রাত তখন নয়টা। ততক্ষণে নুরুন্নাহার বেগম ও আবদুর রাজ্জাক বুঝে গেছেন, সিডর কাউকে রেহাই দেবে না। তবু এক মাস বয়সী সন্তান মো. শান্তকে বাঁচাতে মরিয়া তাঁরা। একটি পাতিলের মধ্যে শান্তকে রেখে ভাসিয়ে দিলেন। পানির তোড়ে ভেসে গেলেন তাঁরাও।
ঢেউয়ের সঙ্গে আট ঘণ্টা লড়াই করে নুরুন্নাহার-রাজ্জাক পটুয়াখালীর বাউফলের চরওয়াডেলে উঠতে সক্ষম হন। পাতিলে ভাসা শান্তরও একই চরে জীবিত উদ্ধার হওয়া এক অলৌকিক ঘটনাই বটে। পারিবারিক অভাব-অনটনে সেই শান্তর এগিয়ে চলার পথটা এখন রুদ্ধ হয়ে আসছে।
চরওয়াডেল থেকে তিন কিলোমিটারের পথ চরফেডারেশনের বাসিন্দা নুরুন্নাহার বেগম (৩০) বললেন, ‘আমাগো থাহার মতো কোনো জমিজমা নাই। হেইয়ার লইগা চরফেডারেশনের সরকারি জমিতে ঘর উঠাইয়া থাকতে ছিলাম। সিডরে হেইয়াও ভাসাইয়া লইয়া গ্যাছে। বাহের (বাবা) ঘরে আইয়া উঠছি।’
সিডরের পর পেশায় শ্রমিক আবদুর রাজ্জাকের উপার্জনে বেশ চলছিল পরিবারটি। কিন্তু ২০১০ সালে ঢাকায় বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা যান তিনি। এখন নুরুন্নাহারকে থাকতে হচ্ছে বৃদ্ধ বাবা ইসমাইল সিকদারের বাড়িতে।
নুরুন্নাহারের কথা শেষ না হতেই দরিদ্র ইসমাইল সিকদার (৭০) উপস্থিত হলেন। তিনি বলেন, ‘আমারও অভাবের সংসার। কত মাইনষের জমি আছে, হেইয়ার পরও সরকারি জমি পাইছে। আর আমার মাইয়ার কপালে কোনো জমি জোটে নাই।’
সাংবাদিকের খবর পেয়ে ছুটে আসে শান্ত। বেঁচে যাওয়ার কারণে সবাই তাকে ‘পাইলার মানুষ’ বলে ডাকে। শান্ত এখন স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার স্বপ্ন বড় চিকিৎসক হওয়ার। তবে সে পর্যন্ত যেতে অনেক টাকা লাগবে, তা ঠিকই বোঝে শান্ত।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. আবদুর রহিম ব্যাপারী বলেন, শান্তর পরিবারটি খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সরকারিভাবে তারা একখণ্ড জমি পেলে ঘর তুলে থাকতে পারত। চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, তিনি পরিবারটিকে একখণ্ড জমি বন্দোবস্ত পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৪ : ০৩ এএম, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭ রোববার
ডিএইচ