শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সমাজকর্মী । ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন মুনসেফ কোর্টের সেরেস্তাদার। তিনি ১৯০৪ সালে নবীনগর হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯০৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ থেকে বিএল পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে যোগ দেন।
মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণে তিনি ‘মুক্তি সংঘ’ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা গঠন করেন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে ত্রাণসহায়তা কর্মকাণ্ডে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এবং ব্যারিস্টার আবদুর রসুলের রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে তিনি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন এবং অবিভক্ত বাংলার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন।
বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন এবং বঙ্গীয় কৃষিঋণ গ্রহীতা ও বঙ্গীয় মহাজনি আইন পাসের বিষয়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভূমিকা রাখেন। ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে তিনি কয়েক দফায় গ্রেপ্তার হন এবং কারাদণ্ড ভোগ করেন।
পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ওই বছর ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ থেকে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে তিনি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনের সব কার্যবিবরণীতে ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ-বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।
১৯৬০ সালে সামরিক শাসন জারির পর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানিদের রোষানলে পড়েন এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাকে গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে ছেলে দিলীপকুমার দত্তসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর ময়নামতী সেনানিবাসে হানাদারদের হাতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত শহীদ হন।
বার্তা কক্ষ , ২ নভেম্বর ২০১৯