Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে ৫ মাসে ট্রেনে কাটায় প্রাণ গেল ৬ জনের
ট্রেনে

চাঁদপুরে ৫ মাসে ট্রেনে কাটায় প্রাণ গেল ৬ জনের

চাঁদপুরে দীর্ঘ হচ্ছে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যৃর মিছিল। জেলায় গত ৫ মাসের ব্যবধানে ৬ ব্যাক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নিহত ৬ ব্যক্তিই ছিলো পুরুষ। আর এই ৪টি প্রাণহানীর ঘটনার ৩টি ঘটেছে রাতের আঁধারে শহরের নির্জনতম স্থানে ওয়ারল্যাছ এলাকা থেকে দর্জী ঘাট এলাকার রেললাইনে।

সব শেষ ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের দর্জি ঘাট এলাকায় রেললাইনে আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের আঘাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিহত হয়। নিহত ব্যক্তির আনুমানিক বয়স প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ বছর হবে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা। ঘটনার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে চাঁদপুর জিআরপি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস চাঁদপুরের ট্রেনটি ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টায় স্থানীয়া নিহতের মরদেহে রেললাইনের পাশে পড়ে থাকতে দেখেন। ট্রেনের আঘাতে নিহত ব্যক্তির মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে পড়ে এবং তার হাত-পা ভেঙ্গে মারাত্মকভাবে জখম হয়। মাথা থেকে মগজ বের হয়ে মুখমণ্ডল ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তার চেহারা কেউ চিনতে পারেন নি।

স্থানীয়দের ধারণা নিহত ব্যক্তি রেলওয়ের তিন নম্বর পুলটি পার হতে গিয়ে কিংবা রেল পথ ধরে হাঁটতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানার এএসআই হাসান আহমেদ বিষযটি নিশ্চিম করে জানান, তার পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

চাঁদপুর টাইমসসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট রাতে চাঁদপুর শহরের মুন্সীবাড়ি এলাকায় ট্রেনের নিচে পড়ে মাহতাব উদ্দিন খান নামে এক যুবক মৃত্যুরবণ করেন। তবে তার পরিবারের ধারণা সে মনসিক যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেছেন। ২৯ আগস্ট রোববার গণমাধ্যমকে এক বিবৃতিতে নিহত মাহতাব উদ্দিনের পিতা মো. নুর হোসেন খান জানান, গণমাধ্যমকে দেয়া এক বিবৃতিতে জানান, তার ছেলের এই মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। সে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন টেনশনে মানসিক যন্ত্রণায় ছিলেন। যার কারনে সে আত্মহত্যা করেছেন।

২৯ আগস্ট চাঁদপুর শহরের মিশন রোডে ও হাজীগঞ্জ উপজেলার সাতবাড়িয়া নামক স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত পৌনে ১০টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চাঁদপুর বড় স্টেশনে যাওয়ার পরপরই মিশন রোডের পূর্ব দিকে খান বাড়ির সামনে রেললাইনের পাশে এক অজ্ঞাত বৃদ্ধের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে চাঁদপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

একই দিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাতবাড়িয়া নামক স্থানে সাগরিকা ট্রেনের নিচে ৩২ বছর বয়সী এক অজ্ঞাত ব্যক্তি নিহত হয়। এ সবগুলো ঘটনায় রেল পুলিশ অপমৃত্যু মামলা করেছেন।

এছাড়াও গত ৮ জনু শহরের কালিবাড়ি কোর্ট স্টেশনে চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে তার নিচে কাটা পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তার আগে ১৯ মে শহরের ওয়ারলেস মুন্সিবাড়ি রেলক্রসিং এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মেহেদী হাসান রুবেল নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। নিহত রুবেল চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সদস্য এবং পৌর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এদিকে এক অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে নানা অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বে অবহেলা, রেললাইনে দোকানপাট ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ অনুমোদনহীন অবৈধ রেলক্রসিংয়ের কারণে প্রায়ই এই রেলপথে ঘটছে প্রাণহানি ও দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের ৫২ কিলোমিটার দূরত্বে ৩৭টি রেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ ক্রসিং রয়েছে ১৩টি।

এছাড়া ছোট ছোট আরও শতাধিক ক্রসিং রয়েছে। তাছাড়া ওই রেলপথে রেললাইনের খুব কাছ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা। শুধু তাই নয়, রেলের সম্পত্তি দখল করে রেললাইনের কাছে গড়ে উঠেছে শত শত হাট-বাজার, বাসাবাড়ি। এর ফলে রেলগাড়ি যেমন ঝুঁকি নিয়ে চলছে তেমনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলক্রসিং পার হচ্ছে যানবাহন ও মানুষজন। ফলে প্রায়ই প্রাণহানিসহ ঘটছে দুর্ঘটনা।

অথচ রেলওয়ের আইন অনুযায়ী রেলপথের দুই পাশে অন্তত ১০ ফুট এলাকায় চলাচল আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধসহ ওই সীমানার ভেতর কেউ প্রবেশ করলে তাকে গ্রেফতারের বিধান রয়েছে। এমনকি ওই সীমানায় গবাদি পশু প্রবেশ করলে তা বিক্রি করে অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। দেখা যাচ্ছে চাঁদুপুর-লাকসাম রেলপথে ঝুঁকিপূর্ণ রেল ক্রসিংগুলোতে রেল কর্তৃপক্ষ ‘সতর্কীকরণ’ সাইনবোর্ড টানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১