Home / বিশেষ সংবাদ / সবার জন্য পেনশন
pension

সবার জন্য পেনশন

একটি জাতির সমাজ কতটা উন্নত তা বোঝা যায় শিশু ও প্রবীণদের প্রতি আচরণে। শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তা কেবল সাংস্কৃতিক প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা গভীরভাবে অর্থনৈতিকও। রাষ্ট্র কতটা দায়িত্ব নিয়ে আগামি দিনের জন্য সুনাগরিক তৈরি করতে শিশুদের শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিনোদনে বিনিয়োগ করে আর কতটা দায়িত্ব নিয়ে দেশের জন্য শ্রম দিয়ে যাওয়া অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের সুরক্ষায় কাজ করে সেটাই সেই রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নতির পরিচায়ক।

এভাবে শিশু ও প্রবীণদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে পারলেই সত্যিকার অর্থে কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে যাত্রা সুসংহত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে দেশে প্রবীণদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রের আরও বেশি দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি এখন জরুরি হয়ে পড়ছে।

কেননা,এখন তরুণপ্রধান দেশ হলেও দ্রুতই বাংলাদেশ প্রবীণপ্রধান দেশ হয়ে উঠবে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশ প্রবীণপ্রবণ সমাজে পদার্পণ করবে ২০২৯ সালে। আর সেখান থেকে প্রবীণপ্রধান সমাজে পরিণত হবে ২০৪৭ সালে। মাত্র ১৮ বছরে এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে বাংলাদেশ। দ্রুততম সময়ে এমন পরিবর্তন ঘটতে চলেছে বিশ্বে এমন দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

এ বাস্তবতায় সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী এবং অনানুষ্ঠানিক নানা খাতে কাজ করা ষাট বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন চালুর চিন্তা নিঃসন্দেহে একটি আশা জাগানিয়া পদক্ষেপ।

বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ্ব জনগণের জন্য একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন ও কর্র্তৃপক্ষ গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেছেন,‘প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব চিন্তা থেকেই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন। ষাটোর্ধ্ব সবাই যেন পেনশনের আওতায় আসেন সেজন্য একটি আইন প্রণয়নেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এমনকি যারা বিদেশে আছেন তারাও এ পেনশনের আওতায় আসবেন।’ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। উল্লেখ্য,গত ছয় বছর ধরেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে অর্থমন্ত্রীরা প্রতিবারই বাজেটে এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু হয় হয় করেও কাজের কাজ হচ্ছিল না।

অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মধ্য দিয়ে ‘সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা’ চালু হওয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট আভাস মিলল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুরুর দিকে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থাটি চালু হবে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে। অবশ্য তার আগেই প্রণয়ন করা হবে আইন। আর সরকার আগামি ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে এ পেনশনব্যবস্থা চালুর কথা ভাবছে।

স্মরণ করা যেতে পারে, আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে একবার বাজেট বক্তব্যে বলেছিলেন, দেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে এবং তাদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার, তা বেশির ভাগ প্রবীণেরই থাকে না। ফলে শেষ বয়সে তীব্র অর্থকষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করেন তারা। মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকার সময় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ ব্যাপারে একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছিল।

তখন এটি আর বেশি দূর এগোয়নি। পরে অর্থ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ আর এম নাজমুস সাকিবের নেতৃত্বে গঠিত একটি দল একটি কৌশলপত্র তৈরি করে। এখন ওই কৌশলপত্রের মূল বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছেন অর্থসচিব।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ছয় কোটির বেশি কর্মজীবীর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কাজ করেন বেসরকারি খাতে। বেসরকারি খাতের চাকরিতে নিয়োজিত ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী নাগরিকদের কথা মাথায় রেখেই আপাতত সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করা হবে। এমন চিন্তা করা হচ্ছে যে একটি প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য একটি অংশ ব্যয় করবে, কর্মীরা নিজেরা দেবেন একটি অংশ।

এ টাকা সরকার কোথাও খাটিয়ে যে আয় হবে, তা থেকে একটা অংশ দু’পক্ষের জমা করা অর্থের সঙ্গে যোগ করে পেনশন দেয়া হবে। এটি বাস্তবায়নের শুরুর দিকে কারিগরি সহায়তা নেয়া হবে বিশ্বব্যাংক থেকে। পেনশনভোগীদের স্মার্টকার্ড দেয়া হবে এবং ৫ থেকে ১০ % হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা রাখা হতে পারে।

বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সাড়ে ১১ লাখ সরকারি চাকরিজীবী পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন। এতে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। দেশে সবার জন্য একটি সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা প্রবর্তন বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের একটি অঙ্গীকার ছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যে নির্দেশনা দিয়েছেন সে অনুযায়ী এ বিষয়ক আইনটি দ্রুত প্রণয়ন করা দরকার। একইসঙ্গে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় রাখা দরকার।

বার্তা কক্ষ ,
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
এজি