তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কী প্রক্রিয়ায় কারা নিয়োগ দেবে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শেষমেশ এর উপায় খুঁজে বের করতে তারা প্রজাতন্ত্রের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এর আগে এসব নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে নিষ্পন্ন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু সরকারি কর্মকমিশন তথা পিএসসি জানিয়ে দিয়েছে তাদের প্রয়োজনীয় জনবল নেই; যা দিয়ে এত বড়ো কাজ করা সম্ভব। এছাড়া আইনের সংশোধন ও নতুন কিছু বিধিমালাও প্রয়োজন। তারা এজন্য প্রয়োজনীয় জনবলসহ পৃথক ইউনিট গঠনের একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় সাধারণত সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রধান বা তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ থাকেন।
কোথাও লিখিত ও মৌখিক দুটি পরীক্ষা হয়, আবার কোথাও শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমেই এই নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। পরীক্ষার পূর্ণমানও একেক জায়গায় একেক রকম নির্ধারণ করা হয়। এতে মূলত একধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। যদিও ২০১৯ সাল থেকে এ ব্যাপারে একটি অভিন্ন নীতিমালা কার্যকর রয়েছে। কিন্তু তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয় না। মূলত এই পরিস্থিতি দূর করে একই কর্তৃপক্ষের অধীনে অভিন্ন পদ্ধতিতে সব নিয়োগ দিতে চাইছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ইত্তেফাককে গতকাল রাতে বলেন, তারা নিয়োগ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণসহ নিয়োগ পদ্ধতির একটি রূপরেখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন। জানা গেছে, পিএসসির ওই প্রস্তাব পর্যালোচনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আট সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির আহ্বায়ক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ, সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের যুগ্মসচিব পর্যায়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা) ও যুগ্মসচিব (বিধি-১)। জনপ্রশাসনের উপসচিবকে (বিধি-১) সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পর্যালোচনা কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে বলা হয়েছে, বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০তম পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ। বেষ্টনী (আমব্রেলা) নিয়োগবিধি প্রণয়নের আইনগত ও প্রয়োগিক বিষয়সমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বছরভিত্তিতে একটি সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে পদভিত্তিক একটি পুল গঠনের বিষয়টির প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অফিসের ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম কমিশনের আওতাভুক্ত করা হলে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে কি না তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্যও বলা হয়েছে কমিটিকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিধি-১) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, কোন পদ্ধতিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে পিএসসি একটা প্রস্তাব দিয়েছে। সেটি যাচাই-বছাইয়ের জন্য কমিটি করা হয়েছে। পিএসসি লোকবল নিয়োগ, বিভিন্ন বিধি-বিধান পরিবর্তনসহ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবের অনেক কিছুই স্পষ্ট নয়। কমিটি বসে পিএসসির প্রস্তাবসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করবে। কমিটি সুপারিশ করার পরই বোঝা যাবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে করা হবে না কি এনটিআরসিএর মতো কোনো সংস্থা গঠনের মাধ্যমে করা হবে। কমিটির প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে মোট পদ ১৭ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি। এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদের মধ্যে ২ লাখ ৬ হাজার ৭৬০টি তৃতীয় এবং ৭৯ হাজার ২৬১টি চতুর্থ শ্রেণির পদ রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রশাসনে প্রায় সব সময়ই আড়াই থেকে তিন লাখের মতো তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ খালি থাকে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো এ পদে কর্মী নিয়োগ দেয়। এসব পদে পছন্দের লোক নিয়োগ, অর্থের বিনিময়ে নিয়োগসহ প্রায়ই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ প্রেক্ষাপটে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সামনে আসে।