নারায়ণগঞ্জের মায়াবী চেহারার অঙ্কিতা দাস (৫) ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে ১৮ দিন ধরে শুয়ে আছেন। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন আর মাঝেমধ্যে চিৎকার করে উঠেন।
কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, ট্রাক চাপার সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য মনে পড়লেই অঙ্কিতা আঁতকে উঠেন! কর্তব্যরত ডাক্তাররা ভাবতে পারেননি শিশুটি শেষ পর্যন্ত বেঁচে যাবেন। মেডিকেলের ডাক্তার নার্সদের প্রাণান্তকর চেষ্টায় মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন অঙ্কিতা। মুখ ছাড়া সারা শরীর ড্রেসিংএ ঢাকা। ঘাতক ট্রাকের চাপায় মলদ্বার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তাই পেট ছিদ্র করে কৃত্তিম উপায়ে পায়খানা-প্র¯্রাব করানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫টি মেজর অপারেশন হয়েছে। আরো ৫/৬ টি অপারেশন বাকী। অনেক টাকার দরকার। এখনকার অপারেশনগুলো মূলত শরীরের অন্য অংশ থেকে রক্তাক্ত চামড়া কেটে এনে অন্যত্র জোড়া লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন অঙ্কিতার বাবা।
ব্যয়বহুল চিকিৎসা মেটানো শিশুটির বাবার জন্য দুঃসাধ্য। যা কিছু সম্বল সবই ব্যায় করে অঙ্কিতার বাবা অপু দাস এখন নিঃস্ব। আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে অপুর সংসারে আজ কান্না আর হাহাকার।
গত ৪ জুন বরযাত্রী হয়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় গিয়েছিলেন। বিয়ের পরদিন বৌয়ের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে ফেরার প্রস্তুতি চূড়ান্ত। সকালে অঙ্কিতা বাবার হাত ধরে হাঁটছেন। এমন সময় পেছন থেকে হঠাৎ বিকট শব্দে ট্রাকের ধাক্কায় বাবা-মেয়ে ছিঁটকে পড়েন রাস্তায়। মুহূর্তে সব শেষ! বাবা সামান্য আঘাত পেলেও অঙ্কিতার পা থেকে শরীরের সিংহভাগ পিষে একাকার। রক্তে ভেসে গেছে রাজপথ। অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রত ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার মৌটুশির মহানুভবতায় দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়।
অঙ্কিতার বাবা গার্মেন্টসের সামান্য বেতনের চাকুরে। সঙ্গে কোনো সহযোগী লোক বা নেই কোনো টাকা-পয়সাও। একমাত্র সন্তানের রক্তাক্ত দেহ নিয়ে অসহায় বাবা দিশেহারা। তাৎক্ষণিক ৪ ব্যাগ রক্ত ও ওষুধপত্র দরকার। দুর্ঘটনার শিকার বাবা আর ফুটফুটে শিশুর করুণ দৃশ্য উপস্থিত সবাইকে আবেগতাড়িত করে। মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে শুরু থেকে সবকিছুই করেন ডা. মৌটিশি ও তাঁর সতীর্থরা। তিনি নিজে ও সহকর্মীদের কাছ থেকে টাকা তুলে শিশুটির চিকিৎসা ব্যয় মিটাচ্ছেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৮ ব্যাগ রক্ত লেগেছে। ইতোমধ্যে ৫টি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। আরো ৫/৬ টি অপারেশন বাকী। একমাত্র কন্যা নার্সারীর শিক্ষার্থী অঙ্কিতার ঠিকানা এখন মেডিকেলের গ্রিন ওয়ার্ডের বেড নং সি-০৩। বাবার সঙ্গে বরযাত্রী হয়ে গিয়েছিলেন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায়।
সন্তানের চিকিৎসা খরচ মেটাতে না পেরে সামান্য চাকুরীজীবী অপু অর্থের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিচ্ছেন। তার একমাত্র সন্তানকে সুস্থ করতে তিনি তাঁর শরীরের যে কোনো অঙ্গও বিক্রি করতে চান। তিনি সমাজের সামর্থবানদের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে, তাঁর সন্তানের চিকিৎসায় এগিয়ে আসার জন্য।
অঙ্কিতার বাবার ঠিকানা : অপু দাস, পিতা- রামু দাস, প্রযতেœ- রঞ্জিত সাহা, ৩৬/১২ শাহসুজা রোড, হীরা কমপে¬ক্স, নিতাইগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
আপডেট: বাংলাদেশ সময় : ১১ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বুধবার ২৪ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।