Home / জাতীয় / অর্থনীতি / ঈদের আগে ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট
Tk
প্রতীকী ছবি

ঈদের আগে ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট

ঈদের কেনাকাটাকে সামনে রেখে আগের তুলনায় হঠাৎ নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঈদের কেনাকাটা করছেন।

এতে ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থের ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। সে কারণে উচ্চ সুদে ধার করছে ব্যাংকগুলো। নগদ টাকার সরবরাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ধারের মাধ্যমে নগদ টাকার ঘাটতি মেটানোর সুযোগ দিতে আন্তঃব্যাংক মানি মার্কেট প্ল্যাটফরমগুলো ২৯ ও ৩০ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার কলমানি বাজারে ব্যাংকগুলোর মধ্যে লেনদেনের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ১০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার কলমানি বাজারে একদিনে লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহের শেষদিনে সুদের গড় হার ছিল ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৩ দশমিক শূন্য শতাংশ এবং সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সপ্তাহের শেষদিনে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের ৩০ মার্চ কলমানি বাজারে গড় সুদের হার ছিল ২ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদের হার ছিল ১ দশমিক শূন্য শতাংশ। সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর ওইদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ মানি মার্কেট ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বামডা) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মুদ্রাবাজারে ব্যাংক এশিয়া, আইএফআইসি, উত্তরা ও পূবালী ব্যাংক ধারদাতা ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে। আর বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক ধার করছে। আর এবি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ঢাকা, এনআরবিসি, মেঘনা, সাউথ বাংলা, মিডল্যান্ডসহ নতুন-পুরোনো কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য চাহিদা মেটাতে বেশি ধার করছে।

জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরফান আলী বলেন, করোনার শুরু থেকে সতর্ক অবস্থানে ছিলাম। পর্যাপ্ত তারল্য আছে। সে কারণে ধার দিতে পারছি। তবে সার্বিকভাবে কিছুটা তারল্য সংকট আছে। কারণ করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তি এবং ডলারের দামও বেড়েছে। সব মিলিয়ে নগদ টাকার চাহিদা অনেক বেশি। সে সঙ্গে সুদের হারও বেড়েছে।

এদিকে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) হিসাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ধার দিচ্ছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এএলএস হিসাবে মোট ১৬টি ব্যাংককে ৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। এর মধ্যে রেপোর সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এএলএস ধার দেওয়া হয়েছে। আর ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দেওয়ায় ভালো অবস্থানে থাকা ধারদাতা ব্যাংকগুলো এখন কলমানির পরিবর্তে শর্ট নোটিশে দুই থেকে ১৪ দিন মেয়াদি ধার দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সুদহার ৯ শতাংশের বেশিও হতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সেই হিসাবে আলোচিত সময়ে ব্যাংক খাতে তারল্য কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ধার করছি। একই সঙ্গে ধার দিচ্ছিও। এটাই ব্যবসা। তিনি বলেন, উচ্চদরে ডলার কিনতে হচ্ছে। আমানতের সুদহার কমানোর পর অনেক ব্যাংকের আমানত চলে গেছে। রেমিট্যান্সও কমে এসেছে। আবার সামনে ঈদ। সার্বিকভাবে নগদ টাকার ওপর চাপ পড়েছে। এতে সুদের হারও গত কয়েক মাসের তুলনায় বেড়েছে। আশা করি দ্রুত স্থিতিশীল হয়ে উঠবে মার্কেটটি।

কয়েকজন ট্রেজারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার এলসি দায় পরিশোধ করার জন্য প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঘোষিত দরের চেয়েও বেশি দামে ডলার কিনে এলসি দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত সবকটি ব্যাংকেই নগদ তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে।