চাঁদপুর

পরিবার থাকলেও অভিভাবকহীন চাঁদপুর নৌ-থানা

২০ জনের একটি পরিবার থাকলেও অভিভাবকহীন! এমনই অবস্থা চাঁদপুর নৌ থানার। কারণ, থানা চলছে। পুলিশও রয়েছে। শুধু নেই পুলিশের অফিসার ইন চার্জ। মাঝে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে একজন অফিসার ইনচার্জ আসলেও অভিযান শেষে তিনিও চলে গেছেন আগের দায়িত্বরত স্থান মুন্সিগঞ্জে। ফলে প্রায় ৬মাসের কাছাকাছি কার্যত ওসি ছাড়াই চলছে চাঁদপুর নৌ থানার কার্যক্রম। এতে করে চাঁদপুরে নৌ-পথে প্রত্যাশা অনুযায়ী পুলিশের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

পুলিশ সদস্যরা জানান, প্রথমত এলাকার নাগরিকদের সঙ্গে জনসংযোগ রক্ষার একটা বড় দায়িত্ব থাকে ওসি’র। কোন অফিসার কোন কাজ করবেন, তার দায়িত্ব ভাগ করে দেন ওসি। থানা এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ বাহিনী নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজের নেতৃত্ব দেন ওসি-ই।

জানা যায়, নদীমাতৃক বাংলাদেশের ‘নদীতে রয়েছে অফুরান্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। আর এদেশে এখনো ৪০ শতাংশ মালামাল পরিবহন এবং যাত্রী নৌ পথে চলাচল করে। ফল নদী পথে চোরাচালান, মাদক পাচার, চাঁদাবাজি, দস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধ ঘটে থাকে। এসব কারণে নৌ পথের নিরাপত্তা, নদীর সম্পদ রক্ষাসহ নদীপথ কেন্দ্রীক অপরাধ নিয়ন্ত্রন ও নদী পথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ পুলিশ গঠনের উদ্যোগ নেয় সরকার। বর্তমান সরকার নৌ পথের নিরাপত্তায় ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর থেকে নৌ পুলিশের কার্যক্রম শুরু করে। চাঁদপুর অঞ্চলে ১২টি নৌ ফাঁড়ি ও একটি নৌ থানা গঠন করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর নৌ থানা গঠনের পর থেকে একজন অফিসার ইনচার্জ বা ওসি’র নেতৃত্বে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ নৌ-পুলিশ। এই নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন মো. জহিরুল হক। মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে তাকে বদলি করে ভারপ্রাপ্ত অভিসার ইনচার্জ হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয় মুন্সীগঞ্জ জেলার মুক্তারপুর নৌ থানার মো. কবির হোসেন খানকে।

অত্যন্ত চৌকস এবং কর্মদক্ষ এই কর্মকতা একই সাথে চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর নৌ পুলিশ স্টেশনের দায়িত্বে ছিলেন। মা ইলিশ রক্ষা অভিযান শেষে তিনি তার আগের দায়িত্বে ফিরে যান। মূলত এরপর থেকে এবেবারেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বন্দরস্থ এই নৌ থানাটি।

চাঁদপুর নৌ থানা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে অভিসার ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করছেন সাব-ইন্সপেক্টর মো. জহিরুল হক। বর্তমানে এই থানায় ২ জন এসআই, ৩জন এএসআই ও ১৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কার্যক্রম। এছাড়াও জনবল সঙ্কটের পাশাপাশি তাদের রয়েছে নৌ-পথকে শাসন করার অধুনিক জলযান-সরঞ্জামাদি। রাতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া খুব একটা নদীতে নামেন না পুলিশরা। ফলে এ সুযোগ নিয়ে সম্প্রতিক সময়ে নদীতে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে চলেছে।

নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কামরুজ্জামান বলেন, চাঁদপুর নৌ অঞ্চলে ১০টি ফাড়ি ও একটি থানা রয়েছে। এই একমাত্র থানাটি হলো চাঁদপুর নৌ থানা। তাই এই নৌ-থানাটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখানে জন্য একজন দক্ষ অফিসার খুঁজছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই একজন দক্ষ অফিসারকে এই থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হবে।

সম্প্রতি চাঁদপুর নৌ-রুটে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাবার বিষয়ে তিনি বলেন, ডাকাতরা সাধারণত চতুর প্রকৃতির হয়। শীতের সময় ঘন কুয়াশার কারনে ডাকাতরা সুযোগ পেয়ে থেকে। প্রতিটি যাত্রীবাহী লঞ্চে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োজিত করার বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছি। আমরা এর আগে ডাকাডির ঘটনায় একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। সকলের ডাটা আমাদের কাছে চলে এসেছে। আমরা খুব সহসাই ডাকাতির সাথে সম্পৃক্তকারীদের সকলকে আটক করতে সক্ষম হবো।

উল্লেখ্য, গত ১ম সাসে চাঁদপুর নৌ সীমানায় ৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে নারায়নগঞ্জ থেকে মতলবের মধ্যে চলাচলকারী দু’টি এবং চাঁদপুর শরিয়তপুর সুরেশ্বর নৌ-রুটে চলচলরত এটি লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,২২ ডিসেম্বর ২০২০

Share