নিজের পরিবারের কারো জন্য কোথাও কাউকে ফোন করে আবদার করিনি! অন্যায় আবদার অনেকে করেছেন বিগত সময়ে…বেশিরভাগই সার্জেন্ট গাড়ি আটকিয়েছে সম্পর্কিত!
ছোট ভাই, বন্ধু, বন্ধুর ভাই, ফেসবুক ফ্রেন্ডসহ কে নেই এই অনুরোধের তালিকায়! নিজের আত্মীয়রা অন্যায় আবদার করেননি বললেই চলে কারণ তারা আমাকে চেনেন!
সার্জেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে আমি প্রতিবারই রিপ্লাই দিতাম, ‘আমি বিব্রত হই’ প্রতি উত্তরে আপনি, আপনারা বলেছেন প্লিজ ভাই এবারের মত দেখেন, আর হবে না!
তারপর আমার প্রথম সুশীল বন্ধু যিনি ক্রমাগত নীতি নৈতিকতার আদর্শের কথা শুনিয়েছেন আমাকে বিগত কয়েক দিন, যিনি আমাদের ভুল ধরেছেন ফেসবুকেও….। আমি তাকে মনে করিয়ে দিলাম ‘এই আপনি আমাকে তিনবার সার্জেন্টকে ফোনে ধরিয়ে দিয়েছেন! দুই দুইবার আপনার গাড়ির চেসিস নং এর সাথে আপনার গাড়ির কাগজ মিল ছিলনা! ‘আমি লজ্জার মাথা খেয়ে দুইবার সার্জেন্টকে অনুরোধ করলাম! দুইবার ছাড়া পেয়ে গেলেন। আমি বললাম, কাগজপত্র সবকিছু ঠিক করে নিতে! আপনি করলেন না ঠিক। আমি লজ্জিত ও দুঃখিত আমার ভুলের জন্য!
তৃতীয়বার আপনি কি করলেন, আবারও সেইম ভুল করলেন!
সারারাত নাইট করে যখন বাসায় ঘুমুচ্ছি, একটা অচেনা নাম্বার থেকে আমার ব্যক্তিগত নাম্বারে বার বার ফোন! কে জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলো আমি অমুক স্যারের ড্রাইভার! কেন ফোন করেছেন, স্যার সার্জেন্ট ধরেছে! কি বিষয়? স্যার ওই সমস্যা! ওকে সার্জেন্টকে দিন! সার্জেন্ট ফোন ধরতেই বললাম, ভাল করে মামলা দিন….।
সকল সভ্যতা তো আপনিই জানেন, দেখলামও ফেসবুক কেন্দ্রিক খুব আইন মেনে চলেছেন! একজনের ব্যক্তিগত নাম্বার চালককে দেবার আগে অনুমতি নেবার ন্যূনতম ভদ্রতাটুকু যে আপনি লালন করেন না, সেই আপনি আমাকে সচেতন করতে কিভাবে আসেন!
একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে যে আপনি আইন ঘাড়ে পড়লে বেআইনি পথ খোঁজেন, সেই আপনি আমাকে আইন মানা শেখাচ্ছেন?এটাকে ইংরেজিতে সম্ভবত বলা হয় ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’!
বের হয়ে আসুন সেই প্রক্রিয়া থেকে। এরকম অজস্র উদাহরণ আমার সাড়ে পাঁচ বছরের চাকুরিতে জমা হয়েছে। আমার সিনিয়র স্যার ও জুনিয়রদের কাছে তা অগণিতই হবে।
আপনি ও আপনার মত যারা আমাকে আবদার করে বিব্রত করেছেন, করেন, সেটি আর করবেন না…। যতটুকু পেশাদারিত্ব নষ্ট করেছি আপনি ও আপনার জন্য সেটি আর করবো না… কথা দিলাম। ভুলেও আমার নামটুকু জড়িয়ে কারো কাছে আবদার করবেন না, আমি তা অস্বীকার করবো পুরোপুরিভাবে…।
আসুন নিরাপদ সড়ক প্রাপ্তির পথে আমরা আমাদের দ্বিমুখী আচরণ পাল্টে সঠিক পথে চলি…। সবাই আইনকে মান্য করি…। আইন মানলে আমি খুশি, আপনিও খুশি হোন…।
অনেক অনেক শুভকামনা, আগামীর সময়ে শুধু আইন মান্যকারীরাই সমাদৃত হবেন, কথা দিলাম।
বিঃদ্রঃ “ন্যায়সঙ্গত চাওয়ার জন্য আমাকে সবসময় পাশে পাবেন এই কথাটুকুও দিয়ে গেলাম”!
লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)
(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)