আইনগত ও রাজনৈতিক এই দুই কারণে খুব দ্রুত দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জানা গেছে, দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে ১৮ অক্টোবর বিকেলে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছবেন।
নেতাকর্মীরা ব্যাপকহারে জমায়েত হয়ে বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন এটিই স্বাভাবিক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এর আগেও বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে হয়েছে। এ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন. চেয়ারপারসন দুই-চার দিনের মধ্যেই দেশে ফিরে আসবেন। তিনি আরো বলেন, ফিরবেন না বলে অনেকে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ষড়যন্ত্রের কথাও বলেছে। কিন্তু খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্রে নয়, সুষ্ঠু রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর নিয়ে জানা যায়, দুই কারণে খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন।
আইনগত কারণ হলো—খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে চান। আগামী ১৯ অক্টোবর জিয়া ট্রাস্টের দুটি মামলায় শুনানির কথা রয়েছে। ওই দিনই উপস্থিত হয়ে আদালত থেকে তাঁর জামিনের আবেদন করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে।
আর রাজনৈতিক কারণ হলো—প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কথিত অসুস্থতা এবং তাঁর ছুটিতে যাওয়ার ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে বলে মনে করে দলটি। এ কারণে দেশজুড়ে নানা গুঞ্জনও ছড়িয়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপি মনে করে খালেদা জিয়ার এই পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা উচিত।
জানা গেছে, গত ১২ অক্টোবর হঠাৎ করেই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার দলের আইনজীবী ও সিনিয়র নেতারা গুলশান কার্যালয়ে করণীয় নিয়ে বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠকে
আইনজীবী নেতারা মত দেন, যেহেতু চেয়ারপারসনের পায়ের চিকিৎসা প্রায় শেষ পর্যায়ে, ফলে দেশে ফিরে আদালতে হাজির হয়ে তাঁর জামিন নেওয়াই ভালো। তাঁরা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার গতি ও আইনগত বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু চেয়ারপারসন দেশে ফিরবেন কি না এ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাঁরা দলটির স্থায়ী কমিটির ওপর ছেড়ে দেন।
ফলে করণীয় নিয়ে স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠকে বসেন পরের দিন শুক্রবার।
সূত্র মতে, বৈঠকে উপস্থিত নেতারা প্রায় সবাই একবাক্যে মত দেন যে মামলার হাজিরার চেয়েও রাজনৈতিক কারণে চেয়ারপারসনের এই মুহূর্তে দেশে ফেরা উচিত।
তাঁরা বলেন, নির্বাচনের সময় প্রায় কাছাকাছি। তা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জনের মূহূর্তে তাঁর দেশে থাকা উচিত।
সূত্র মতে, বৈঠক থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এ বিষয়ে লন্ডনে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে মতামত জানিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। এরপর শুক্রবার রাতেই লন্ডনে যোগাযোগ করা হলে খালেদা জিয়া জানান, তিনি ফিরে আসবেন।
একটি সূত্রের দাবি, দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ এমন মতামতও দিয়েছিল যে দেশে ফিরলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। কিন্তু খালেদা জিয়া এ ধরনের মতামতকে গুরুত্ব দেননি।
গত বৃহস্পতিবার জামায়াতের ডাকা হরতালে প্রথমে বিএনপির সমর্থন না দেওয়া এবং পরে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রশ্ন করেন, হরতালের আগের দিন বুধবার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের হরতালে সমর্থন না দেওয়া এবং পরের দিন আবার সমর্থন দেওয়ার কারণ কী?
জবাবে উপস্থিত নেতারা জানান, সম্ভবত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিজভী আহমেদের ‘অতি কথনের’ ফলেই এ ভুল বোঝাবুঝি। কারণ জামায়াত প্রশ্নে গত পাঁচ-সাত বছর ধরে বিএনপির অবস্থান হলো কৌশলী। এর আগে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির আদেশ ও হরতাল দুই সময়েই বিএনপি কৌশলগতভাবে নীরব থেকেছে। ফলে বিএনপির অবস্থান নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা ছিল। কিন্তু রিজভীর বক্তব্যে জামায়াতের হরতালে সমর্থন না দেওয়ার ঘোষণায় দলটি ক্ষুব্ধ হয় ও প্রতিবাদ জানায়।
বিষয়টি লন্ডনে খালেদা জিয়াকে জানানো হলে তিনি রিজভীর ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং পরদিনই হরতাল সমর্থন করে বক্তব্য দিতে রিজভী বাধ্য হন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ০০ এএম, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ রোববার
এইউ