জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যা যা করণীয় সরকার তাই-ই করবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যা যা করণীয়, বাংলাদেশ সরকার তাই-ই করবে। সরকারের ‘দৃঢ় প্রতিজ্ঞা’র কথা পুর্নব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘সবাইকে বলেছি, এসব যেন আর না ঘটে।’

তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কোনোভাবেই আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেব না, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

বুধবার (২২ জুন) সকালে দশম জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
‘সৌদি আরব জঙ্গি-সন্ত্রাস দূর করার জন্য যে ইসলামী জোট করেছে সেই জোটে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। প্রায় ৪০টি দেশ এতে যুক্ত হওয়ার ফলে আজকে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগে বাংলাদেশও আছে’, বলেন শেখ হাসিনা।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরপর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওআইসিতে আমি যতবারই গিয়েছি এই প্রসঙ্গটা তুলেছি এবং আবেদনও করেছি। মহাসচিবের সাথে দেখা হয়েছে, আমি এ কথাটা বলেছি। তবে সৌদি আরব একটা উদ্যোগ নিয়েছে। আপনারা জানেন জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দূর করার জন্য একটি ইসলামী জোট করেছে। সেই জোটে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে।’

ওই জোটের ফলে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে সৌদি বাদশাহকে জানিয়েছি এবং অন্যান্য মুসলিম দেশকেও জানিয়েছি, এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে আজকে যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে, এসব যেন না ঘটে।’

‘ইসলাম শাস্তির ধর্ম। আমরা যেন এই শান্তির ধর্মের সম্মান উচ্চতায় নিতে পারি, সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শহীদুজ্জামান সরকারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী গত ৩-৭ জুন সৌদি আরব সরকারি সফরের প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ সফরটি বাংলাদেশ-সৌদি আরব সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এই সফরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা বিষয়ে সম্পর্কোন্নয়নে এক নতুন ও পূর্ণাঙ্গ ভিত্তি তৈরি হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের এই নতুন সম্পর্কের ফলে মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বলতর হবে বলে আশা করা যায়। এ সফরের মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বে আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্ব পুনঃস্বীকৃত হয়েছে।’

সৌদি আরব বিশেষ করে মাইন ক্লিয়ারিং, প্রশিক্ষণ ও সামরিক স্থাপনা নির্মাণ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সফরের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব গতি বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সরকারি দলের সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিনের (নাছিম) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার চারপাশে নদীসমূহের মাধ্যমে বৃত্তাকার নৌপথ ও সড়ক চালু করা হয়েছে। নৌপথটিকে মালামালবাহী কার্গো জাহাজ নিয়মিত চলাচলসহ সীমিত আকারে যাত্রীবাহী ওয়াটার বাস চলাচল করছে।’

বৃত্তাকার নৌপথ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর প্রয়োজনীয় খনন, ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সম্পাদন করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গৃহীত প্রকল্পটি ১ম ও ২য় পর্যায়ে অর্থাৎ দুই দফায় বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর চারপাশের নদীসমূহের সমন্বয়ে বৃত্তাকার নৌপথ চালু করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক পথ চালু করার জন্য আব্দুল্লাহপুর থেকে শুরু হয়ে ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-বাবুবাজার-সদরঘাট-ফতুল্লা-চাষাড়া-সাইনবোর্ড-সিমরাইল-ডেমরা-পূর্বাচল সড়ক তেরমুখ হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪ লেন বিশিষ্ট ও ৫ মিটার বিভাজকসহ একটি বৃত্তাকার-সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডেমরা থেকে তেরমুখ পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার অংশে বর্তমানে কোনো সড়ক বা বাঁধ না থাকায় ইস্টার্ন বাইপাস প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে ওই অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর সড়ক ও জনপথ ৪ লেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণ করা হবে। এই ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ঢাকা সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম ইস্টার্ন বাইপাস বহুমুখী প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্পটিকে ফেজ-১ আখ্যায়িত করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে লিড এজেন্সি করে সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে পিডিপিপি প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশিষ্ট ৬৭ কিলোমিটার অংশকে ঢাকা-সার্কুলার রোড, ফেজ-২ হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পের লিড মন্ত্রণালয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।’

তিনি বলেন, ‘এই ৬৭ কিলোমিটার মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের অংশের বেড়িবাঁধ। বর্তমানে তেরমুখ হতে আবদুল্লাহপুর অংশে একলেন বিশিষ্ট সড়ক এবং আবদুল্লাহপুর হতে সোয়ারীঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের অংশে সড়ক ও জনপথের ২ লেন বিশিষ্ট সড়ক বিদ্যমান।’

এ ছাড়া পুরাতন সড়কের অংশ হিসেবে পোস্তগালা হতে চাষাড়া ২ লেন, চাষাড়া হতে সাইনবোর্ড ৮ কিলোমিটারে ৪ লেন, সাইনবোর্ড হতে শিমরাইল ২ কিলোমিটার সওজ এর ৮ লেন (নির্মাণাধীন) সড়ক বিদ্যমান এবং শিমরাইল হতে ডেমরা পর্যন্ত ২ লেন সড়ক বিদ্যমান।

বৃত্তাকার সড়কের মূল কম্পোনেন্ট হলো, বিদ্যমান এই সড়কগুলোকে ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্য আলাদা ২ লেন সম্পন্ন সার্ভিস রোডসহ ৪ লেন সড়কে উন্নীত করা এবং সড়কের মাঝে ৫ মিটার বিশিষ্ট বিভাজকের সংস্থান রাখা এবং গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল নিশ্চিত করা। একই সাথে সড়ক নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপারের লক্ষ্যে আন্ডারপাস ও ফুট ওভারপাস নির্মাণ করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।(বাংলামেইল)

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ৩:৩২ পিএম,২২ জুন ২০১৬,বুধবার

 

Share