Home / জাতীয় / বঙ্গোপসাগরে প্রস্তুত ৪১ বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ
Submarine

বঙ্গোপসাগরে প্রস্তুত ৪১ বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ

৪১টি যুদ্ধজাহাজের দামামা বাজছে এখন কক্সবাজারে। সঙ্গে রয়েছে ৩টি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও ৪টি হেলিকপ্টার। কক্সবাজার থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্রে এখন অবস্থান করছে এসব বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ। উদ্দেশ্য সমুদ্র মহড়া।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সোমবার (২৬ নভেম্বর) কক্সবাজারের ইনানী বীচে প্রধান অতিথি হিসেবে মহড়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

ইয়নস মাল্টিলেটারাল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ (আইএমএমএসএআরইএক্স-২০১৭) নামে এ মহড়া আজ ও আগামীকাল বঙ্গোপসাগরে সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৩২টি দেশের মধ্যে ২৩টি সদস্য ও ৯টি পর্যবেক্ষক দেশসমূহের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং নৌ-প্রধান, ঊর্ধ্বতন নৌ-কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা অংশ নিচ্ছেন।

প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একটি দেশের একার পক্ষে সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না।

বিশেষ করে সুনামি, সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক রাষ্ট্রের পক্ষে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব নয়। যৌথ উদ্যোগ ছাড়া আমরা আমাদের নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো না। এজন্য আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে
ব্লু ইকোনমির প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা সবাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন আছি।

সাগরের সম্পদ উত্তোলন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা আছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রখাতের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, সাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই সমৃদ্ধ এই মেরিটাইম ইকোনমির উন্নতি হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, সমুদ্র নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে, এ কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনী উন্নয়নে ও সক্ষমতা বাড়াতে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সরকারের ব্লু ইকোনমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী সাগরে অতন্দ্র অভিভাবকের মতো কাজ করছে।

আইওএনএস-এর কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মতপার্থক্য দূর করতে মতামতের স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত আদান-প্রদানই একমাত্র পথ। স্থলসীমান্ত দেশগুলোকে আলাদা করে রাখলে সাগরের বন্ধুত্বের বন্ধন আমাদের একসঙ্গে রাখতে পারে। আইওএনএস শুধু ভারত মহাসাগর অঞ্চলের নয়, বরং এশিয়া প্যাসিফিক ও সংলগ্ন অঞ্চলের আশার প্রতীক। এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমান্ডার বিএন ফ্লিট রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফুল হক মহড়ার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে আইওএনএস- এর বর্তমান চেয়ারম্যান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং আইওএনএস-এর প্রতিষ্ঠাতা দেশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের হাতে ইমসারেস্ক-২০১৭ এর স্মারক তুলে দেন নৌবাহিনী প্রধান। এসময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে প্রেসিডেন্ট আইওএনএস রচনা প্রতিযোগিতা ২০১৬-এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এরপর প্রধান অতিথি হেলিকপ্টারে করে এ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধজাহাজসমূহের ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন করেন। পরে তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরতে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য বীচ কার্নিভালের উদ্বোধন করেন।

এদিকে মহড়া প্রসঙ্গে নৌ গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক কমোডর এম সোহায়েল বলেন, মহড়াটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের জলসীমার ২০০ নটিক্যাল মাইল বা ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। পুরো মহড়াটি ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমভাগে, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো জাহাজে আগুন লাগলে তা কিভাবে উদ্ধার করা যায়, সে ব্যাপারে জাহাজগুলো মহড়া দেবে।

দ্বিতীয়ভাগে, ডুবন্ত জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধার করবে পার্শ্ববর্তী জাহাজের নাবিকরা। তৃতীয়ভাগে, নিখোঁজ উড়োজাহাজের সন্ধান করা হবে পানিতে। এ জন্য বিভিন্ন ডামি জাহাজ এবং উড়োজাহাজের পাখা আনা হয়েছে।

মহড়ার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্লু ইকোনমি রক্ষা করাই এই মহড়ার উদ্দেশ্য। তিনি আরো জানান, প্রথমবারের মতো ভারত ও চীনের জাহাজ সমুদ্রে পাশাপাশি থাকছে। একসঙ্গে কোনো সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। এর আগে এমনটা দেখা যায় নি। এটা নৌ-কূটনীতির সফলতা হিসেবে মনে করে বাংলাদেশ। মহড়ায় প্রথমে মিয়ানমারের একটি জাহাজ অংশ নেয়ার কথা থাকলেও পরে সেটা আসেনি। তবে মিয়ানমার নৌবাহিনীর প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।

ইমারেক্স-এর সদস্য রাষ্ট্র বিষয়ে তিনি বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আশেপাশে যেসব দেশ রয়েছে তারাই কেবল এর সদস্য হতে পারবে। এর বাইরে কেউ সদস্য হতে পারবে না। তবে পর্যবেক্ষক হিসেবে যেকোনো দেশ থাকতে পারবে।

নৌবাহিনী জানিয়েছে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর মধ্যকার আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করছে। মহড়ায় যুদ্ধজাহাজসমূহে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ থেকে জরুরি উদ্ধার অভিযান ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, সমুদ্রে জরুরি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা এবং ফ্লিট রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে। আইওএনএস-এর ২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্য।

অন্যদিকে ৯টি পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে রয়েছে চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যকার মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আইওএনএস-এর ১ম সম্মেলন ২০০৮ সালে ভারতে, ২য় সম্মেলন ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ৩য় সম্মেলন ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়, ৪র্থ সম্মেলন ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবং ৫ম সম্মেলন ঢাকা, বাংলাদেশ-এ অনুষ্ঠিত হয়।

২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী আইওএনএস-এর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে সংস্থাটির এই দায়িত্ব পালন করছেন।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫৯ পিএম,২৭ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ

Leave a Reply