Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে মতলব উত্তরে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসীর মানববন্ধন
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে মতলবে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসীর মানববন্ধন

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে মতলব উত্তরে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসীর মানববন্ধন

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের চান্দ্রাকান্দি এলাকায় গ্রিন ক্লাব নামে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের চান্দ্রাকান্দি বেরী বাঁধসড়ক পাশে লাগানো ৫ শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

গত ৩১ জুলাই (সোমবার) দুপুরে সেচ প্রকল্পের এক কর্মকর্তার তত্ত্বাবাবধানে বিভিন্ন জাতের ফলদ ও ঔষধি গাছ প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় লাগানো এই গাছ কেটে ফেলা হয়। আর এ ৫ শতাধিক ফলদ ঔষধি গাছ কাটার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন।

এছাড়া বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
উপজেলার চাঁন্দ্রাকান্দি গ্রামে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের উপরে প্রায় পাঁচ শতাধিক ফলদ-ঔষধি গাছ কাটার প্রতিবাদে বুধবার (২ আগস্ট) দুপুরে কালীপুর পাম্প হাউজ সংলগ্ন বেরীবাঁধের উপর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন, স্বদেশ মৃত্তিকা, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, উপকূল বাঁচাও আন্দোলন (উবা), গ্রীণক্লাব চাঁন্দ্রাকান্দি, বড় কিনাচক বন্ধুসেবা’সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এতে ঢাকার ও স্থানীয় পরিবেশ বানন্ধব বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। তারা অবিলম্বে পরিবেশ বিনষ্টকারী গাছকাটার অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সরকারের প্রতি।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচিতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরা অংশ গ্রহণ করেন। মানববন্ধন কর্মসুচি শেষে তারা মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কালিপুর পাম্পের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের কুশপত্তিকায় অগ্নিসংযোগ করে।

এসময় বিক্ষোভকারীরা মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কালিপুর পাম্পের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নিজের মনগড়া গাছ কাটার অভিযোগ আনেন।

তারা বলেন, আতিকুর রহমান অবৈধভাবে আমাদের রোপনকৃত পেয়ারা, লেবু, পেঁপে, আম, কাঁঠাল, আমড়া এবং ঔষধিগাছসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ কর্তন করেছে। যা কর্তৃপক্ষের কোন নিদের্শনা নেই। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

বিক্ষোভকারীরা আরো বলেন, ‘যেখানে সরকার বনায়ন ও পরিবেশ বাঁচাতে গাছ রোপনের পরামর্শ দিচ্ছে। সেখানে সরকারি অসাধু কর্মকতারা কিভাবে নির্বিচারে গাছগুলো কেটে ফেললো। অথচ মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কালীপুর থেকে বাংলা বাজার পর্যন্ত কাঠ গাছ লাগিয়ে বাঁধের ক্ষতি সাধন করছে। সেখানে আমরা ঔষধি ও ফলদ গাছ লাগিয়েছি যাতে এলাকার শিশুরা দেশি ফলের চাহিদা মেটাতে পারে।’

আমরা এলাকাবাসী মনে করছি আমাদের গাছগুলো কাটা পিছনে কোন মহলের হাত রয়েছে এবং পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ফল ধরা এ গাছগুলো কাটা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এবং যতক্ষণ এর কোন সুরাহা না হবে ততক্ষণ ঘরে ফিরে যাবো না। ওই কর্মকর্তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের দাবি জানান এলাকাবাসী

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচীতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরা অংশ গ্রহন করেন।

গ্রিন ক্লাবের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন উপস্থাপনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ রানা, অরুনোদয়ের তরুন দলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবু,সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম টিটু, মতলব ডিগ্রি কলেজের সাবেক জিএস রহমত উল্যাহ চৌধুরী, নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোঃ আল-আমিন পারভেজ, স্বদেশ মৃত্তিকার মোঃ আকবর হোসেন, এসইএল মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোঃ সালাউদ্দিন, বিশিষ্ট সংগঠক মাঈন উদ্দিন চৌধুরী, গ্রিন ক্লাবের শিক্ষা বিসয়ক সম্পাদক হাফিজুর রহমান,সিজিএম এর ম্যানেজার মোঃ গিয়াস উদ্দিন, সাদুল্যাপুর ইউপি সদস্য মোঃ দুলাল হোসেন, গ্রীন ক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ রাসেল মুন্সী, সদস্য নুরুল ইসলাম কাউছারসহ বিভিন্ন সংগঠনের সেতৃবৃন্দ সামবেশে বক্তব্য রাখেন।
গ্রিন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে ওই এলাকার সন্তান প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন ১০০ ছেলেমেয়েকে নিয়ে এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই বাঁধের পতিত জায়গায় তারা বিভিন্ন ধরনের ফল লেবু, পেয়ারা, পেঁপে, লাউ, শশা, বিভিন্ন ঔষধি গাছ এবং আম-কাঁঠাল জাতীয় গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করেন। তখন ওই সময়ের স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে তারা মৌখিক অনুমতি পেয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ তখন সানন্দে তাদের এ প্রস্তÍাবে সায় দিয়েছে। তখন থেকেই ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে এ গাছ রোপণ করা শুরু করেন তারা। হঠাৎ করেই গত সোমবার ওই এলাকার জামালপুর থেকে চান্দ্রাকান্দি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার জায়গায় রোপণকৃত চারাগাছ, ফলসহ গাছগুলো নিমেষেই তারা কেটে ফেলেন। কবির হোসেন আরও বলেন, এই দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এবং বাইরে তাদের গাছ ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানায় বড় কিছু গাছ ছিল। অজ্ঞাত কারণে কর্তৃপক্ষ সেই গাছগুলো কাটেনি।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় এলাকার একটি সামাজিক সংগঠন গ্রীন ক্লাব চাঁন্দ্রাকান্দি কর্তৃক প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে গত ২০১৫ সালে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করে। গত সোমবার ওই গাছগুলো বিনা নোটিশে উপ-সহকারি প্রকৌশলী আতিকুর রহমান তার দলবল নিয়ে কেটে ফেলে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার এলাকাবাসী মতলব উত্তর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এদিকে উপ-সহকারি প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য খোঁজ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার চার কিলোমিটার গাছ কাটার ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করছে। এখানে কী ধরনের গাছ কাটা হবে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলেছে, টেন্ডার হয়েছে, গাছ কাটতে হবে। তাই গাছ কাটা হচ্ছে।
এ ঘটনায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবির গত মঙ্গলবার (১ আগস্ট) মতলব উত্তর থানায় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে থানা থেকে এসআই সুমন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

প্রতিবেদক- খান মোহাম্মদ কামাল
: আপডেট, বাংলাদেশ ১০: ২০ পিএম, ২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ

Leave a Reply