চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশু মৃতের মিছিল কিছুতেই যেনো থামছে না। বরং দিনে দিনে মৃত্যুর এই মিছিল বড় হতে আরো বড় চলেছে। চলতি বছরে সর্বশেষ গত আড়াই মাসে এই উপজেলাতেই পৃথক ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সর্বমোট ২১ শিশুর-কিশোরের।
যার প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনাই ঘটেছে বাড়ির পাশের পুকুর, ডোবা অথবা খালের পানিতে। তবে অপ্রত্যাশিত এই মৃত্যুর ঘটনায় শিশুদের পরিবার উদ্বিঘœ হলেও উল্টে পরিবারের লোকদেরই অসাবধানতাকেই দায়ী করছে সচেতন মহল। মূলত প্রতিটি পরিবারের লোকদের শিশুদের প্রতি বেখয়ালেই কারণেই দিনে দিনে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।
চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদের সূত্রে জানা যায়, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ৬ আগষ্ট উপজেলার কালচো ইউনিয়নের রামপুর বাজার গ্রামে।
ওই গ্রামের এলাকার মজুমদার বাড়ির জুলহাস মজুমদারের ছেলে শিহাব (২) বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। এর আগে ৩০ জুলাই বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সোনাইমুড়ী গ্রামে দেলোয়ার সর্দারের মেয়ে সিনথিয়া (৬) ও বিল্লাল হোসেনের মেয়ে মারিয়া (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। ২২ জুূলাই সদর ইউনিয়নের আকিব (৪) ও বোনের মেয়ে তানিশা আক্তার (৫) পানিতে ডুবে মারা যায়। ১৯ জুলাই কালচো দক্ষিণ ইউনিয়নের হালিমা (২), একই দিনে পৌরসভার এনায়েতপুর গ্রামের সৌরভ (৪), ভাতিজা আরাফাত (৪), ১৮ জুলাই মৃত্যুহয় উপজেলার হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নে মানছুরা নামের এক শিশুর মৃত্যু বরণ করে।
এছাড়াও ১১ জুলাই হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের রাইসা আক্তার (১৮ মাস), ১৫ জুলাই কালচো উত্তর ইউনিয়নের জুয়েল (১৭ মাস), ১০ জুলাই হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের সিয়াম (৬), ১ জুলাই বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের জান্নাত (৫), ২০ জুন হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ইয়াছিন (আড়াই মাস), ১৮ জুন বাকিলা ইউনিয়নের হালিমা (৬), ৮ জুন বলাখাল ইউনিয়নের ইমাম (দেড় বছর), ৬ জুন গন্তর্বপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের জাহিদ (১)। এছাড়াও ৪ জুন পৌর এলাকার একই সাথে চার কিশোরের মৃত্যু হয়। মৃতরা হলো, রাহুল (১৩) ও শামীম (১১), রায়হান (১১) ও লিয়ন (১২)।
উল্লেখিত ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে করুন ও আলোচিত ঘটনা হলো উপজেলার রান্ধুনীমুড়া গ্রামে। গত ৪জুন দুপুরে স্থানীয় বৈষ্ণব বাড়ির পুকুরে গোসল করতে গিয়ে একই সাথে চার কিশোরের মৃত্যু হয়। তবে ওই দিন তারা গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হলেও একদিন পরে অর্থাৎ ৫ জুন সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃতরা হলো, হাজীগঞ্জ পৌরসভার ১১নম্বর ওয়ার্ড রান্ধুনীমুড়া গ্রামের ওয়াসিমের দুই ছেলে রাহুল (১৩) ও শামীম (১১), একই বাড়ির আহসান হাবিবের ছেলে আরাফাত হোসেন রায়হান (১১) এবং শাহরাস্তি উপজেলার বোচ্চা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে লিয়ন (১২)।
ওই বাড়ির ইব্রাহিম জানান, সোমবার দুপুরে তারা চারজন পুকুরে গোসল করতে গিয়ে আর ফেরেনি। অনেক খুঁজেও তাদের না পেয়ে সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয়। পরে মঙ্গলবার ভোরে পুকুরের পানিতে নিখোঁজদের লাস ভেসে উঠে।
এ দিকে পানিতে ডুরে শিশু-কিশোর মৃত্যুর ঘটনায় তাদের পরিবারের লোকজনকে আরো বেশী সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সচেতন মহল। তাদের অভিমত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনাই ঘটছে তাদের পরিবারের লোকদের অগোচরে। প্রতিটি বাবা মা কিংবা তাদের পরিবার যদি শিশুদের খেলা-দুলা সময় একটু চোখে চোখে রাখেন তবে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভব।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur