Home / সাক্ষাৎকার / পহেলা বৈশাখ এবং পান্তা-ইলিশ : সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি যেন না হয়

পহেলা বৈশাখ এবং পান্তা-ইলিশ : সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি যেন না হয়

‎Friday, ‎April ‎17, ‎2015   9:28:35 PM

বাঙালি মানেই সংস্কৃতিমনা। বিভিন্ন উৎসব কে কিভাবে বরণ করে নিতে হয় এটা মনে হয় বাঙালিদের কাছ থেকে অনেকেরই শেখার আছে। প্রতিটা ঈদে আমি যখন নতুন জামা পড়ি কিংবা ফিরণি পায়েশ খাই তখন একটি বারের জন্য হলেও মনে পড়ে ওইসব পথশিশুদের কথা যারা হয়তো আজো ময়লা ছেড়া জামা পরে আছে কিংবা একটু ভাল খাবারের আশায় মানুষের দোয়ারে দোয়ারে ধর্ণা দিচ্ছে। শীতের সময় যখন দামী ব্লেজার কনভার্স পরে বাইরে হাঁটাহাঁটি করি তখন ভাবি রেললাইনের পাশে শীতে জড়ো হয়ে শুয়ে থাকা ওই বৃদ্ধটির কথা। ঝড় বন্যা সোনামির সময় যখন অট্টালিকায় শুয়ে থাকি তখন ভাবি পানির উপর ভাসমান ওইসব বাস্তুহারা মানুষগুলোর কথা। বাড়িতে যেদিন ভাল কিছু রান্না হয় সেদিন চিন্তা করি পাশের বাড়ির ওরা হয়তো আজ ঝাল নুন ডলে ভাত খাচ্ছে , যাই একবাটি তরকারী দিয়ে আসি।

প্রকৃত পক্ষে এটাই হলো বাঙালির আসল সংস্কৃতি। আজ আমরা এইসব সংস্কৃতি ভুলে পহেলা বৈশাখে কিছু নব্য শহুরে বাঙালি কর্তৃক সৃষ্ট অপসংস্কৃতিকে সংস্কৃতি হিসেবে পালন করছি। পহেলা বৈশাখ এবং পান্তা-ইলিশ, সংস্কৃতির নামে কোথায় কোথায়ও জলে অপসংস্কৃতি।

কেউ ছেঁড়া জামা পরে অভাবে আর কেউ পরে ভাবে। কেউ পান্তা ভাত খাই ক্ষুধা জ্বালায় আর কেউ খাই বিলাসিতায়। পুঁজিপতিদের সাথে আমাদের পার্থক্য এখানেই। যে ইলিশের দাম কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থাকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তার দাম বেড়ে ১৫০০ থেকে ২০০০ এ গিয়ে দাঁড়াই। এর জন্য দায়ী কারা ?

খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে মানুষটা নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরছে সে হয়তো ১২০ টাকা পাচ্ছে আর বাকী টাকা সব পুঁজিপতিদের পকেটে। এসব হিসেব নাহয় বাদই দিলাম । আসলে আমরা যে পান্তা-ইলিশ দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করছি এটা কি আসলেই যৌক্তিক?

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ শহরের অলিগলি, রাজপথ, পার্ক থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেলে বিক্রি হচ্ছে পান্তা-ইলিশ। অভিজাত হোটেলগুলোতে এদিন পান্তা-ইলিশ খাওয়া এখন একশ্রেণীর মানুষের বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে।এটা দুর্মূল্যও বটে—যা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু আবহমানকাল থেকেই পহেলা বৈশাখের সঙ্গে এই পান্তা-ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই।

এসব সংস্কৃতি মূলত বাঙালীর আসল সংস্কৃতি থেকে হাজার মাইল দূরে। বৈশাখের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যেটা বুঝা যায় সেটা হলো পহেলা বৈশাখের উৎসব মূলত খেটে খাওয়া গরীব চাষাদের জন্য। এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে লেখাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইনা। আশা করি এসব ইতিহাস কারো অজানা নয়। আজ শহুরে নব্য বাঙালীরা এসব উৎসব পালন করে গরীবের পেটে লাথি মারছে কারন দাম বৃদ্ধির কারনে ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও তারা কিনতে পারছেনা ছোট্ট একটা ইলিশ ।

পরিশেষে বলতে চাই যে উৎসব শ্রেণি বৈষম্য সৃষ্টি করে সে উৎসব চাইনা আমি। প্রতিটা যৌক্তিক কথারও বিপক্ষে ইচ্ছা করলে যুক্তি খাটানো যায়। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। কেউ খাবে আর কেউ খাবেনা এটা মেনে নিতে সত্যিই কষ্ট হয়। যার সামর্থ আছে সে খাবে আর যার সামর্থ নাই সে খাবেনা। এটাই হয়তো আমাদের সংস্কৃতি। তবে এই উতসবে সকলের উপস্থিতি থাকলে হয়তো ভাল হইতো আরেকটু। মঙ্গল শোভাযাত্রায় হয়তো অনেকেই যাবে কিন্তু সবার কপালে হয়তো পান্তা-ইলিশ জুটবেনা।
ভাল থাকুক সবাই, ভাল থাকুক বাঙালিরা, ভাল থাকুক ছিন্নমূল পথশিশুরা।

 

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015

নিয়মিত আপনার ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : https://www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes