Home / জাতীয় / অর্থনীতি / দেশীয় পোশাক খাতে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার অর্ডার বাতিল
garments-1
প্রতীকী ছবি

দেশীয় পোশাক খাতে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার অর্ডার বাতিল

করোনার প্রভাবে বিশ্বের অচল অবস্থায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা নাজুক হয়ে গেছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী প্রায় সব রপ্তানি আদেশ বাতিল করে দিয়েছে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

২৫ মার্চ পর্যন্ত ৭৭১.৫৫ মিলিয়ন পিস অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এর ফলে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের (২.৫৮ বিলিয়ন) বেশি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

দেশীয় মুদ্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে গড়ে এই পরিমাণ মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। এ পরিস্থিতিতে গত দুদিনে ৭টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।

এদিকে সাংগঠনিকভাবে কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আজ নেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের নির্দেশনা অনুযায়ী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বুধবার পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালিসহ অধিকাংশ দেশে ৯৩৬টি কারখানার ৮০০ মিলিয়ন পিস অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২.৫৮ বিলিয়ন ডলার। এ কারখানাগুলোতে ১৯ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রপ্তানি আদেশ বাতিল করেনি। এই ক্রেতাদের পোশাকই এখন উৎপাদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো বাদ দিলে বাকি কোনো কারখানায় এখন আর কাজ নেই। নতুন কোনো রপ্তানি আদেশও নেই। যেকোনো সময় যেকোনো কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে, করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তৈরি হওয়ায় পোশাক খাতের ৭টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত এসব কারখানার মালিকরা নিজেরাই বন্ধ করেছেন। এর আগে আর্থিক সংকটের কারণে গত ১৪ মাসে (২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১০৬টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তৈরি পোশাক খাতের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। সেখানে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানকার ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত করতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে না এলে ক্রয়াদেশ বাতিলের পরিমাণ বাড়বে। তারা বলেন, একদিকে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন করে ক্রয়াদেশও আসছে না। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম এই খাতটি। এই অবস্থা আরও কিছুদিন চলতে থাকলে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন দেয়াও সম্ভব হবে না। তা হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

গত বছরের তুলনায় এ বছরের ১৮ই মার্চ তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪১.৮৪ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এ বছরের ১৯শে মার্চ কমেছে ১২.০২ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এ বছরের ২০শে মার্চ রপ্তানি কমেছে ৪৪.১৫ শতাংশ। বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, আর্থিক সংকটের কারণে কিছু দিনের মধ্যে অন্তত এক হাজার পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে, বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছেন, ভয়াবহ অবস্থা চলছে আমাদের। বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন মহাদেশ থেকে সব ক্রেতারা তাদের ক্রয়াদেশ আপাতত বাতিল বা স্থগিত করছে।
পোশাক খাতের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সব ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের কাছে ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। এখন মূল্য পরিশোধ করতে হবে না, পরে মূল্য পরিশোধ করলেও চলবে। তবুও উৎপাদিত পোশাকগুলো নেয়া হোক- এ রকম অনুরোধ জানানো হয়েছে ই-মেইল বার্তায়।

না হলে এ রকম বৈশ্বিক এই বিপদের মুহূর্তে ভাগ্যহত পোশাক শ্রমিক এবং তাদের পরিবার মানবিক সংকটে পড়বে। রপ্তানি আদেশ বাতিল না করে এই বিপদের মুহূর্তে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ইউরোপের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানির আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী গার্ড মুলারকে চিঠি লিখেছেন ড. রুবানা হক। তার দেশের ব্র্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের এ বিষয়টি বোঝানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। একই চিঠি সংশ্লিষ্ট সব দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পাঠানো হবে। ঢাকায় রাষ্ট্রদূতদের কাছেও এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হবে।

এক প্রতিক্রিয়ায় শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনো শ্রমিকের বেতন, বোনাস নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। বেতনের সময় বেতন পাবেন শ্রমিকরা। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আশ্বাস রয়েছে।

জার্মানের ওই মন্ত্রীর কাছে চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনার মতো বৈশ্বিক সমস্যায় জার্মানির প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের সরকারের কাছে সহযোগিতা পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য এটা অস্তিত্বের সংকট। কারণ, যে কোনো অবস্থায় শ্রমিকদের টিকিয়ে রাখতে হবে। জার্মানির যে ব্র্যান্ড এবং খুচরা ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে তাদের একটা তালিকাও দেয়া হয়েছে মন্ত্রীকে।

ঢাকা ব্যুরো চীফ, ২৬ মার্চ ২০২০