দুই শিক্ষকের বদলির প্রতিবাদে আবারো উত্তাল হয়ে উঠেছে চাঁদপুর শহরের আলোচিত আল-আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ। ১৪ মে সোমবার সকালে কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং শ্রেণি কক্ষে ভাংচুর চালায় এবং প্রধান গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এসময় তাদের ছুটিতে থাকা একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র ড. আবদুল গাফফার এর অপসারণ চেয়ে শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওয়ালি উল্লাহ অলি, ওসি মাহাবুবুর রহমান মোল্লা, মনিরুল ইসলামসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক শিক্ষককে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা। এদিকে একই দিনে ভোর ৭টার সময় একাডেমীর পাশে মেথা রোড়স্থ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র ড. আবদুল গাফফারের ভাড়া বাসায় হামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজ শাখার বর্তমান টিসার্স ইনচার্জ অধ্যাপক মুকবুল হোসেন চাঁদপুর প্রতিদিনকে জানায়, কলেজ শাখার সিনিয়র শিক্ষক মো. ফারুকুল ইসলামকে গুনরাজদী শাখায় এবং খান মো. নিয়াজ মোর্শেদকে বাবুরহাট শাখায় বদলি করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এই বিষয়ে এখনো কোনো কাগজ আমরা পাইনি। সকালে সকালে শিক্ষার্থীরা শরীর চর্চা (পিটি) চলাচালে হঠাৎ করেই কিছু শিক্ষার্থী উল্লেখিত দু’শিক্ষকের বদলি বাতিল করার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং শ্লোগান দেয়। পরে আমরা তাদের শান্ত করে শরীর চর্চা শেষে শ্রেণিকক্ষে পাঠাই। এরপরে শিক্ষকরা পাঠদানের জন্য শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের বাঁধা দেয় এবং তাদের প্রিয় দু’জন শিক্ষকের বদলি বাতিল করা না হলে ক্লাস করবে না বলে জানায়। এসময় শিক্ষকলা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থা হয়।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মাঠে নেমে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে শিক্ষার্থীরা সাইকেলের তালা দিয়ে একাডেমীর মূল গেই বন্ধ করে দেয়। তাদের শ্লোগানের ভাষা ছিলো, দুই শিক্ষকের বদলি প্রত্যাহা এবং অধ্যক্ষ’র অপসারণ। পরে বাদ্য হয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেই।
বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমাদের কলেজ শাখার মো. ফারুকুল ইসলাম এবং মো. নিয়াজ মোর্শেদকে বদলি করা হয়েছে বলে আমিও লোকমুখে শুনেছি। লিখিত কোনো অর্ডার বা কাগজ দেখিনি। সকালে শরীর চর্চা (পিটি) শেষে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের ন্যায় শান্তিপূর্ণভাবেই শ্রেণিকক্ষে চলে যায়। হঠাৎ করেই উপরে শ্রেণীকক্ষে হট্টগোল ও ভাংচুরের শব্দ শুনতে পাই। পরে শিক্ষকরা এসে জানায় শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। শেষে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে বিক্ষোভ করে এবং দুই শিক্ষকের বদলি বাতিলের দাবি জানান।
এসময় নাম প্রকাশে অনিশ্চুক বেশ কয়েক শিক্ষক জানায়, নিয়ম-বহির্ভুত এই বদলির সাথে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র হাত রয়েছে। মূলত তার ইন্দনেই এভাবে দু’জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে।
তারা জানান, সিনিয় শিক্ষক নিয়াজ মোর্শেদ স্যার ৯ম ও ১০ শ্রেণির ক্লাস নিতেন। অথচ ওনাকে বদলি করা হয়েছে বাবুরহাট শাখায়, যেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস চলে। আমরা মনে করি এটি অন্যায় করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বর্ডি চাইলে যে কাউকে বদলি করতে পারে, তবে সেটি নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে করা উচিত।
এবিষয়ে ছুটিতে থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. আব্দুল গাফফার এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কারো বদলির বিষয় নির্ভর একাডেমীর পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের উপর। এখানে আমার কি করার আছে। তাছাড়া আমি গত ১মাস ধনে ছুটিতে রয়েছি।
তিনি আরো জানান, আমি সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সকালে আমার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আমার স্ত্রী-সন্তান তো কোনো দোষ করেনি। কিন্তু কেনো তারা এমন করছে আমি বুঝতে পারছি না।
বাড়িতে হামলার বিষয়ে ড. আব্দুল গাফফারের স্ত্রী জানান, সকাল আনুমানিক ৭টার সময় পূর্বদিকের খাটে আমার দুই শিশুপুত্র জাবির আব্দুল্লাহ (দেড় মাস) ও জাহিন আব্দুল্লাহ (৬ বছর) ঘুমিয়ে ছিলো। আমি তাদের পাশে শুয়ে থাকলেও জাগনা ছিলাম। হঠাৎ করেই জানালাই কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনে চমকে উঠি। কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি জানালার কাঁচ ভেঙ্গে বিছানায় পড়ছে। সাথে সাথে আমি অমার ছেলেদের নিয়ে ওই রুম থেকে সরে যাই। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার আজকে যদি আমার এই নিস্পাপ শিশু ছেলেদের কিছু হয়ে যেতো তবে আমরা কি নিয়ে বাঁচতাম।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল মাসে অধ্যক্ষ কতৃক এজন সিনিয়র শিক্ষককে গালাগালের কলরেকর্ড সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়াকে ঘিরে প্রতিষ্ঠানটির ৪টি শাখাই উত্তাল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র প্রতি নানা অনিয়ম ও খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগ দাবি করে। একাডেমীর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে ৪টি শাখার বেশি কিছু শিক্ষককে বিভিন্ন শাখায় বদলি করা হয়।
এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন- চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমী অধ্যেক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম