Home / বিশেষ সংবাদ / তিন হাসপাতাল ঘুরে এক অন্তঃসত্বা মায়ের রাস্তায় সন্তান প্রসব
তিন হাসপাতাল ঘুরে এক অন্তঃসত্বা মায়ের রাস্তায় সন্তান প্রসব

তিন হাসপাতাল ঘুরে এক অন্তঃসত্বা মায়ের রাস্তায় সন্তান প্রসব

ঢাকার তিন হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে এক অন্ত:সত্বা মা রাস্তায় একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৬ অক্টাবর)।

একটি জাতীয় দৈনিকের তখ্যে বলা হয়,প্রসব ব্যথায় রাস্তায় বসে কাতরাচ্ছিলেন পারভীন। এক পথচারীকে ডেকে অনুরোধ করেন তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে বলে ।

ওই পথচারী তাকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিক্যালে। কিন্তু ওষুধ-পথ্যের ন্যূনতম খরচটুকু দিতে না পারায় পারভীনকে সেখান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর তারা যান মিটফোর্ড হাসপাতালে। একই কারণে সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেয়া হয়।

সেখান থেকে পারভীন যান আজিমপুর ম্যাটারনিটিতে। কিন্তু সঙ্গে টাকা নেই জানার পর সেখানেও ওই একই অবস্থঅ ! শেষে একপর্যায়ে এ হাসপাতালের সামনে রাস্তার ওপরই সন্তান প্রসব করেন হতভাগ্য পারভীন। তবে এত ঝক্কি সহ্য করতে পারেনি শিশুটি । জন্মের পরপরই সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির।

অথচ নিয়ম অনুযায়ী পারভীনের মতো দুস্থ নারীর সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে প্রসবকালীন সেবা পাওয়ার কথা ছিল। তবু তাঁর কাছে প্রসব-পরবর্তী ওষুধ-পথ্যের জন্য চাওয়া হয়েছিল এক হাজার ৫ শ’ টাকা। সেই টাকা দিতে না পারায় মা ও শিশুটিকে এ নির্মমতার মুখোমুখি হতে হলো।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়,প্রসূতি ওই মাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন সোহেল নামের এক ব্যক্তি। তার ভাষ্য মতে, গত সোমবার শেষ রাতের দিকে তিনি গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজারের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় মাজারের পাশে বসে কাঁদছিলেন এক নারী। তিনি তাকে ডেকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আকুতি জানান। নিজের নাম পারভীন এবং বাড়ি যশোরে বলে জানান।

এ সময় তিনি (সোহেল) মানবিক দিক বিবেচনায় সাহায্যের জন্যে এগিয়ে যান। তিনি পারভীনকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান। সেখানে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রথমে স্বাভাবিক প্রসবের কথা বলা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান,সিজারের প্রয়োজন পড়বে। এ সময় হাসপাতালের অন্য স্টাফরা এসে জানান,সিজার করার জন্যে টাকা প্রয়োজন হবে । ওষুধ-পথ্য কিনতে হবে। কিন্তু সঙ্গে টাকা না থাকায় স্টাফরা পারভীনকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।

সে অনুসারে পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানেও কিছু সময় রাখার পর একই ঘটনা ঘটে। ১ হাজার ৫শ’ টাকা খরচ দিতে না পারায় রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে নিরুপায় হয়ে তিনি (সোহেল) ভোরের দিকে ওই হাসপাতাল থেকে পারভীনকে নিয়ে যান আজিমপুর ম্যাটারনিটিতে। শুরুতে সেখানে তাকে ভর্তি করে প্রসবের প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু কিছু সময় পর ওই প্রতিষ্ঠানেও একই সমস্যা দেখা দেয়। ওষুধ-পথ্যের টাকা আছে কি না জানতে চান স্টাফরা। টাকা নেই জানার পর স্টাফরা হাত গুটিয়ে নেন।

তখনো ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন পারভীন। এর মধ্যেই এক স্টাফ পারভীনকে হাত ধরে টানাহেঁচড়া করে বাইরে নিয়ে যান। যেতে না চাইলে গার্ডের সাহায্য নিয়ে প্রায় জোর করে বের করে দেয়া হয় তাকে। এর কিছুক্ষণ পরই ওই ম্যাটারনিটির গেটের সামনে সড়কের ওপর পড়ে যান পারভীন। সেখানেই এক ছেলে সন্তান প্রসব করেন। পথচারী ও আশপাশের ক’জন নারী এ সময় এগিয়ে এসে পারভীনকে শাড়ি পেঁচিয়ে আড়াল করে প্রসবে সাহায্য করেন।

এ ঘটনার পরিপেক্ষিতে (১৯ অক্টোবর) আদালত ৪ সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগীয় সংশ্লিষ্টদের এক রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্ক
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৬:১০ পিএম,২০ অক্টোবর ২০১৭,শুক্রবার
এজি

Leave a Reply