Home / জাতীয় / রাজনীতি / ‘পায়ে হেঁটে ৫০০ টাকার টিউশনি করেছি’- আজ উনি এমপি !
‘পায়ে হেঁটে ৫০০ টাকার টিউশনি করেছি’- আজ উনি এমপি !

‘পায়ে হেঁটে ৫০০ টাকার টিউশনি করেছি’- আজ উনি এমপি !

জীবনে অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজ সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে চার বছর পূর্ণ করেছেন আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। এই পর্যায়ে আসতে অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছে এই সংগ্রামী নারীকে।

নিজের সংগ্রামী জীবনের অনেক অজানা কথাগুলো সংসদ লাইব্রেরীতে একান্ত আলাপ-চারিতায় তুলে ধরেন তিনি।

স্কুল জীবনে বাবা মানিক চৌধুরীকে হারিয়ে টানাটানির সংসারে পড়ালেখাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল তার। সেখান থেকে এ পর্যন্ত আসার পর টেনে তুলে সংরক্ষিত আসনে বানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য আওয়ামী লীগ তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণ স্বীকার করেছেন তিনি।

যখন সবে মাত্র সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ওঠেন তখন বাবাকে হারান কেয়া চৌধুরী। নিজের বেড়ে ওঠার গল্প বলতে গিয়ে এই সংসদ সদস্য বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি আওয়ামী লীগের কাছে একটু ঋণী। আমার আব্বা যখন মারা গেলেন তখন আমি স্কুলে পড়ি। মাত্র সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে মাত্র ওঠেছি।

‘আমার আব্বা আমাদের জন্য পয়সা কড়ি কিছু রেখে যেতে পারেননি। আমি যখন মেট্রিক পাস করলাম তখন আর্থিক অবস্থাটা এমন পর্যায়ে ছিল আমাদের চলা কঠিন ছিল। বৈশাখ মাসে আমাদের যে ধান বিক্রি হতো সেই টাকা দিয়ে ৬ থেকে ৭ মাস চলার পর আবার টানাটানি শুরু হয়ে যেত। আব্বা মারা যাওয়ার পর অভাব আরও প্রকট হয়ে ওঠে।’

কেয়া চৌধুরী বলেন, দৈন্যতার মধ্যেই আমি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিই এবং পাস করি। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম আমি অনার্স পড়বো। অনার্সের জন্য ইডেন কলেজে চান্স পাই দর্শনে। চান্স পাওয়ার পর থাকার জায়গা ছিল না। এ নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ি, হলেও সিট পাইনি। সেসময় ইডেনের বিএনপি নেত্রীরা আমাকে খুব অসহযোগিতা করে, তাদের কথায় চলতে হতো, যা কখনও করিনি।

‘এরপর আর পেরে উঠছিলাম না। কিন্তু আম্মা কোনোভাবেই পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে চলে গেলাম বাড়িতে। কিছুদিন পর আবার ঢাকায় আসি

এবং লালমাটিয়া কলেজে ভর্তি হলাম। ওখানেও একই সমস্যা, থাকার জায়গা নেই। প্রথম দিকে মিরপুর এক ভাইয়ের বাসায় থাকতাম।’

তিনি বলেন, আমার এখনও মনে পড়ে অনেক পথ হেঁটে ৫০০ টাকার একটি টিউশনি করতে যেতাম, একটা ছোট্ট বাচ্চাকে পড়াতাম। পায়ে হেঁটে যেতাম টাকা বাঁচানোর জন্য। আমি কলেজ থেকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে দিয়ে প্রায়ই যেতাম এবং ওখানে সময় কাটাতাম। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে কার্জন চাচা নামে একজন থাকতেন। উনি নেত্রীর খুব কাছের মানুষ।

‘আমি যখন যেতাম তখন হয়তো উনি নামাজ পড়ে ঢুকতেন, আমিও ঢুকতাম। প্রায়ই যেতাম তো- একদিন কী কারণে যেন তিনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন-তুমি প্রায়ই আস কই থাক?’

‘আমি বললাম, চাচা আমি হোস্টেলে থাকি। বললেন-বাড়ি কই, আমি বললাম হবিগঞ্জ। তখন উনি বললেন, হবিগঞ্জের মানিক চৌধুরীকে চেনো? তার কথা শোনে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। আমি বললাম, আমি তো উনারই মেয়ে,’ বলেন কেয়া চৌধুরী।

কার্জন চাচার আব্বার কথা মনে আছে কারণ খন্দকার মোস্তাক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আব্বাকে সাড়ে ৪ বছর ডিটেনশনে রাখা হয়েছিল।

সেই কথাগুলো কার্জন চাচার মনে আছে। আব্বার কথা জানতে পেরে চাচা বলেন, বেটি তুমি আগে কইবা না! দ্রুত নেত্রীর সঙ্গে দেখা করো। আমি তখন মাত্র ঢাকায় আসছি রাস্তা-ঘাটও ভালো করে চিনি না।

তখন উনি একটা ফরম দিয়ে বললেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব

তা পূরণ করে দাও। আমার মনে পড়ে সেদিন বৃহস্পতিবার ছিল, আমি ফরম পূরণ করে দিয়ে আসি। যেহেতু আমাদের ঢাকায় কোনো ঠিকানা নেই তাই আমার ছোট মামা ইস্কাটনে থাকেন সেই ঠিকানা দিলাম আর লালমাটিয়ার অস্থায়ী ঠিকানা দিলাম। সপ্তাহখানেক পর মামার বাসা থেকে ফোন এলো- তোমার একটা চিঠি এসেছে। এখান থেকে প্রতিমাসে তুমি একহাজার করে টাকা পাবা।

হবিগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের এই নারী এমপি বলেন, টাকা পাওয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। যেখানে আমি ৫০০ টাকার জন্য কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে টিউশনি করছি সেখানে কিছু না করেই ১ হাজার টাকা পাবো-এটা ছিল কল্পনার বাইরে।

‘এর ৪-৫ মাস পরে ২ হাজার করে দেওয়া হয়। তখন আমার কঠিন সময় ছিল। জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তখন সার্পোট দিয়েছেন সেই সাপোর্টের জন্য আজ আমি এই জায়গায় এসেছি।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর হবিগঞ্জ-সিলেট জেলার সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন কেয়া চৌধুরী।

কেয়া চৌধুরীর ভাষায়, যেদিন আমি শপথ নিয়েছি সেদিন বারবার ফেলে আসা কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল। আর ভাবছিলাম নেত্রী আমাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এলেন!

‘আর সেদিন থেকেই ঠিক করেছি- যে আমার স্বপ্নটা হারিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে নতুন করে তা ফিরে পেয়েছি। তাই আমার সমস্ত চেষ্টা, মেধা, প্রজ্ঞা দিয়ে নেত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছি। তার কথাগুলো তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো।’

আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর বাবা মানিক চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মানিক চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে প্রথম কৃষি পদক নিয়েছিলেন।

কেয়া চৌধুরী বলেন, আব্বা সব সময় বলতেন- রাজনীতিবিদদের রাজনীতির জন্য টাকা লাগে না। তাদের বিনিয়োগ হচ্ছে ওয়াদা।

‘পাবলিকের কাছে সে (রাজনৈতিক নেতা) যা বলছে এটা হলো তার বিনিয়োগ। যে নেতা বা কর্মী জনগণের কাছে যে ওয়াদা করছে সেটা সে পরিপূর্ণ করবে এটাই রাজনীতিবিদদের বড় বিনিয়োগ। আর তা যদি নাও পারে তবু চেষ্টা করবে এটা করলে জনগণ তার প্রতি সমর্থন বাড়াবে। তবে এটা হতে হবে সততার মধ্য দিয়ে। বাবার সেসব কথা শুনতাম আর এখন তৃণমূলে কাজ করি।’

নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন-স্বপ্ন দেখতে হবে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। কাজেই আমিও স্বপ্ন দেখি সরাসরি জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে কাজ করতে। হবিগঞ্জের বাহুবল-নবীগঞ্জে দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগ থেকে কোনো সংসদ সদস্য নেই।

‘যে কারণে তৃণমূল আওয়ামী লীগের মধ্যে একটু অসন্তোষও রয়েছে। তারা চান আগামীতে আওয়ামী লীগ থেকেই কাউকে দেওয়া হোক,’ যোগ করেন কেয়া চৌধুরী।

(বাংলানিউজ)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪: ০০ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮,শুক্রবার
এএস