Home / শিল্প-সাহিত্য / টুম্পা : হাসান সাইদুল
টুম্পা : হাসান সাইদুল

টুম্পা : হাসান সাইদুল

গল্প :

নাম আর বয়স বিবেচনা করলে কিছু হলেও বুঝা যায় কে সুখে কিংবা দুঃখে। ধনী কিংবা গরীবের ঘরে হোক। অনেক স্বাদের কাঙ্খিত বস্তুকে আদর করে ভিন্ন নামে মানুষ ডেকে থাকে। সে প্রথাটা মানুষের জীবনেও। গ্রামে হোক আর শহরে-বন্দরে হোক ছেলে বা মেয়েকে বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদি আদর করে নাম রাখে নিজের মত করে আবার সেই নামে ডাকে।
টুম্পাও খুব আদরের মেয়ে! অনেক আদরের। শারীরিক গঠন লাবণ্যময়ী! শুটিং স্পর্টের নায়িকাদের শুটিং শুরুর আগে যে মেকাপ করা হয় টুম্পার ক্ষেত্রে হয়তো সেটার আর দরকার হবে না। তার রূপের তুলনা সে নিজেই। চলন দেখলে অন্য কারো নজর না কারলেও সাহস নিজেই একটু বিস্মিত অনুভব করে।
আগে বলা হয়নি কে কতটুকু সুখে বা দুঃখে থাকে এবং কতকাল পর্যন্ত। বাবা মায়ের দ্বিতীয় কন্যা টুম্পা। বড় মেয়ে সাহেলা অনেক মেধাবী হলেও টুম্পাকে একটু বেশিই আদর করে বাবা মা এমনকি সাহেলাও। ঘরে সকলের কাছে পুতুলের মত থাকতো। সাহস টুম্পার শিশু কিশোর জীবনের কথা যে কোন ভাবে শোনেছিল আগ থেকে। কিন্তু টুম্পার সাথে দেখা করে কথা বলে একটু ভাল সম্পর্ক করে বুঝতে পারে আসলে আদরের টুম্পা কত সুখে আছে। মা বাবা ভাই বোন দাদা দাদি ছেড়ে টুম্পা এখন স্বামীর ঘরে। টুম্পার সাথে কথা বলার সাহস পায়না সাহস। বিবাহিতা মেয়ে। যদি কিছু বলে-কয়ে বসে তাহলে মান সম্মান থাকবে না। কিন্তু কথা না বলেও পারছে না সাহস।
আসলে যার মনে কষ্টর স্রোত প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হয় সেই ঢেউ কখনো কখনো গতি হারিয়ে ডাঙ্গার উপর দিয়েও বইতে থাকে। কথা না বলে আর পারছে না সাহস।
গতকাল ভর বিকেলে টুম্পার স্কুল পড়–য়া মেয়েকে পড়াতে বাসায় আসে। প্রতিদিনের মত আজ টুম্পা, তাসিনকে ব্যাগ হাতে দিয়ে পড়ার ঘরে না পাঠিয়ে নিজেই আসে। তাসিনকে বসিয়ে দিয়ে যাওয়ার পথে সাহস সাহস করে বলে ওঠে- টুম্পা।
টুম্পা পিছন না তাকিয়ে সোজা নিজের ঘরে যায়। মনে রাগ। অনেক রাগে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে টুম্পা। মন খারাপের বিষয়টা টুম্পাকে দেখেই বুঝতে পারে সাহস। পড়ে টুম্পার পেছনে পেছনে টুম্পার ঘরে যায়।
– যদি মনে কিছু না নেন একটা কথা বলতাম
– বলেন?
– আপনার কি কোন সমস্যা?
বলতেই টুম্পা সাহসের কথা কেড়ে নিয়ে বলে ওঠে-
– কি সমস্যা আমার, আমার কোন সমস্যা নাই আপনি পড়াতে যান
– আসলে আমি বুঝতে পারছি কোন ছাপা কষ্ট আপনার মনে বাসা বেঁধেছে। না পাড়ছেন বাসা ভাঙ্গতে আর না পারছেন বাসা থেকে প্রবাহিত দুঃখের দহন সহ্য করতে। একটু বলেন না শুনি। বলুন না।
– শোনে আর কি করবেন? আমার কষ্টের কথা বলা আর না বলা এক কথা।
– তবুও শুনতে চাই। বলেন না। বলতে অনেক সময় লাগবে অন্য এক সময় বলবো নি।
– আজ একটু বলেন কাল একটু পরশু আরেকটু বলবেন। আর হে তাসিনের আব্বু কোথায়?
– ঐ যে চাকর যা করে, তা করতে গেছে?
– মানে?
– সারাক্ষণ তো বোনদের নিয়ে থাকে। বোনদের কোন চাকর লাগে না তাসিনের বাবাই চাকরে কাজ করে দেয়। আমরা মা মেয়ে তো ওর কাছে জ্বালা।
বলেই টুম্পা তার জটছাড়া দুটি চোখ থেকে অশ্র“র প্রবাহ ছাড়তেই লাগলো। সাহস আরো প্রভাবিত হয়ে গেল টুম্পাকে নিয়ে ভাবা তার সমন্ধে জানার আগ্রহটা একটু বেশি থেকে বেশির দিকেই গেল।
আপনি কাঁদবেন না। কাঁদলে সব কিছুর সমাধান হবে না। যেটা করা আপনার কাছে খারাপ লাগে তাকে না করেন যেন না করে হয়ে গেল!
– কান্না ছাড়া যার আগ পিছে কিছু নেই সে না কেঁদে আর কি করবে? যান আপনি তাসিনকে পড়াতে যান। আমি চা করে পাঠাচ্ছি
– আচ্ছা। বলেই সাহস আগে বাড়ায় থমকে আবার পিছনে ফিরেই বলে ওঠে- শুনুন?
– টুম্পাও তাঁকায়
– ইয়ে মানে! ধীরে বলেই পরে দ্রুত স্বরে বলে ওঠে-
প্রতিটি মানুষই কষ্টে থাকে, কেউ বেশি আবার কেউ কম। কষ্ট ছাড়া কেউ নাই। তবে হ্যা কষ্ট একান্ত নিজের সেটার ভাগ কেউ নিতে চায় না। সুখ আলোকিত ঝলমলে। ওটা সবাই দেখে আর সুখ যারই হোক সকলেই ভাগ বসাতে পাড়াপাড়ি করে এমনকি খুনাখুনিও। কষ্টটা লুকিয়ে রাখবেনা তা না হলে এটা আরো বাড়বে। বাড়তে বাড়তে রক্ত মাংসের দেহটা কষ্টের আগ্রাসনে পাথর হয়ে যাবে। সুখ আপনার আর তা আপনাকেই কুড়াতে হবে। তাসিনের আব্বু হয়তো তার বোনদের নিয়ে ব্যস্ত থেকে সুখ পায়। বলেই সাহস দ্রুত বেগে তাসিনের রুমে চলে আসে।
তাসিনকে কিছুক্ষণ পড়িয়ে সাহস চলে যায়।
কয়েকটা দিন এভাবেই চলছে টুম্পার সাথে সাহসের কথকোপথন। কোন মতেই সাহস তার কথার ঠাই পেলতে পারে না টুম্পার মনে। রিক্ততায় নিজেও ভিজে যায় টুম্পার মত একজন লাবন্যময়ী মায়াবীনি মেয়ের মনে ছেপে থাকা কষ্টগুলো না শুনার আগ পর্যন্ত।
ইদানিং সাহসেরও তালাশ করে টুম্পা। তাসিনকে একদিন পড়াতে না আসলে ফোন করে। কেন আসা হয়নি। কোন সমস্যা হল কিনা। কাল আসবে কি না। আরো অনেক কথা।
পরে বাসায় তাসিনকে পড়াতে গেলে কুশল বিনিময় হয় উভয়ের সাথে। আজ তেমনই গত কয়দিন আসা হয়নি। সাহস বাসায় আসতেই টুম্পা হাজির তাসিনের সাথে।
– কি ব্যাপার এতো দিন যে আসলেন না?
– এতো দিন কই মাত্র দুই দিন
– ও ঠিক তো দুই দিনই তো! যেনো কত দিন আসেন নি মনে হচ্ছে।
– মনে তো হবেই।
– মানে।
– না কিছু না। আপনি কেমন আছেন?
টুম্পার মুখে কালো ছায়ার আস্তরণ। কোন জবাব নাই অনেকক্ষণ স্থির থাকার পর বলে ওঠে বিরক্তি স্বরে- আছি!
আছেন তো জানি কিন্তু কেমন?
যেমন থাকার কথা।
আচ্ছা আপনার সমস্যা টা কি বলবেন?
আজ টুম্পার বলার আগ্রহটা বেড়েই গেছে। বিগত কয়দিন না দেখা না হওয়া কথা না বলায় আজকে যেনো নিজের তৃষ্ণা মিটাতে চাইছে মন ভরে। তাই মায়াবী কণ্ঠে বলে ওঠে-
শুনবেন?
– আমি তো সেই কবে থেকে শুনার জন্য বেকুল হয়ে আছি আপনিই তো অপরগাত দেখিয়ে আমাকে অপেক্ষায় রেখেছেন। কোন দিন অপেক্ষায় থাকেন না তো তাই এর কষ্ট বুঝেন না।
– ঠিক বলেছেন। আসলে আমি কোন দিন অপেক্ষা করিনি। অপেক্ষার স্বাদ বিষাদ কেমন জিভে দিয়ে কোন দিন বুঝি নি। কথা গুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো টুম্পা।
– আপনি কাঁদবেন না দয়াকরে। আসলে আমি কারো কান্না সহ্য করতে পারি না।
– তার মানে আপনার সামনে আরো কেউ কেঁদেছে আমার মত?
– না! না সে রকম না! এমনই আমি যে কারই কান্না সহ্য করতে পারি না। এই ধরেন তাসিন কাঁদবে বলে তাকে মারি না এই আর কি?
– তাই বলেন।
– ঠিক আছে আপনি তাসিনকে পড়ান। আমি রুমে যাচ্ছি।
– বলবেন না?
– বলবো আজ কম পড়াবেন এবং পড়িয়ে ছাদে যাবেন। বিকেলে চা খেতে খেতে কথা বলা যাবে। তাসিনকে পড়া দিয়ে আসবেন যেনো আসতে না পারে। আমি তাহলে যাই।
টুম্পার দেওয়া কথা শোনে সাহস যেনো আনন্দে আত্মহারা। এতেই যেনো সাহসের সুখ। এখনো কিছু শোনেনি। হয়তো শুনবে এখানেই মনে মনে হাসছে সাহস। মোটের পর তাসিনকে বলে ওঠে-
– স্যার আপনি এতো খুশি কেনো আজ? কোন সুসংবাদ আছে নাকি।
– তাতো বটে তুমি পড় পরে বলবো সোনামণি।
– জ্বি আচ্ছা। আজ আমার অনেক পড়া। আমাকে দেখিয়ে দিন, বুঝিয়ে দিন।
অল্প সময় পড়িয়ে তাসিনকে বসিয়ে রেখেছে হাতের কাজ দিয়ে। বসে বসে তাসিন সে কাজ করছে। আজ আর কাজের মেয়ে কোন নাস্তা আনেনি। বুঝতে পেরেছে সাহস, ছাদেই আজ নাস্তা হবে। সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে সাহস বাড়ীর ছাঁদে গিয়ে দেখে টুম্পা ছয় মাসের কোলের মেয়েকে নিয়ে আকাশ দেখাচ্ছে। গাছের পাতা দেখাচ্ছে। আর নাদুস-নুদুস গা দোলাচ্ছে। শীতল বাতাস বইছে চারপাশে। গাড়ীর সু সু শব্দে মুখরিত চার পাশ। টুম্পার এলো লম্বা চুল বাতাসে উড়তেই একরাশ নিশ্বাস নেয় সাহস। চুলের ঘ্রাণে মাতুয়ার সে। তবুও ভাল লাগছে। পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে সাহস বলে ওঠে-
– কেমন আছেন?
– ও আসছেন। বসেন আগে নাস্তা খান আমি পানি নিয়ে আসি
– নিচে গিয়ে টুম্পা পানি নিয়ে আসে বোতলে করে। সাহস বিস্কুট খাচ্ছে চায়ে ডুবিয়ে।
– দুপুরে ভাত খাওয়া দাওয়া করছেন? সাহসকে বলে ওঠে টুম্পা
– হ্যা খাইছি।
– কি তরকারি ছিল?
– মেস জীবনে আর কি? ডিম মামলেট আলুর ভর্তা আর ডাল এই তো। আপনি কি দিয়ে খাইলেন?
– ও কথা থাক।
– এই তো সমস্যা। আসলে আপনাকে কোন প্রশ্ন করে সঠিক জবাব পেলাম না। আচ্ছা যা হোক আসলে আমি জানি না কেন আপনাকে বার বার বিরক্ত করছি জীবন নিয়ে প্রশ্ন করে। আমি কিন্তু অনেক ছোট। তবুও ছোটদেরও কিন্তু অনেক আশা থাকে নিরাশা থাকে। জানার আগ্রহ থাকে। ভালবাসা, সেতো থাকেই। ভালবাসা বলতে শুধু যে বিয়ে করা তা নয়। আন্তরিকতা যে কাউকে দেখানো যায় দেখানোর মত মন থাকলে, তাই বলে আপনি মনে কিছু নিবেন না। বা কাউকে কিছু বলবেন না আপনার প্রতি আমার দাবি। আসলে আপনাকে প্রথম দেখেই মনটা খুব ছটফট করছিল কেন জানি। আমার একটা বদ অভ্যাস কাউকে দেখলে মনের অবস্থা কিছু হলেও বুঝতে পারি। এটা আপনি খারাপ মনে করবেন না এমন হতেই পারে।
– না তা ঠিক আছে। সব তো আপনিই বলছেন
– আপনি আমাকে তুমি বলতে পারেন।
– হ্যা পারি তুমি তো সবই বলে গেলে আমি তো কিছু বলিনি যে কোথায় বা কখন কোন কিছু মনে করলাম কি না।
যাই হোক তাসিনের আব্বু এখন কোথায়? বোনদের সাথে বলতেই টুম্পা সাহসের কথা কেড়ে নিয়ে বলে ওঠে, আসলে ও তাসিনের আব্বু নয়!
সাহস যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পরে-
– মানে?
– আমার কোলে যাকে দেখছেন ওর নাম তুলি। তুলির বাবা ও। আর তাসিনের আব্বু ওর বড় ভাই ছিলেন।
– একটু পরিস্কার করে যদি বলতেন?
সাহস তুমি আমাকে দেখে বুঝতে পেরেছো যে আমার মনে কোন কষ্ট লুকিয়ে আছে। কোন ব্যথা যন্ত্রনা কাজ করছে আমার মনে। কিন্তু এটা আর এই বাড়ীর কেউই বুঝে না। তুমি অন্য মানুষ তোমাকে বিশ্বাস করে বলছি।
আমাদের ঘরে আমি সবচেয়ে আদরের ছিলাম। বাবা মায়ের চোখের মণির মত। আমার বাবা ছিলেন পুরান ঢাকার বিত্তশালী মহাজন। চুকরা মানে তুলির বাবার বড় ভাই রাতুলের সাথে আমাকে স্বামীর মর্ম বুঝের আগেই বিয়ে দেয় বাবা। আমাদের টাকা পয়সার অভাব ছিল না কেন যে বাবা আমার জীবন নিয়ে এমন করলো বুঝতে পারলাম।
সাহস মন দিয়ে কথা শুনছে আর চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
রাতুলেরাও ছিল অনেক বিত্তশালী বাড়ী দেখে অবশ্য বুঝতে পারছো।
বিত্তশালী রাতুলেরা তিন ভাই বড় ভাই একটা জালেম। বাবার সব সম্পদ লুট করতে চেয়েছিল। রাতুলকে আমি সাহস দিয়েছিলাম। তখন তাসিন জন্ম নিয়েছিল মাত্র। রাতুল প্রতিবাদ করলো তার বড় ভাই শিকুর কাজে। তিন ভাই সমান সমান সম্পত্তি পাবে পৈত্রিকসূত্র এটাই বলে। একটু প্রতিবাদী বলে ওকে ষড়যন্ত্র করে মারতে পারতো কিন্তু তাকে যে চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিবে এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে টুম্পা তুলিকে জড়িয়ে ধরে।
সাহস আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে আর দির্ঘ্যশ্বাস পেলে। পরক্ষনে চায়ে চুমুক দেয়। বিনয় স্বরে বলে ওঠে-
– পৃথিবীতে আজও এজিদ সাদ্দান আছে বিশ্বাস হতো কিন্তু বাস্তবে তা দেখবো ভাবি নি। আসলে কষ্টের মানুষ টুম্পা আপনি।
টুম্পা সাহসের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে ওঠে- এক দিকে স্বামী হারা যন্ত্রনা অন্য দিকে শিকুর কথা অসহ্য হয়ে পরি নি। ভাবলাম বাপের বাড়ী চলে যাবো। পড়ে ভাবলাম আমরা ঢাকাইয়া মানুষ। বুঝে ছাড়বো। তাসিন পৈত্রিক সূত্রে অবশ্যই বাপের সম্পত্তি পাবে। তাই আমিও সম্পত্তির ভাগ চাইলাম। আমি মেয়ে মানুষ কি করি একলা আমাকেও শিকু যেনো মুরগী ভেবে শিয়ালের মত মারতে চেয়েছিল। জীবন মানে কি তার আশাই ছেড়ে দিয়েছি এক বার ভাবলাম আত্মহত্যাই করবো কিন্তু তাসিনের কথা ভাবলে বেজাই বিলির মতও বাঁচতে ইচ্ছে করছিল।
আপনার বাবা মা এ ব্যপারে কিছু জানতো না। তাসিনের বাবা মারা গেছে তা জানতো কিন্তু আমাকে শ্বশুড় বাড়ী ছাড়তে বারন করছিল।
উকিল মারফত শিকু ও তুলির বাবা জানতে পারছিল মামুনি সমান ভাগ পাবে রাতুলের অংশীদার হিসেবে। পরে সাদেক আমাকে প্রস্তাব দেয় বাকী জীবন যেন তার সাথে কাটাই জীবন সঙ্গী হয়ে। সে কি ভেবে প্রস্তাব দিয়েছিল জানি না। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম, এই বয়সে কতদিন একা থাকবো। জীবন সঙ্গী হিসেবে কাউকে তো বেঁচে নিয়ে হবে। সাদেককে বিয়ে করলে মন্দ কি হবে? ও তো রাহাতের ছোট ভাই। রাহাতের স্মৃতি হয়তো সাদেকের মাঝে খুঁজে পাবো। সাদেকের মাঝে আমার স্বামীর স্বাদ চুপসে নিবো। তাসিনও চাচ্চুকে বাবা হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হবে না। আমার ভাবনায় কোন খাত ছিল না। খাত ছিল হয়তো এই বাড়ীর মানুষের। শিকু এটাকে মেনে না নিয়ে আমাকে আরো গাল-মন্দ করতে থাকে। সাদেকের বোনরা দজ্জালের মত নির্যাতন করতে থাকে। সাদেক আমাকে বুঝাতো। মাঝে মাঝে ভালবাসতো আবার মাঝে মাঝে বোনদের পাল্লায় পড়তো। মূলত আমাদের পাওনা সম্পত্তির প্রতি বেশির ভাগই লোভ ছিল সাদেকের। তা না হলে আমি তো তার কাছে ব্যাংক ভর্তি টাকা, দামি বাড়ী গাড়ী কাপড় চাইনি। প্রতিবেলা মাছ মাংস চাইনি। সহজ ভাবে একটি সাধারন জীবন নিয়ে বাঁচবো বলে তাকে সঙ্গী করে নিয়েছি। কিন্তু আমার প্রতি তাসিনের প্রতি যতটুক খেল তার চেয়ে বেশি বোনদের প্রতি ভাইয়ের প্রতি। এই জীবনে কতটুক ভাল থাকি বলো তুমি। মন ভরে আগে আঁড়ালে কাঁদতাম। সে দিন তুমি দেখে পেলেছো তাই আজ মন ভরে তোমার সামনে কাঁদছি আর মনের কষ্টগুলো বলছি।
সাহস অনুতপ্ত। নির্বাক জ্যন্ত একটি জীব অপলক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাঁকাবে নাকি টুম্পার মায়াবী চোখের দিকে তাঁকিয়ে থাকবে বোধ করতে পারছে না। সময় বয়সী হলে হয়তো অবস্থাটা অন্য দিকে মোড় দিতো। তবুও নিজেকে সাহসী ভেবে টুম্পার মাথায় হাত বুলায়।
– কষ্টটা একান্তই নিজের ওটার স্থান বুকের ঠিক মধ্য খানে। মানুষ কষ্টকে দেখতে পেলেও না দেখার ভান ধরে দূরে সরে যায়। সুখ দেখলে ওটাকে পাওয়ার জন্য হানাহানি পর্যন্ত করে থাকে। আপনি কাঁদবেন না। ভাগ্য আপনারই সঙ্গ দিবে একদিন। একটা কথা বলি যদি কিছু বলতেই মুখের কথা কেড়ে নিয়ে টুম্পা বলে ওঠে
– কিছু মনে করবো না। বলো তুমি কি বলতে চায়।
– আসলে মানুষের জীবনে বন্ধু বয়স ভেদে হয়না। স্থান কাল ভেদে হয়না। বন্ধু, ভালবাসা ও আন্তরিকতা হল মনের ব্যপার। আমি আপনার পাশে থাকতে চাই। একান্তই পাশে।
টুম্পা মুচকি হাসে। আমার পাশে থেকে কি করবা তুমি? আমার কাছে তো কিছু পাবে না।
– মানুষ কি শুধু কিছু পাওয়ার আশাই পাশে থাকে? দিতে পারে না?
– কি দিবে তুমি আমায়? কি দিতে পারবে?
– আপনার দুঃখের কথা কষ্টের কথা শুনে শান্তনা স্বরূপ কিছু বলতে তো পারবো।
– যারা আমার একান্ত আপন জন। যাদের নিয়ে আমার সংসার আমার জীবন। তারাই তো আমাকে শান্তনা দিতে আসে না। পারছে ন যে মেরেই পেলে। যে মানুষ প্রতিটি নারীর শ্রেষ্ট্র বন্ধু যার কাছে সব বলা যায় করা যায়। সে তো স্বামী! সেই তো আমাকে বুঝতে পারছে না। আমাকে আমার মত আমার মনের মত থাকতে দেয় না। মন কি চায়, জানতে চায় না। মেয়েরা সম্পত্তির মালিক হয়ে কাকে দিবে কি করবে সম্পত্তি? বিয়ের পর তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বামীর সাথে থাকে। কোন মেয়েই তো চায় না যে স্বামী ছাড়া বাঁচতে। কিন্তু আমার স্বামী আমার ঠাঁই আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
টুম্পার কথা শুনে সাহস দির্ঘ্যশ্বাস ফেলে। ধীরে ধীরে স্থির হয়। মনে মনে বকতে থাকে। আসলে শুধু পরকীয়া নয়; বিয়ের পর প্রেমের টানে নয় পারিবারিক বা অনন্য কোলাহল কিংবা প্রতিহিংসার কারনে কিন্তু সমাজ সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হয়। যেখান থেকে মারামারি হানাহানি বিবাহ বিচ্ছেদ খুনাখুনিও। টুম্পা ভাবতে পারছে না কি করবে। টুম্পার মনের খবর কিছুটাও হলেও জানতে পেরে টুম্পাকে জানান দেয়- সঙ্গী সাথী, দুঃখের সাথী পাশে থাকার মানুষ মনের বিনিময়ে হয়। প্রতিটা মানুষ প্রথমে অচেনাই থাকে। ধীরে ধীরে চেনা হয় তার সম্পর্কে জানা হয়। তার পর মন বিনিময়। এভাবেই একটা সু-সম্পর্ক হয়। এর অর্থ এই নয় যে, বিয়ে করতেই হবে। বিয়ে করলে সব কিছুর সমাধান হয়ে যায় না। দৈহিক মেলামেশা প্রেমের মাধ্যমে নয় আমাদের দেশের টাকার বিনিময়ে হচ্ছে সচারাচর। বয়স সৌন্দর্য বা টাকা ভালাবাসার প্রতীক নয়, মন। একমাত্র মন থাকলে মরনের পরও বন্ধুকে চেনা যায়। আমি আপনার পাশে থাকতে চাই। সে যেভাবে আপনি চান।
সাহসের কথা শুনে টুম্পা তড়িঘড়ি করে আশপাশ তাকায় কেউ দেখলো বা শুনলো কি না সাহসের কথা। পরে সাহসের চোখের দিকে তাকায় মায়াবী দৃষ্টিতে।
মানুষ তার নিজস্ব গতিতে সামনে এগুতে চায় কিন্তু মাঝে মাঝে থেমেও যায়। থেমে যাওয়াটা যখন নিজ থেকে হয় তখন কিছুই করার থাকে না নিজ কর্ম দোষ ছাড়া। কিন্তু কেউ যদি চলতি পথের মানুষকে থামিয়ে দেয় তখনই জীবনে নেমে আসে দুর্দশা। সে থেকেই অপসংস্কৃতি কিংবা সংঘাত সংগ্রামের আর্বিভাব হয়। নিরুপায় টুম্পা কাউকে যেন খুঁজছিল সাহসের আশ্বাস পেয়ে দির্ঘ্যশ্বাস ফেলল।
আকস্মিত হয়ে গেল সাহস, থুতবোত খেয়ে বলে ওঠে- কি ব্যাপার আমার কথায় আপনি মনে কিছু নিলেন নাকি?
বিনয়ের স্বরে টুম্পা বলে ওঠে মুচকি হেসে- না
তবে দির্ঘ্য নিশ্বাস ফেললেন যে?
আসলে আমি মনে কিছু নিয়েছে তবে…
তবে কি বলেন?
তবে নতুন একজন মানুষকে যে আমার দুঃখ দেখে পাশে থাকতে চেয়েছে। আমার অতীত বর্তমান জেনেও।
তাতে কি?
না মানে আমি খুবই ভাগ্যবান।
কেন?
একজন নব মানুষ মানে জোওয়ান যুবক কিংবা সুদর্শন যেকোন ছেলের প্রেমে যেকোন বা যেকোন বয়সের মেয়ে পড়তে পারে। যা সহজ কথা অনেক মেয়েরা তা মেনে নিতে পারে না যা কঠিন সত্য।
– তো?
– বয়স্ক, দর্শন হলেও বিবাহিতা বা বহুপ্রেমে মগ্ন থাকা মেয়ের প্রেমে ছেলেরা বেশি একটা পড়ে না। কারণ তাদের ধারনা ওরা পুরোনো হয়ে গেছে!
আমি বিগত দিন খুবই কষ্টে ছিলাম। কষ্টের পরে সুখ আসে এসেই যায়। আল্লাহ আমাকে কষ্টে রেখেছেন হয়তো আপনার মত একজনকে মিলেয়ে দেয়ার জন্য। আমি শুকরিয়া জানাচ্ছি আল্লাহর কাছে।
সাহস দির্ঘ্যশ্বাস পেলে আকাশের দিকে তাকায়
কি ব্যাপার আপনি দির্ঘ্যশ্বাস ফেললেন যে? মনে কিছু নিলেন নাকি?
হ্যা নিয়েছি?
কি?
অনেক কিছু কিন্তু বলা যাবে না।
তাহলে আপনি আমার কিসের বন্ধু
আরে সব কিছু সিরিয়াসলি ভাবেন কেন?
আপনি যে আমার সিরিয়াস বন্ধু!
ও তাই?
তাই, তাই তাই এবং তাই বলেই টুম্পা সাহসের দিকে হাত বাড়ায়? একটু আশ পাশ তাকিয়ে সাহস টুম্পার নরম হাতে হাত মিলায়
কথা দিন সব সময় আমার সুখ দুঃখের ভাগীদার হবেন?
আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন সর্বদায় পাশে থাকবো পরিবেশটা শুধু নিজের দিকে রাখবেন?
আমারা এমন ভাবে থাকবো যেন কেউ আমাদের সন্দেহ করতে না পারে এমনকি সাদেক ভাইও না।
চলেন তাহলে নিচে যাই।
তুলিকে সাহস কোলে নেয় এক হাতে আরেক হাত টুম্পার কাঁধে রেখে নিচে চলে যায় উভয়….

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015

নিয়মিত আপনার ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : https://www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes