তুরস্কের ব্যাপারে নিরব থাকবে সরকার

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্ক। সর্বশেষ জামায়াত প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর তা জোরালো হয়েছে।

তবে দেশটির বিরুদ্ধে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকার কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না জানানোর নীতিতে হাঁটছে।

আর এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে যে কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সোমবার থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব মানবিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রোববার বলেন, দুই দিনের ওই শীর্ষ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীর পরিবর্তে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
ঢাকা ও তুরস্কের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নিজামীর ফাঁসির পর তুরস্ক একাধিকবার প্রতিবাদ জানালেও সরকার এ নিয়ে নীরব থাকাকে সমীচীন মনে করছে। এ বিষয়টি নিয়ে সরকার নতুন করে কারও সঙ্গে বিতর্কে জড়াতে চাইছে না।

 

তা ছাড়া ঐতিহাসিকভাবে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীর ওই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি এবং ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত দেভরিম ওজতুর্ককে আঙ্কারায় ডেকে পাঠানোর পর স্পষ্ট হয়—নিজামীর বিষয়ে দেশটি জোরালো অবস্থান নিয়েছে।

 

এমন পরিস্থিতিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ইস্তাম্বুলের সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, ওই শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের মন্ত্রী-পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকলে ভালো হতো।

সে ক্ষেত্রে শীর্ষ সম্মেলনে কিংবা এর ফাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের পক্ষে কেউ অবস্থান নিলে সেখানে বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরা সম্ভব হতো।
এদিকে নিজামীর ফাঁসির পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর এখনো আঙ্কারা থেকে ঢাকায় ফেরেননি তুর্কি রাষ্ট্রদূত দেভরিম ওজতুর্ক।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ১১ মে সন্ধ্যায় ওই রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর এক কূটনৈতিক পত্র পাঠান। তাতে জানান ১২ মে থেকে তিনি ঢাকায় থাকবেন না। ওই পত্রে তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন সেটিও উল্লেখ করা হয়। ওই পত্রটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে আসে ১২ মে সকালে।

সাধারণত কোনো রাষ্ট্রদূত ছুটিতে গেলে কর্মরত দেশের রাষ্ট্রাচার শাখায় অবহিত করার রীতি আছে। সেই অনুযায়ী কূটনীতিকেরা কর্মস্থল থেকে অন্য কোথাও বিশেষ করে তাঁর নিজ দেশে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করার পাশাপাশি কবে ফিরবেন সেটিও জানিয়ে যান। এবারের পত্রে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত কবে ঢাকায় ফিরবেন সেটি উল্লেখ করেননি।

তবে আগে প্রতিবারই তিনি তা উল্লেখ করেছিলেন।
এর আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তুরস্ক। তাঁর বিষয়টি নিয়ে দেন-দরবারের জন্য পরিচয় গোপন করে তুরস্কের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে।

এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির পর দলটির অন্য নেতাদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটি নিয়ে বেশ কৌতূহলী ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। (সূত্র-প্রথম আলো)

নিউজ ডেস্ক :  আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:০০ এএম,  ২৩ মে  ২০১৬, সোমবার

ডিএইচ

Share