আমার অপরাধ আসলে অনেক। বছরের বারো মাসই সেটা টের পাই। তবে পদে পদে টের পাই ফেব্রুয়ারি আসলে। “বাংলা ভাষার যে দুরবস্থা তৈরি হয়েছে, আপনি কি মনে করেন না আপনার কাজে অপ্রমিত ভাষার ব্যবহারের কারণে এটা হয়েছে?” এইগুলার উত্তরে বহু যুক্তি দেখাইছি। এখন আর এইসব বিতর্কে যাই না। কারণ আমাদের যুক্তির উত্তরে তাদের কাছ থেকে কোনো যুক্তি পাই নাই, গাজোয়ারি কথা ছাড়া।
আজকেও একজন সজ্জন সাংবাদিক এই বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য ফোন দিয়েছেন। বিনয়ের সাথে মানা করেছি। বলেছি, আমাদের যুক্তিগুলা খণ্ডাইয়া নতুন কিছু যদি উনারা বলেন, তাহলে আবার কথা বলবো। নাহলে, নো মোর ইন্টারভিউ।
আরো অনেক কথা হয়েছে তার সঙ্গে। তারপর ফোন রেখে ভাবলাম, আমার আসলে অপরাধ অনেক। আমি অভিনয় শেষ করে দিয়েছি, কারণ আমি কারো কারো ভাষায়, রাস্তাঘাট থেকে মানুষ ধরে অভিনেতা বানিয়েছি। যে অভিনয় শম্ভু মিত্র-উৎপল দত্তরা করতেন, “তার কি ছিরি বানিয়েছি আমি”! কি সুন্দর পজ দিয়ে দিয়ে, নাটকীয় উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে সংলাপ বলা হতো আগে, আজকে কি সব ন্যাচারাল অ্যাক্টিংয়ের নামে সব শেষ করে দিলাম! তারেক মাসুদ বেশি বুঝতেন বলেই লিখছিলেন, আমি নাকি কলাগাছ দিয়াও ভালো অভিনয় করাতে পারি। বাকোয়াজ কথা।
চলচ্চিত্রের যে মহত্তম চেহারা পুরাতনপন্থীরা খুঁজে পেতেন বা পান সত্যজিৎ-মৃনাল-বা আরো আরোতে, সেটার কি রকম অধঃপতন হলো “এই ফারুকীর হাতে”!
আগে কি রকম আদর্শ নায়ক চরিত্র ছিল। আর “এই ফারুকীর” নায়কেরা-নায়িকারা মিথ্যা বলে, সঙ্গীর সাথে প্রতারণা করে। এই নায়কেরা-নায়িকারা দুর্বল, ভীরু! এদের কাছ থেকে জাতি কি শিখবে?
কি সুন্দর করে প্রেম করতেন উত্তম-সুচিত্রারা, এই ফারুকী সেই পবিত্র প্রেমের তেরোটা বাজিয়ে দিলেন “লিটনের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে”!
কি সুন্দর ছিল আমাদের সংস্কৃতি জগৎ। এই “ফারুকী” আইসা বলতে শুরু করল, সংস্কৃতি কর্মীদের ইসলাম-বিদ্বেষ আর ধর্মীয় রাজনীতিওয়ালাদের পহেলা বৈশাখ বিদ্বেষ আদতে “একই বৃন্তের দুই ফুল”! যে লোক এই কথা বলে, সে কি করে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সদস্য হইতে পারে!! যদিও আমারও আগে হুমায়ূন আহমেদ ইসলাম ধর্ম নিয়া আমাদের সংস্কৃতি বিভাগের অ্যালার্জি বিষয়ক কথা বিস্তারিত বলে গেছেন।
এই রকম অনেক অপরাধ আমার থাকলেও, আসল অপরাধ বোধ হয় একটাই। কেন আমি নিজেই গাইতে চাইলাম আমার ভাষায়, আমার সুরের গান? কেন আমি তোতা পাখি হইলাম না? কেন আমি অচলায়তনে ঝামেলা পাকাইলাম? কেন আমি নতুন করে ভাবতে গেলাম? আমরা কেন ভাববো, আমরা তো অনুসরণ করব!
যেন সত্যজিৎ রায়কে পছন্দ করলে, সত্যজিতের ফটোকপিই হইতে হবে। তা না হলে সত্যজিৎ অবমাননা (পড়ুন ধর্ম অবমাননা) হবে। যেন নদীয়া শান্তিপুরের ভাষার বাইরে গেলে বাঙলা আর বাঙলা থাকে নাকি? যেন উত্তম-সুচিত্রার বাইরে গিয়ে নায়ক নায়িকার প্রেম দেখালে উত্তম-সুচিত্রার অপমান হবে। যেন নিজের সুর, নিজের ভাষা, নিজের ঢং- এ বড় ঔদ্ধত্য। বাঙাল দেশের চন্ডাল সন্তানের কি তা মানায়?
কিন্তু এই বাংলার চন্ডাল সন্তান যে চিরকালই দুর্বিনীত, কোনো বাঁধন “সে মাইনতো ন”!
(ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)
(জুম বাংলা)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ১৫ এ.এম, ০৬ ফেব্রুয়ারি২০১৮,মঙ্গলবার ।
এএস.
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur