১ এপ্রিল বিকালে ৩ টা চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের কথা দিয়েছিলেন।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে এমপিকে দেখিয়ে বলেন, আপনাদের এই জনপ্রতিনিধি একজন ডাক্তার। সে আমার কাছে আগেই চাঁদপুরে একটা মেডিকেল কলেজ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কথা দিয়েছি, চাঁদপুরে মেডিক্যাল কলেজ করে দেবো।
এরই মধ্যে চাঁদপুরবাসীকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নে এরইমধ্যেই কর্মপরিকল্পনা এবং কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের স্থান হিসেবে প্রাথমিকভাবে শহরের খুব কাছে সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের ইসলামপুর গাছতলা সেতু সংলগ্ন মেরিন একাডেমির বিপরীত পাশে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের মনোরম পরিবেশে জায়গায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রায় ২৫ থেকে ৩০ একর জমির ওপর নির্মিত হবে এই অধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ভূমি অধিগ্রহণে কোনে প্রকার প্রতিবন্ধকতা সহ অন্যান্য ক্রটি না থাকলে স্থাপনাটি নির্মাণে এই স্থানই চূড়ান্ত হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে।
অত্যন্ত মনোরম পরিবেশের এই স্থানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হলে সড়কপথ এবং নৌপথ দুটো সহজেই ব্যবহার করা যাবে। এর বর্জ ব্যবস্থপনাও খুব সহজ হবে।
শনিবার (৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এডিসি রেভিউনিউ, গণপূর্ত প্রকৌশলী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-প্রতিনিধি দল এবং স্থানীয় সংসদ প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রনোয়ণ এবং উল্লেখিত স্থান পরিদর্শন করেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্লানিং, মনিটরিং এন্ড রিসার্চ এর আয়োজনে চাঁদপুর সিভিল সার্জন এর কার্যালয়ে সম্মিলিত প্রতিনিধি দলের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মেডিকেল কলেজ হাসপাল নির্মাণের বিষয়ে সকলে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
পরে দুপুর ১২টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ নির্ধারিত স্থান গাছতলা এলাকায় জায়গাটি সরজমিনে পরিদর্শন করেন।
প্রতিনিধি দলের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি প্রধান (চিকিৎসা, শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগ) রেজওয়ানুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ জামাল হোসেন, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিষিষ্ট চিকিৎসক ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপু, সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইদুজ্জামান, চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল আজম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আরাফাত ও ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রধান স্থপতি মো. মাসুদ পারভেজ, জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নুসরাত শারমিন, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জুয়েল, সদস্য আইয়ুব আলী বেপারী, সদর আসনের সংসদ ডা. দীপু মনি এমপির প্রতিনিধি অ্যাড. সাইফুদ্দিন বাবু, সার্ভেয়ার মো. মোস্তফা কামাল, মো. শহীদুল ইসলাম ও বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী পাঠান প্রমুখ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি প্রধান (চিকিৎসা, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ) রেজওয়ানুল হক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরসহ দেশের মোট ৫টি জেলায় নির্মাণ করা অঙ্গিকার করেছেন। এসব জেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে চাঁদপুর ছাড়াও অন্য জেলাগুলো হলো হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী ও রাঙ্গামাটি।
অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতাগুলো যে ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এটি একইভাবে নির্মাণ করা হবে। এই ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, বর্জ ব্যবস্থাপনা, আনুসাঙ্গিক সরঞ্জামাদিসহ সকল কিছুই থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ জামাল হোসেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে এটি প্রধানমন্ত্রীয় প্রতিশ্রুতির একটি প্রকল্প। তাই আমাদের সকলের বিশেষ নজরে এনে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে বর্তমানে নির্ধারণ করা স্থানে প্রায় ৩০টির মতো পরিবার রয়েছে। তাদের বিষয়টিও ভাবতে হবে। তারা যাতে জমির ন্যায্য মূল পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই মেডিকেল কলেজটি প্রধামন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চাঁদপুরবাসীকে দেয়া অঙ্গিকার। যতো দ্রুত সম্ভব এটি বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার আন্তরিক। এ বিষয়ে আমাদের সবাই সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি। আমার পক্ষ থেকেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। এই কাজে কোনো প্রকার গাফলতি বা অবহেলা করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সদর আসনের সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি এমপি একজন কাজ পাগল মানুষ। তিনি চাঁদপুরবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি মেডিকেল কলেজ চেয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই দাবি রেখেছেন। আমি বিশ্বাস করি খুুব শিগ্রই আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। তিনি মেডিকেল কলেজটি নির্মানের ক্ষেত্রে এটিকে দৃষ্টিনন্দন করার দাবি জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর আসনের এমপি ডা. দীপু মনির বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু বলেন, চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমাদের সদর আসনের এমপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি মেডিকেল কলেজ দাবি করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তখন ওনাকে কথা দিয়েছিলেন একজন চিকিৎসক হিসেবে এমপি মহোদয়ের এই দাবিটি তিনি রাখবেন। তিনি বলেন, এটি পুরো চাঁদপুরবাসীর দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যতো দ্রুত সম্ভব কলেজটি করা যায় সেই লক্ষ্যে সবাই কাজ করছে। এজন্য আমরা সংবাদিক মহলসহ সমগ্র চাঁদপুরবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।
এ সংক্রান্ত ওই সময়ের একটি প্রতিবেদন- ডা. দীপু মনিকে দেখিয়ে চাঁদপুরবাসীকে যে ওয়াদা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:১০ পিএম, ৭ জুলাই ২০১৮, শনিবার
ডিএইচ