ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক পদে সম্ভাবনায় যারা

অন্তত দুই প্রজন্ম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এমন পরিবারের সন্তানদের এবং বিভিন্ন সময়ে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় মেধাবী ছাত্রদের হাতে এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে পারিবারিক ঐতিহ্য ও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকাকেই এবার বিবেচনায় নিয়েছেন দলের সভাপতি। সেইসঙ্গে মেধাবী ও সুদর্শন শিক্ষার্থীদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে চান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট সূত্রগুলো এই দাবি করছেন।

সূত্রগুলোর দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছয়জন শিক্ষার্থী শেখ হাসিনার সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঘুরেফিরে আলোচনায় আছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, এদের মধ্য থেকেই নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে। সম্ভাব্য এই নেতারা হলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র আদিত্য নন্দী। তিনি বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। চট্টগ্রামের হাটাহাজারির সন্তান আদিত্যের ব্যাপারে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ ইনান। ঝালকাঠির সন্তান ইনান বর্তমান কমিটির উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অবস্থান ভালো বলে তথ্য পেয়েছে দলের হাই-কমান্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী চৈতালী হালদার। বর্তমানে সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। সাংস্কৃতিকমনা এই নেতা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় বলে জানেন দলের শীর্ষ নেতারা। চাঁদপুরের সন্তান মাজহার শামীমও রয়েছেন আলোচনায়। স্যোসিওলজি বিভাগের এই শিক্ষার্থী মিছিল-মিটিং নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকায় তিনিও আলোচনায় আছেন।

পঞ্চগড়ের ছেলে হোসেইন সাদ্দামও রয়েছেন আলোচনায়। এফ রহমান হলের ছাত্র আইন বিভাগের সাদ্দাম বর্তমান কমিটির আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনও শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিতে আছেন। কুড়িগ্রামের সন্তান শোভন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সদস্য। এদের মধ্য থেকেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানাগেছে।

শেখ হাসিনার পছন্দের তালিকায় থেকে নেতা হওয়াকে এবার বেশি গৌরবের মনে করছেন ছাত্রলীগের পদ-প্রত্যাশী নেতারা। পদ পেতে চান এমন প্রায় ডজনখানেক নেতার সঙ্গে আলাপ করে তাদের মনের কথা জানা গেছে। তারা বলছেন, শেখ হাসিনার পছন্দে নেতা হওয়া গৌরবের বিষয়। নেত্রীর পছন্দে যারাই নেতা হয়ে আসবেন, তাদের ব্যাপারে কারও কোনও আপত্তি থাকবে না।

শুক্রবার (১১ মে) ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখভালের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ করেছে ছাত্রলীগ। বেলা আড়াইটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দ্বি-বার্ষিক এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরের দিন শনিবার (১২ মে) একইস্থানে দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে নতুন নেতৃত্ব ছাত্রলীগের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ওইদিনই দেওয়া হবে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় শাখা ও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগের সম্মেলন। শেখ হাসিনার নির্দেশে এই কমিটিগুলোও কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, সর্বশেষ দুটি সম্মেলনে ভোটে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে কলুষিত করা হয়েছে মনে করে এবার নেতা নির্বাচনে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ফলে সংগঠনের নতুন নেতা নির্বাচনের জন্যে এবার ভোট হচ্ছে না। ভোটে কাউন্সিলরদের প্রভাবিত করে অযোগ্য নেতাও অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এসেছে। ফলশ্রুতিতে দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের বদলে অদক্ষ, অযোগ্য, ভিন্ন চিন্তা-চেতনা এবং ভিন্ন আদর্শের ছেলেরা ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল এবার ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই রবিবার দ্বিতীয় অধিবেশন শেষ করে প্রস্তাবিত নামগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নতুন নেতা নির্বাচন করবেন।

ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের সম্মেলনে আমাদের সহযোগিতা থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আর নেত্রী (শেখ হাসিনা) যেহেতু সাংগঠনিক দায়িত্বে আছেন, তিনি যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন।’ বৃহস্পতিবার (১০ মে) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।

Share