চাঁদপুর

ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করতে চাঁদপুর কলেজ শিক্ষকের ফাঁদ

চাঁদপুর সরকারি কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা, ফোনে কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব, ছাত্রীদের সাথে অন্যের ছবি সংযুক্ত করে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেলিং করা, নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে কফি খাওয়ানোর নাম করে বিয়ার খাইয়ে মাতাল করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মুসলিম সরদার মিশু। তিনি ওই কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

এ কলেজে তার পোস্টিং না থাকলেও তিনি অ্যাটাচমেন্টে রয়েছেন। একই বিভাগের বেশ ক’জন ছাত্রী চলতি মাসের ১১ ফেব্রুয়ারি কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ছাত্রীরা অভিযোগে জানান, শিক্ষক মুসলিম সরদার মিশু তাদের একজনকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তোলা কিছু ছবি দেখিয়ে ব্লাকমেলিং করেন। এমনকি এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন। তিনি ফোন করে ওই ছাত্রীকে তার বাসায় খাতা দেখার জন্য আসতে বলেন। খাতা দেখতে গেলে তার খালি বাসায় এ শিক্ষক কফির নাম করে তাকে বিয়ার খাইয়ে দেন। তাছাড়া নানা ধরনের অশ্লীল কথা বলেন । তিনি ফোনে ও ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের ম্যাসেজ পাঠিয়ে থাকেন। বর্তমানে এ ছাত্রী চরম আতংকে আছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।

একই বিভাগের আরেক ছাত্রীর অভিযোগ উক্ত শিক্ষক চলতি সনের ২৩ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় শিক্ষক মুসলিম সরদার মিশু জরুরি ভিত্তিতে তাকে তার বাসায় আসার জন্য বলেন। ওই ছাত্রীর অন্য দু’ বান্ধবীও তার বাসায় আছেন বলে জানান।

তার বাসায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি বলেন ‘তোমার কিছু আপত্তিকর ছবি আছে, যেগুলি বিভাগীয় প্রধান স্যার দেখেছেন। তিনি তোমার ফরম পূরণ করবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে জরুরি কথা আছে।’

ওই ছাত্রী সরল বিশ্বাসে এ শিক্ষকের বাসায় গেলে তাৎক্ষণিক দরজা বন্ধ করে দেন এবং তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন। প্রয়োজনে টাকা দেয়ারও প্রস্তাব করেন। এক পর্যায়ে ছাত্রীটি সেখান থেকে বের হয়ে যাবার চেষ্টা করলে তিনি তাকে জোর করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন।

ছাত্রীটির ডাক চিৎকারে পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা এসে তাকে উদ্ধার করেন। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তার পেছনে পাড়ার ছেলেদের লেলিয়ে দেবেন এবং প্রাণনাশেরও হুমকি দেন। এ ছাত্রীও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ এনেছেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে শিক্ষক মুসলিম সরদার মিশু ফেসবুক ও মোবাইল ফোনসহ নানাভাবে তাকে উত্ত্যক্ত করছেন বলে জানান।

অভিযোগকারী আরেক ছাত্রী জানান, শিক্ষক মুসলিম সরদার মিশু কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের তোলা ছবি দেখিয়ে তা’ দিয়ে খারাপ ছবি তৈরি করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবেন বলে বস্নাক মেলিং করেন। এ ছাত্রীকেও সু-কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে তার বাসায় নিয়ে কফি খাওয়ানোর নামে বিয়ার খাওয়ান। তাকেও নানাভাবে কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজ পাঠানো হয় বলে ছাত্রীটি অভিযোগ করেন।

কলেজ অধ্যক্ষ প্রাপ্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিছুটা কালক্ষেপণ করলেও শেষ পর্যন্ত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি ) অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মিসেস আয়শা আক্তারকে প্রধান করে এবং সহযোগী অধ্যাপক সুশীল কুমার নাহা ও শেখ মো. খলিলুর রহমানকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

এদিকে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে ছাত্রীদের প্ররোচিত করেছেন তার সহকর্মী শিক্ষক মেহেদী হাসান এমন ধারণায় ওই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন মুসলিম সরদার মিশু।

এ ঘটনায় মেহেদী হাসান জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) চাঁদপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন । যার নং ৯৯৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

কলেজ অধ্যক্ষ ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়ালি উল্লাহ অলি শিক্ষক কর্তৃক আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং এটি তদন্ত করছেন বলে জানান।

অভিযোগের ব্যাপারে শিক্ষক মুসলিম সরদার মিশু বলেন, ‘ বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন। তাই আমি কিছু বলতে চাই না। কলেজ ছাত্রলীগ নেতারাসহ অধ্যক্ষের সাথে বসেছেন। তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বাহার বলেন, ‘ছাত্রীরা সচরাচর কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে চায় না। তারপরও যদি এ ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে ওই শিক্ষকের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’ (যুগান্তর)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫: ০০ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার
এজি/ডিএইচ

Share