জাতীয়

পৌরসভায় বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে পরিষদ বাতিল: এলজিআরডি মন্ত্রী

দেশের পৌরসভাগুলো নিজেদের জনবলের ১২ মাসের বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে পরিষদ বাতিল করার লক্ষ্যে আইন সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

১৭ জানুয়ারি রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের’ উদ্যোগে আয়োজিত এক ন্যাশনাল পলিসি ডায়ালগে তিনি এ কথা জানান।

‘স্ট্রেংদেনিং দ্যা আরবান লোকাল গভর্নমেন্টস্ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ ন্যাশনাল পলিসি ডায়ালগে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.জাহাঙ্গীর আলম, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব) সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কতোয়াল প্রমুখ।

পলিসি ডায়ালগে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ প্রকল্পের পক্ষ থেকে দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ওপর তারা পৃথক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ গবেষণায় উঠে এসেছে, নিজস্ব রাজস্ব আয়ের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে এসব পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে। স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তাদের টার্গেট রাজস্বের মাত্র এক তৃতীয়াংশ আদায় করতে সক্ষম হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সর্বোচ্চ ৪৫ ভাগ রাজস্ব আদায় করতে পারছে। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিলেট সিটি করপোরেশনের। তারা টার্গেট রাজস্বের মাত্র ১১ ভাগ আদায় করতে পারছে। ট্যাক্স মূল্যায়ন ব্যবস্থারও বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর হোল্ডিং ট্যাক্স মূল্যায়নের বিধান থাকলেও এসব নগর সংস্থা সেসব কার্যক্রমে একেবারে পিছিয়ে রয়েছে।

আরও বলা হয়, এ সংস্থাগুলোর মারাত্মক জনবল সংকট বিরাজ করছে। জনবল কাঠামো অনুমোদন করতে দীর্ঘসময় নষ্ট হচ্ছে। এতে করে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অল্প জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া এসব নগর সেবা সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে শহরের দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে তারা নানাবিধ বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের গবেষণার মাধ্যমে নগর সেবা সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের পথ দেখানো হয়েছে। গবেষণার সুপারিশে ২০১৩ সালে প্রণীত ন্যাশনাল আরবান সেক্টর পলিসি পুনর্বিবেচনা করে অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলে। নিজেদের আয়ে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে এমনটাই আইনে বলা আছে। দেশের বেশিরভাগ পৌরসভা তাদের স্টাফদের বেতন দিতে পারে না উল্লে­খ করে মন্ত্রী বলেন, যে সব পৌরসভা তাদের জনবলের ১২ মাস পর্যন্ত বেতন দিতে পারবে না তাদের পরিষদ ভেঙে দেয়ার লক্ষ্যে পৌরসভার আইনকে সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ন্যাশনাল পলিসি ডায়ালগের সভাপতিত্ব করেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আশেকুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল মান্নান, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইয়োগেশ প্রাধানাং প্রমুখ।

উল্লে­খ্য, এ প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকার; ব্রিটেনের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা করছে। আর পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও আইপিই গ্লোবাল সহযোগিতা করেছে।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,১৭ ডিসেম্বর ২০২১

Share