেশে নতুন না। আর সবসময়ই বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা পরীক্ষা কমিটির কাছে গুজবের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সব প্রমাণ দেওয়ার পরও তারা মানতে নারাজ ছিলেন, এখনও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।

একটা গল্প মনে পড়ল। এক রাজা একবার একটি বিষয় নির্ধারণ করে ঘোষণা দিলেন, যদি বিষয়টি কেউ তাকে বোঝাতে পারেন তবে রাজ্যের অর্ধেক এবং রাজকুমারিকে বিয়ে দিবেন। কিন্তু কেউ আর রাজাকে বিষয়টি বোঝাতে পারেন না। একদিন রানি তাকে বললেন, আচ্ছা কোনো পঙ্গু লোক যদি আপনাকে বোঝায় তখন কী সত্যি আপনি রাজকন্যাকে তার হাতে তুলে দিবেন? রাজা বললেন, আরে সে যতই বোঝাক না কেন, আমি বুঝলে না দিব…

ল্পটি খুব ভালভাবে রপ্ত করেছেন পরীক্ষা সংশিষ্টরা। পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে উত্তর দিয়ে ক্লাস এইটের ছেলে পাশ করলেই কী আর তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? তারা স্বীকার করলে তো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক বিজ্ঞপ্তিতে আবারও জানিয়েছেন নিশ্ছিন্দ্র নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যুগে যুগেই তা হয়ে আসছে, তবে এবার একটু বেশি সুষ্ঠু হয়েছে। এর আগে আমরা এইচএসসি পরীক্ষা, এসএসসি পরীক্ষা এমন কি অষ্টম শ্রেনি ও পঞ্চম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষাতেও দেখেছি, কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি!

তবে হ্যাঁ শিক্ষার্থীরা আগেই প্রশ্ন পেয়েছিল বটে। আমরা এই সরকারের আমলে আরো একটি বিষয় দেখেছি, যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সব খুবই সুষ্ঠু হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার দুইটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেন নির্বাচনের পর আমাদের ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দাবি অনুযায়ী, এমন সুষ্ঠু নির্বাচন আর হয়নি। তবে গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি, একজন একাই একশ’ ভোট দিয়েছেন, কাউকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। কোথাও কোথাও দরজা লাগিয়ে সিল মারা হয়েছে। এসবই আসলে গুজব! যত নষ্টের গোড়া আসলে গণমাধ্যম। সুষ্ঠু বিষয়গুলোকে তারা তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে।

এভাবেই দুর্নীতি না করলেও কারো কারো দুনীর্তি তুলে ধরে, রাস্তাঘাট ঝকঝকে থাকলেও ভাঙাচোরা তুলে ধরে, নির্বাচনের সিল মারা বা জাল ভোট না দেওয়া হলেও তা সুন্দরভাবে প্রচার করে, বিভিন্ন নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে, প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলেও ফাঁস করে, মেডিকেলের ছাত্ররা আন্দোলনে নামলে বন্দুকের বাঁট দিয়ে পুলিশ আদর করলেও তা মারপিট বলে গুজব সৃষ্টি করেছে। গণমাধ্যমে নতুন করে যোগ দিয়েছে ফেসবুক নামের আরেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই মাধ্যম আরো বেশি দুষ্টু। গণমাধ্যমে কিছু প্রকাশ হওয়ার আগে অনেক বিষয় এখানে চলে আসে। তবে এই মাধ্যমকে অবশ্য হাতকড়া পরানোর ব্যবস্থা হয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মাধ্যমে।

ধুর, কোথায় থেকে কোথায় চলে গেলাম। খুব খারাপ অভ্যাস। আসলে গুজবে কান দেওয়ার অভ্যাস নেই তো, তাই প্রশ্ন ফাঁস থেকে অন্য দিকে চলে যাচ্ছিলাম। যাই হোক, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্ন ফাঁসের গুজব নিয়ে দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭ সেপ্টেম্বর র‌্যাব একটি চক্রকে ধরেছে। বাকি দুটি চক্রকে ধরার তারিখ ঠিক থাকলেও এই তারিখটি কেন ১৮ সেপ্টেম্বর লেখা হলো না তা বোধগম্য নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে কিংবা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এগিয়ে আছে, তারাই পরীক্ষায় ভালো করেছে। সুতরাং প্রশ্ন ফাঁসের গুজব সঠিক নয়!

অতএব কেবল মেধাবীরাই এবার চান্স পেয়েছে। মেধাবী ছাড়া কেউ চান্স পায়নি। এবার ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া প্রথম ২০ জন শতকরা ৯০-এর উপরে নম্বর পেয়েছে। সর্বোচ্চ পেয়ে ৯৪.৭৫। প্রথম ২০জনের এমন ফলাফলে আমরা আবেগাপ্লুত। এমন ফলাফল সাধারণত দেখা যায় না। দেশের আসল মেধাবীরাই এবার ডাক্তার হবে। অন্যবার আসল মেধাবীরা চান্স পায় না, পেলেই কম! তবে বিষয়টা যেন আবার আসল বিএনপির মতো না হয়! দেশে আরো একটা বিএনপি আছে, তারাই নাকি আসল বিএনপি! এই যে আবারো অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি।

তবে গুজবে আমি কান দেইনি। কান দিয়েছে স্বয়ং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর তাই এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আজ দেশের সবক’টি পত্রিকায়। আর আসুন আমরা গুজবে কান না দিয়ে নিজের চোখে কিছু দেখলেও তাকে গুজব বলতে শিখি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ গুজবের নতুন সংজ্ঞা দেওয়ার জন্য।

 

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫