Home / জাতীয় / প্রতিটি ঘরে ইলিশ পৌঁছে দেওয়া সরকারের লক্ষ্য
ইলিশ

প্রতিটি ঘরে ইলিশ পৌঁছে দেওয়া সরকারের লক্ষ্য

জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ঘরে ইলিশ পৌঁছে দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য। উদ্বৃত্ত উৎপাদন হলে দেশের বাইরে রফতানি করা হবে।’

১ এপ্রিল শনিবার পিরোজপুরের হুলারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘একটা মা ইলিশ ছয় লাখের বেশি ডিম দেয়। একটা মা ইলিশ ধরা মানে ছয় লাখ ডিম নষ্ট করা। জাটকা ধরা মানে ছোট ইলিশ বড় হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। কিছু দুর্বৃত্ত বালু উত্তোলন করতে গিয়ে ইলিশের প্রজননস্থলের পরিবেশ নষ্ট করে। নদী দূষণ করে নষ্ট করে ইলিশের ডিম ও পোনা। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে যত্রতত্র মাছ আহরণ করে মা ইলিশ ও জাটকা নিধন করে। যারা জাটকা ধরছে– এ মাছ বড় হলে তারাই ধরবে। বড় মাছ বিক্রি করে তারাই লাভবান হবে। দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খেতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘একটা সময় দেশে মাছের আকাল ছিল। বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দফতর-সংস্থার কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাছের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ইলিশের উৎপাদন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশ্বের মোট ইলিশের শতকরা ৮০ ভাগ শুধু বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। ২০০৮-০৯ সালে দেশে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১-২২ সালে তা বেড়ে ৫ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা এবং তার সরকারের অবদানের কারণে ইলিশের উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় স্মার্ট মৎস্য খাতের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির অনেক মাছ ফিরিয়ে এনে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের পোনা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে অঞ্চলে যে মাছ নেই, সে অঞ্চলে সে মাছের পোনা ছাড়া হচ্ছে। এভাবে ভাতে-মাছে বাঙালির বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি আবার ফিরিয়ে আনা হবে।’

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘দেশে মাছের উৎপাদন বাড়ার ফলে খাবারের যোগান বাড়ছে, পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। মাছ চাষের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, বেকারত্ব দূর হচ্ছে, সচল হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। মাছ উৎপাদন, পরিবহন, বিপণন ও রফতানির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। অপরদিকে মাছ রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে, যা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।’

মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘জিআই সনদপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ইলিশ বিলুপ্ত হলে বাঙালির গর্বের ইলিশের জিআই সনদ থাকবে না। সেজন্য কোনোভাবেই মা ইলিশ ধরা যাবে না, জাটকা ইলিশ নিধন করা যাবে না। জাটকা নিধন বন্ধ থাকাকালে মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ (ভার্নারেবল গ্রুপ ফিডিং) দেওয়া হচ্ছে, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইলিশ বড় হতে দিতে হবে। বড় ইলিশ মৎস্যজীবীরাই আহরণ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাটকা নিধন বন্ধ না করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। যারাই জাটকা নিধনের জড়িত থাকবে, আমরা তাদের আইনের আওতায় আনবো।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন– মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, নৌপুলিশের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন এস এম এনামুল হাসান, পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক।

অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পিরোজপুরের বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জাটকা রক্ষায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণার অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিসহ জেলে এবং মৎস্যজীবীদের সঙ্গে পিরোজপুরের হুলারহাট লঞ্চ ঘাট থেকে কচা নদীতে বর্ণাঢ্য নৌর‌্যালিতে অংশ নেন মন্ত্রী।

‘করলে জাটকা সংরক্ষণ, বাড়বে ইলিশের উৎপাদন’ প্রতিপাদ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শনিবার (১ এপ্রিল) শুরু হওয়া জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৩ চলবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদফতর।

টাইমস ডেস্ক/ ১ এপ্রিল ২০২৩